রবিবার, ১৩ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

অসহনীয় কর নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা

অসংগতি দূর করতে টাস্কফোর্স চেয়ে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে এফবিসিসিআই

রুহুল আমিন রাসেল

অসহনীয় কর নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা

অসহনীয় ভ্যাট ও কর নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। এ পরিস্থিতি উত্তরণে ভ্যাট, শুল্ক ও করের অসংগতি দূর করতে অতিসত্বর উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ত্রিপক্ষীয় টাস্কফোর্স চায় এফবিসিসিআই। সংগঠনটি বলেছে, শিল্প খাত সুরক্ষায় অধিকাংশ পণ্য ও সেবা খাতে একই ধরনের সমস্যা নিরসন করা জরুরি। অন্যথায় ব্যবসা-বাণিজ্য নীতিমালায় খাতভিত্তিক বৈষম্য ও অসংগতি থেকে যাবে। এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, ভ্যাট আইন নিয়ে কাজ করা দরকার। আমরাও মনে করি ভ্যাট আইনে অনেক সমস্যা রয়েছে। এ সমস্যা সমাধান ও শুল্ক-করের অসংগতি দূর করতে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব দিয়েছি।’ এর আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালকে আমদানি শুল্ক, আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইন সরল ও সহজ করতে টাস্কফোর্স গঠনের অনুরোধ জানিয়ে ৯ জুুন পত্র দিয়েছে এফবিসিসিআই। পত্রে বলা হয়, উন্নয়ন এবং জীবন ও জীবিকাকে প্রাধান্য দিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কয়েকটি শিল্প খাতের সুরক্ষায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে এসব খাত ছাড়াও অধিকাংশ পণ্য ও সেবা খাতের একই ধরনের সমস্যা নিরসন করা জরুরি। অন্যথায় ব্যবসা-বাণিজ্য নীতিমালার ক্ষেত্রে খাতওয়ারি বৈষম্য ও অসংগতি থেকে যাবে। এফবিসিসিআই প্রস্তাবিত উৎপাদনশীল এবং শুল্কবান্ধব সরল করব্যবস্থা-সংক্রান্ত বিশেষ কয়েকটি প্রস্তাব বাজেটে সন্নিবেশিত হলে সব খাত সমন্বিত সুযোগ-সুবিধার সুফলপ্রাপ্ত হবে।

পত্রে সংগঠনটি বলেছে, আমদানি শুল্ক, আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইন সরল ও সহজীকরণের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও এফবিসিসিআইর সমন্বয়ে অতিসত্বর উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করা হোক।

এদিকে প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করে অর্থমন্ত্রীকে একটি সুপারিশমালা দিয়েছে এফবিসিসিআই। সূত্র জানায়, সুপারিশে শিল্প খাতে সমন্বিত আমদানি শুল্ক প্রসঙ্গে বলা হয়, পণ্য ও সেবা খাতে বিদ্যমান একই ধরনের শুল্ক ও করবৈষম্য বিলোপ করে সব খাতের জন্য সমন্বিত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হোক। আমদানি হওয়া সিকেডি তৈরি পণ্য সংযোজন শিল্প ছাড়া সব ভ্যাট নিবন্ধিতদের সংশ্লিষ্ট নথিতে অন্তর্ভুক্ত মৌলিক এবং দেশে উৎপাদিত হয় না এমন মধ্যবর্তী কাঁচামাল, উপকরণ ও উপাদানের ওপর আমদানি শুল্ক ১, ৩ ও ৫ শতাংশ এবং দেশে উৎপাদিত কাঁচামালে ১০ শতাংশের মধ্যে সীমিত করা হোক।

সুপারিশে উৎপাদনশীল এবং শুল্কবান্ধব টেকসই আয়কর ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বলা হয়, ভ্যাট নিবন্ধিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর আরোপিত অনধিক ২০ শতাংশ অগ্রিম আয়কর রহিত করে বাণিজ্যিক আমদানির ওপর অগ্রিম আয়কর ৩ শতাংশ হারে বহাল রাখা হোক। সরবরাহ ও লেনদেনের পর্যায়ে ৩১টিতে বিভিন্ন হারে উৎসে আয়কর বহাল আছে। একই পণ্য উপর্যুপরি উৎসে কর অর্জিত মনুাফার ওপর প্রদেয় করের চেয়ে বহুগুণ বেশি হওয়ার ফলে অসহনীয় করভারে ব্যবসা-বাণিজ্য গোপন লেনদেনের চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছে। এগুলো কমিয়ে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ২ শতাংশের মধ্যে সীমিত করে চূড়ান্ত হিসাবে আগাম ও উৎস আয়কর সমন্বয় করার সুযোগ নিশ্চিত করা হোক। কৃষিভিত্তিক (বর্তমানে কৃষি খাত আয়করমুক্ত) হিমাগার শিল্প খাতে আয়কর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হোক।

সুপারিশে ভ্যাট প্রসঙ্গে বলা হয়, আয়কর হিসেবে নির্ণীত চূড়ান্ত টার্নওভারের ভিত্তিতে পাইকারি বিক্রেতা ও খুচরা বিক্রির ওপর দশমিক ৫ শতাংশ হারে টার্নওভার ট্যাক্স আরোপ করা হোক। শিল্প, সেবা ও ব্যবসায়িক খাতে গত আয়কর হিসেবে নির্ণীত চূড়ান্ত টার্নওভারের ভিত্তিতে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভারের ওপর ৩ শতাংশ  টার্নওভার কর আরোপ করা হোক। শিল্প পরিচালনা ব্যয় কমানোর জন্য আমদানি পর্যায়ে শিল্প খাতের প্রদেয় ৩ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহার করা হোক।

রপ্তানি সহায়ক সুপারিশে এফবিসিসিআই বলেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে রপ্তানি বাণিজ্যের ব্যয় ও সময় কমানোর জন্য পণ্য প্রস্তুতকরণে ব্যবহৃত আমদানি করা এবং দেশীয় উপকরণের ওপর পরিশোধিত সব শুল্ক ও কর মওকুফ করা হোক। আমদানি করা সব পরিষেবার ওপর আগাম আয়কর ও মূসক আরোপ করা এবং সব উপকরণসহ রপ্তানি করা সব পরিষেবা পরোক্ষ করমুক্ত করতে হবে। রপ্তানি খাতে সব ধরনের উৎসে আগাম কর প্রত্যাহার করা হোক। রপ্তানি বৃদ্ধির সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট সব রপ্তানি পণ্য খাতে রেয়াতি হারে করমুক্ত বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সরবরাহের সুবিধা প্রদান করা হোক। এসএমই খাতের রপ্তানি বাড়াতে রেয়াতি হারে ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবস্থা সহজলভ্য করতে হবে।

সর্বশেষ খবর