মঙ্গলবার, ৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

পাহাড়ে জাপানের মিয়াজাকি আম

মো. জহুরুল আলম, খাগড়াছড়ি

পাহাড়ে জাপানের মিয়াজাকি আম

পাহাড়ে এখন চাষ হচ্ছে সুদূর জাপানের মিয়াজাকি আম। এখানে উৎপাদিত এক টন মিয়াজাকি আমের দাম ১০ লাখ টাকা! এটি ‘মিয়াজাকি’ বা ‘সূর্যডিম’ আম নামেই পরিচিত, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ও পুষ্টিসমৃদ্ধ আমের প্রজাতি হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। জাপানের মিয়াজাকি অঞ্চলের এ আম প্রথমবারের মতো চাষ করে সফল হয়েছেন খাগড়াছড়ির মহালছড়ির চাষি হ্লাশিমং চৌধুরী। জেলার মহালছড়ি উপজেলার ধুমনিঘাট এলাকায় ৬০ শতক বাগানে মিয়াজাকি প্রজাতির ১২০টি চারা লাগিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ফলন তুলেছেন সফল এ বাগানি।

সরেজমিনে ধুমনিঘাট এলাকার বাগানে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ি ঢালুর গাছে ঝুলছে লাল লাল আম। পোকা-মাকড়ের আক্রমণ থেকে বাঁচতে কিছু গাছে ব্যবহৃত হচ্ছে ব্যাগিং পদ্ধতি। মুকুল আসা থেকে ফল ছেঁড়া পর্যন্ত আমের যত্ন নেওয়ায় কোনো কমতি থাকে না হ্লাশিমংয়ের। তাই অন্যান্য বাগানির চেয়ে তার ফলের চাহিদা ও গুণগতমান অনেক ভালো। পার্বত্য চট্টগ্রামে মিয়াজাকি আমের প্রথম চাষও হয় তার হাত ধরে। জানা যায়, জাপানের মিয়াজাকি অঞ্চলে প্রথম চাষাবাদ হয় এ আমের। তাই অঞ্চলের নামানুসারে এর নাম হয় মিয়াজাকি ম্যাংগো। বাংলাদেশ ও ভারতে এটিকে সূর্যডিম বা লাল আমও বলা হয়ে থাকে। বিশে^র অন্যান্য আমের চেয়ে এ আমের বাজারমূল্য যেমন বেশি, তেমনি পুষ্টিগুণও অনেক। হ্লাশিমং চৌধুরী বলেন, ভারতের পুনে থেকে ২০১৭ সালে মিয়াজাকি আমের মাতৃচারা সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর তার বাগানে কলমচারার মাধ্যমে ১২০টি চারা উৎপাদন করেন। বাণিজ্যিকভাবে লাগানো মিয়াজাকি বাগানে ২০১৯ সাল থেকে ফলন আসতে থাকে। ২০২০ সালেও ভালো ফলন হয়। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ মৌসুমে ফলন কম হলেও দাম পেয়ে খুশি হ্লাশিমং। প্রতি কেজি আম বিক্রি করছেন ১ হাজার টাকায়। এবার এক টনের মতো ফলন পাবেন এবং তা বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা তার। মিয়াজাকি আমের চাষ সম্প্রসারণ সম্পর্কে হ্লাশিমং চৌধুরী বলেন, এ আমের যে বাজারমূল্য ও চাহিদা দিন দিন বাড়বে। উচ্চমূল্যের এ ফলের চারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছা তার। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে মাতৃচারা কলমের কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানান। মহালছড়ির এ বাগানে মিয়াজাকি আম দেখতে উৎসুক মানুষের ভিড় বাড়ছে প্রতিদিন। এখানকার বাগানিদের মধ্যেও মিয়াজাকি আমের চারা লাগানোয় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। খাগড়াছড়ি হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার এ প্রতিবেদককে বলেন, মিয়াজাকি আমের চাষ খাগড়াছড়িতে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে হর্টিকালচার সেন্টারের নার্সারিতে মাতৃচারা উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। যদি এটি করা যায় তাহলে এ অঞ্চলের ফলদ বাগানের সঙ্গে সম্পৃক্তদের জীবনমান পাল্টে যাবে। কারণ উচ্চমূল্যের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও বেশ কদর রয়েছে মিয়াজাকি আমের। পাহাড়ে এ আম ব্যাপক আকারে রোপণ করা হলে এখানকার কৃষি অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে কৃষিবিদদের অভিমত।

সর্বশেষ খবর