রবিবার, ১৩ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের নতুন প্ল্যাটফরম

৩০ বছরের মধ্যে খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য, ইসলামী দলের নেতাদের মোনাফেক মনে করেন তারা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

প্রশিক্ষিত জঙ্গিরা দুর্ধর্ষ অভিযান চালানোর জন্য নতুন প্ল্যাটফরম তৈরি করছে। নাম নির্ধারণ করা না হলেও প্ল্যাটফরমকে ‘সংগঠন’-এর রূপদানে বদ্ধপরিকর এই জঙ্গিরা একে অন্যকে ‘মানহাজি’ বলে সম্বোধন করছে। মানহাজি মানে ‘ঠিক রাস্তায় অবস্থানকারী’। মানহাজিরা প্রচলিত গণতান্ত্রিক ও ধর্মীয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে সরাসরি জিহাদ করে খেলাফত প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। নতুন এ সংগঠনে ‘নব্য জেএমবি’ ছাড়াও যোগদান করছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি), আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হিযবুত তাহরীরের নেতা-কর্মীর একটি অংশ। এরা মনে করে সরাসরি জিহাদ চালিয়ে ৩০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা যাবে। এ লক্ষ্য নিয়ে তারা সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে এসব তথ্য মিলেছে। মানহাজি নামধারী জঙ্গিদের এ তৎপরতাকে দেশের জন্য হুমকি মনে করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জঙ্গি সংগঠনগুলো প্রতিনিয়ত নিজেদের রূপ পরিবর্তন করে কর্মকান্ড চালাচ্ছে। তাদের রূপ পরিবর্তনের দৃষ্টান্ত নতুন এই প্ল্যাটফরম। তারা ভয়ংকর রূপ ধারণের আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। নইলে তা দেশের জন্য হবে ভয়ংকর।’

নতুন করে সংগঠিত হওয়ার প্রক্রিয়া ও উগ্রপন্থি এ সংগঠনের বিষয়ে প্রশাসনেরও খুব এটা ধারণা নেই। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ সংগঠনের বিষয়ে আমাদের কাছে বিশদ কোনো তথ্য নেই। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন ও তালেবান নেতারা দৃঢ়চেতা জঙ্গিদের ‘মানহাজ’ বলে চিহ্নিত করতেন। ওসামা বিন লাদেনের বক্তৃতা সংকলন নিয়ে ‘তাওজিহাতুন মানহাজিয়্যাহ’ নামে বইও প্রকাশিত হয়েছে। মূলত আল-কায়েদার আদর্শধারী জঙ্গিরা ‘মানহাজি’ নামে চিহ্নিত, যারা গণতান্ত্রিক ও ধর্মীয় রাজনীতি বাদ দিয়ে সরাসরি জিহাদের মাধ্যমে খেলাফত  কায়েম করতে চায়। একই সঙ্গে ‘গাজওয়ায়ে হিন্দ’-এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। তারা নিজেদের মনে করে ‘ইলহাক বিল কাফেলা’। যারা ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম কায়েম করে সিরিয়ায় গিয়ে ইমাম মাহদির সঙ্গে মিলিত হবে। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে সক্রিয় এ জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিচ্ছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর, হুজি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, নব্য জেএমবির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিরা। এ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শীর্ষ নেতাদের ‘শায়খ’ নামে ডাকেন। তাদের শক্তিশালী রিক্রুট টিম ছাড়াও রয়েছে অনলাইন অ্যাকভিটিস্ট টিম যারা সব সময় জিহাদি প্রচারণা চালায় অনলাইনে।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, মানহাজিরা ইসলামের হারানো খেলাফত ও সম্মান ফিরিয়ে আনাই টার্গেট নির্ধারণ করেছে। যারা জিহাদ ও খেলাফতের বিরোধিতা করে তারা তাগুত।

যেসব মুসলমান তাদের সহযোগী তারাও তাগুত। গণতান্ত্রিক ও ধর্মীয় রাজনীতির মাধ্যমে যারা ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা মোনাফেক। বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলোকে তারা মোনাফেক মনে করে। তাগুত ও মোনাফেকদের সরাসরি হত্যা করা জিহাদ মনে করে উগ্রপন্থি এই সংগঠনের নেতারা। ভারত ও বাংলাদেশের যেসব মাদরাসা জিহাদের ডাক দিচ্ছে না তাদের তাগুতের দালাল মনে করে। তাই মানহাজিরা সেজন্য তাদের আদর্শের পতাকা এগিয়ে নিয়ে যাওয়াকে ফরজ মনে করে।

 

সর্বশেষ খবর