শনিবার, ১২ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ভোগান্তির আরেক নাম টঙ্গী-গাজীপুর সড়ক

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

ভোগান্তির আরেক নাম টঙ্গী-গাজীপুর সড়ক

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সড়কের চিত্র -বাংলাদেশ প্রতিদিন

টঙ্গী থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটার অংশ নিয়ে যাত্রী সাধারণের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। সড়কটিতে চলাচলকারীরা বলছেন, উন্নয়ন কাজের জন্য এখনই চলাচল করতে নানা সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়ক সচলে পুরোদমে কাজ চলছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৫৫ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। টঙ্গী কলেজ গেট থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে দুই দুই করে চার লেনের রাস্তার কাজ আগামী এক মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফ্লাইওভার, ওভারপাস, বিআরটি, সাধারণ যান চলাচলের পৃথক লেন নির্মাণ ও পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের নির্মাণকাজ একসঙ্গে চলছে, যার কোনোটিই শেষ হয়নি। বর্ষা শুরু হওয়ায় রাস্তার অবস্থা আরও বেহাল হয়ে আছে। এদিকে দীর্ঘ সময় নির্মাণকাজ চলার কারণে টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কে বেড়েছে যানজট ও জনদুর্ভোগ। পুরনো পিচঢালা সড়ক ভেঙে নতুন প্রকল্পের কাজ চলার কারণে  তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। সেগুলো ভরাট করা হয়েছে ইট-সুরকি ফেলে, যা যানবাহনের চাপে উঠে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলে কাদায় পরিণত হয়। আবার রোদ বাড়লে ধুলায় পরিণত হয়। রাস্তার দুই পাশের নির্মাণাধীন ড্রেনগুলোতে ময়লা আবর্জনা আটকে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে ড্রেনের পানি সড়কে উঠে যায়। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায়। তখন মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।

শুক্রবার বিকালে সড়কটির বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা যায়, সড়কের বিভিন্ন অংশে পিচঢালাই উঠে গেছে। কোথাও কোথাও তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। এসব গর্তে জমে আছে পানি। সড়কের কিনারা বা বিভাজকের মাঝখানে জমে আছে বালুর স্তূপ। সড়কের কাছে পড়ে আছে ইটের খোয়া, বালু বা বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী। এর মধ্যেই চলাচল করছে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, রিকশা, অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন। যানবাহন চলে হেলেদুলে।

শুক্রবার বিকালে কথা হয় সাভার থেকে ছেড়ে আসা মিনি কাভার্ডভ্যানচালক আশরাফের সঙ্গে। তিনি জানান, টঙ্গী থেকে চৌরাস্তার চেরাগ আলী, সাতাইশ, ঢাকা বাইপাস মোড়, তারগাছ এলাকায় রাস্তায় খানাখন্দ বেশি। খানাখন্দের কারণে মহাসড়কে যানজট লেগেই আছে। রাস্তার গর্তে পড়ে যন্ত্রাংশ ভেঙে আমাদের গাড়ির অনেক ক্ষতি হয়। টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পৌঁছতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে। এ ছাড়া গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় পানি জমে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। বৃষ্টির কারণে ওই মহাসড়কের গাজীপুর অংশের চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগড়া বাইপাস, চৌধুরী বাড়ি, তারগাছ, চেরাগআলী, নলজানী, তিন সড়ক, স্টেশন রোডসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। তখন চালক, যাত্রী ও পথচারীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল। স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চলতে না পারায় মহাসড়কের উভয়দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল।

জানা গেছে, ২০১২ সালে গাজীপুর থেকে রাজধানীর বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টের (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) আওতায় দেশের প্রথম বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প শুরু হয়। ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে মেয়াদ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর করা হয় এবং ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৪ কোটি ৮২ লাখ ১৪ টাকা। এরপর আরও দুই দফা প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ করার কথা রয়েছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি এডিবি, ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা (এএফডি) ও গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটির (ডিইএফ) অর্থায়ন করছে। বিআরটি সূত্র জানায়, বিআরটি সড়কে সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ, বিআরটি লেন, সাতটি ফ্লাইওভার, ১৯টি বিআরটি স্টেশন, ২৫ কিলোমিটার ড্রেইন ও ২টি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। সাতটি ফ্লাইওভারের কোনোটির ওপর আবার কোনোটির নিচ দিয়ে বিআরটি বাস চলাচল করবে। আবার কোনো ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে বিআরটি ও গণপরিবহন একসঙ্গে চলবে। ধীরগতির যান চলাচলে আলাদা আড়াই মিটার প্রস্থের লেন ও সাড়ে চার মিটার ফুটপাথ থাকবে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় ১৬ কিলোমিটার অ্যাট গ্রেড ও সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলিভেটেড মেইন করিডর নির্মাণ করা হবে। মেইন করিডরসংলগ্ন ১১৩টি বা ৫৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের উন্নয়ন করা হবে। বিআরটি বাস ডিপোসহ বিভিন্ন স্থানে ২০টি স্টপেজ থাকবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের আওতায় টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত মোট ২৮ কিলোমিটার ড্রেন ও ১০টি কাঁচাবাজার নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ১৪০টি আটিকুলেটেড বাস ক্রয় করা হবে। এই রুটে ধীরগতির যানবাহন চলাচল করবে পৃথক লেনে। দ্রুতগতির যান চলাচলের জন্য সড়কের মাঝ বরাবর দুই লেন পৃথক করা হবে। সেখানে দ্রুত, নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থায় ঘণ্টায় ৪০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবে। বিআরটি কর্তৃপক্ষ জানায়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পের বাস্তবায়নকাজ এখন পুরোদমে চলছে। ২০২২ সালের জুনে গাজীপুর-বিমানবন্দর অংশটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে। এ রুটটি চালু হলে গণপরিবহন ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। সাড়ে ২০ কিলোমিটার পথ যেতে সর্বোচ্চ আধা-ঘণ্টা লাগবে। ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আসবে। যাত্রীরা দ্রুত কর্মস্থলে পৌঁছতে পারবেন। বিআরটি প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক (স ও জ অংশ) মো. কায়সার হামিদ জানান, ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৫৫ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। টঙ্গী কলেজ গেট থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে দুই দুই করে চার লেনের রাস্তার কাজ আগামী এক মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। বিআরটি লেনও হয়ে যাবে। বিআরটি স্টেশনগুলোর কাজও চলছে। ফ্লাইওভারের কাজও চলমান রয়েছে। সড়কের সাইড রাস্তার কাজও চলতে থাকবে। তিনি আরও বলেন, আগামী বছরের জুন মাসে পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ হয়ে যাবে। সড়কের দুই পাশের ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার কাজ চলছে। ড্রেনগুলোর ময়লা পরিষ্কার হয়ে গেলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। তখন শুধু ফ্লাইওভারের কাজ চলমান থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর