মঙ্গলবার, ৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

মোবাইল ফোনে ছিল তিন খুনের রহস্য

মির্জা মেহেদী তমাল

মোবাইল ফোনে ছিল তিন খুনের রহস্য

২০১৭ সালের ২ আগস্ট। ভোরে পটুয়াখালীর গলাচিপার ছৈলাবুনিয়া গ্রামের একটি নির্জন ঘরে দেলোয়ার মোল্লা, তার স্ত্রী পারভিন বেগম এবং পালিত কন্যা কাজলী আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়। কুপিয়ে ও জবাই করে তাদের হত্যা করা হয়। কাজলীর দেহ থেকে মাথা ছিল বিচ্ছিন্ন। মাথাটি বেশ দূরে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ওই বাসা থেকে শুধু নকিয়া-১২৮০ মডেলের একটি মোবাইল ফোন খোয়া যায়। এ ঘটনায় নিহত দেলোয়ার মোল্লার বড় ভাই ইদ্রিস মোল্লা গলাচিপা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। কিছুদিন পর দেলোয়ারের বোন পিয়ারা বেগম ২২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করে গলাচিপা আদালতে আরেকটি হত্যা মামলা করেন। পরে আদালত দুটি মামলা একত্রে তদন্ত করার আদেশ দেন। মামলার তদন্তে পুলিশ কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারে না। খুনি কে বা কারা তাও শনাক্ত করতে পারছিল না। ঘটনার কিছুদিন পর পুলিশের তৎপরতা হঠাৎ বেড়ে যায়। পুলিশ কয়েকদিন তৎপর হলেও ফলাফল শূন্য। এই ট্রিপল মার্ডার নিয়ে আর কোনো আলোচনাই থাকে না ওই গ্রামে।

ঘটনার তিন বছর পর ২০২০ সালের ৯ অক্টোবর পটুয়াখালী পুলিশ ঢাকার পল্লবী থানার বাউনিয়া এলাকা থেকে মোহাম্মদ আবু রায়হান নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। পুলিশ তার কাছ থেকে কাজলী আক্তারের খোয়া যাওয়া নকিয়া-১২৮০ মডেলের ফোনটি উদ্ধার করা হয়। মামলার তদন্ত নাটকীয় মোড় নেয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রায়হান জানান, শহীদ নামে তার এক নিকটাত্মীয় ২০১৭ সালের কোনো এক সময় তাকে ফোনটি ব্যবহারের জন্য দেন। পরে রায়হানের তথ্য অনুযায়ী, সাভার থেকে শহীদকে গ্রেফতার করা হয়। শহীদ সাভারে ইজিবাইক চালান। শহীদকে জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে আসে সেই ট্রিপল খুনের ঘটনা। প্রায় তিন বছরের তদন্তে শহীদের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত হয় পুলিশ। তবে শহীদ সুচতুরভাবে হত্যার কোনো প্রমাণ রাখেননি। ঘটনার পর থেকে এলাকার সব আত্মীয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। ঢাকায় নাম বদলে দাড়ি রেখে ইজিবাইক চালিয়ে জীবনযাপন শুরু করেন। শহীদ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে।

ইজিবাইক চালক শহীদ বিয়ে করতে চেয়েছিলেন চাচাতো বোন কাজলী আক্তারকে। ঘরে দুই স্ত্রী ও তিন সন্তান থাকায় এ বিয়েতে রাজি ছিলেন না কাজলীর মা পারভিন বেগম। এতে রাগে-ক্ষোভে ঘুমন্ত অবস্থায় চাচা দেলোয়ার মোল্লা (৬৫), চাচি পারভিন বেগম (৫৫) এবং চাচাতো বোন কাজলী আক্তারকে (১৫) কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেন তিনি। কাজলীর মাথা অনেক দূরে ফেলে দেন। এরপর ঢাকায় পালিয়ে নাম বদলে দাড়ি রেখে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে করছিলেন সংসার। এ সময় পুরনো ফোনও বন্ধ করে দেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গেও সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন তিনি। তাই দ্বিতীয় স্ত্রী একমাত্র সন্তানকে নিয়ে গলাচিপা থেকে বরিশালের গৌরনদীতে বাবার বাড়ি চলে যান। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শহীদ স্বীকার করেছেন, কাজলীকে বিয়ে করতে চাচি বাধা দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে তিনজনকে গলা কেটে হত্যা করেন।

সর্বশেষ খবর