সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

রিজার্ভের অর্থ পায়রায় চুক্তি স্বাক্ষর

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অর্থে পায়রা সমুদ্রবন্দরের ১০ মিটার গভীরতা সম্পন্ন ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল নির্মাণের সিদ্ধান্তকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরেকটি বার্তা বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, সম্পদের কোনো অভাব নেই। অভাব মাঝে মাঝে আসে সততার, মাঝে মাঝে দায়বোধের। গতকাল রাজধানীর হোটেল রেডিসনে পায়রা সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল নির্মাণের চুক্তি সই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পায়রা সমুদ্রবন্দরের ১০ মিটার গভীরতা সম্পন্ন ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল নির্মাণ করতে বেলজিয়ামভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি ‘জান ডে নুল’র সঙ্গে গতকাল চুক্তি সই করেছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। চুক্তিতে সই করেন পায়রা বন্দরের চেয়ারম্যান কমডোর হুমায়ুন কল্লোল এবং ড্রেজিং কোম্পানির পক্ষে প্রকল্প পরিচালক জ্যাং ওয়েল। ৩৪ মাসের জন্য এই চুক্তি করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহম্মদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন ভুইয়া। এতে সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহন সচিব মেজবাউদ্দিন চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পায়রা বন্দরের চেয়ারম্যান কমডোর হুমায়ুন কল্লোল। অনুষ্ঠানে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে দেশের উন্নয়নে ব্যবহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী ‘বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’ তৈরি করেছেন এবং ২০২১ সালের ১৫ মার্চ তহবিলটির উদ্বোধন করেছেন। এই তহবিলের প্রথম গ্রাহক হিসেবে তিনি পায়রা বন্দরকে বেছে নিয়েছেন এবং আলোচ্য ড্রেজিং কাজটি এই তহবিল থেকে অর্থায়নের অনুমোদন করেছেন। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘কিছুদিন আগে পায়রায় গিয়েছিলাম। ঘুরে দেখেছি, চমৎকার জায়গা। এর মধ্যে নিশ্চয় আরও পরিবর্তন হয়েছে। অতি দ্রুতই কাজ শেষ হবে। এটা আমাদের অর্থায়নে হচ্ছে। এটি শেখ হাসিনার আরেকটি বার্তা।’ তিনি আরও বলেন, আপনারা বারবার দেখছেন এটা। পদ্মা সেতুর ব্যাপারে দেখলেন। উই ক্যান (আমরা পারি)। আমাদের সাহস আছে, সম্পদও আছে। আমরা অনেকে এটা বুঝি না। আমরা নিজেদের মনে করি বুভুক্ষু জাতি। কিন্তু না, আমাদের সম্পদ আছে। সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এম এ মান্নান বলেন, ‘সম্পদের কোনো অভাব নেই। আমি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে কাজ করি প্রায় আড়াই বছর হলো। সম্পদের অভাব কোথাও আমি ফিল (অনুভব) করিনি। অভাব মাঝে মাঝে আসে সততার, মাঝে মাঝে দায়বোধের। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রিজার্ভের অর্থে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্প প্রথম বাস্তবায়ন হবে। এটি ঐতিহাসিক বিষয়। প্রধানমন্ত্রী যে পেশার স্বাধীনতা দিয়েছেন, তারই একটি উদাহরণ হচ্ছে আজকের চুক্তি। এই বন্দরটি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ সময় তিনি চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প সম্পর্কে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা আগামীতে সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কাজ করে যাব। দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ফলে দেশের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’ অনুষ্ঠানে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমে ড্রেজিং কাজটি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রায় ৫৩ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। দেশের প্রচলিত যাবতীয় বিধিবিধান প্রতিপালন করে আলোচ্য ড্রেজিং কাজটি করার জন্য জান ডে নুলের সঙ্গে আজ পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তি সই হয়েছে। পায়রা বন্দরটি আন্দারমানিক নদের তীরে রাবনাবাদ চ্যানেলে অবস্থিত। নিরবচ্ছিন্নভাবে জাহাজ চলাচলের জন্য বর্তমানে চ্যানেলে মেইন্টেন্যান্স ড্রেজিং চালু রয়েছে, যার ফলে চ্যানেলের গভীরতা ৬ দশমিক ৩ মিটার বজায় রাখা হচ্ছে। বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে বন্দরে অধিকতর বড় জাহাজ ভেড়ানোর জন্য ইতিপূর্বে বেলজিয়ামভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি ‘জান ডে লু’র সঙ্গে একটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ চুক্তি সই হয়েছিল বলেও জানায় পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর এখন সেটা নিজস্ব অর্থায়নে করার সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ সরকার। রাবনাবাদ চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেলের গভীরতা ১০ দশমিক ৫ মিটারে উন্নীত করে বন্দরে ৪০ হাজার টন কার্গোবাহী এবং ৩ হাজার টিইইউ বিশিষ্ট জাহাজ বন্দরে সরাসরি ভিড়তে সক্ষম হবে বলেও উল্লেখ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারা আরও বলছে, দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর হিসেবে ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পায়রা বন্দরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট তিনি বন্দরটিতে জাহাজ চলাচলের উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে এ পর্যন্ত ১৩৪টি বাণিজ্যিক জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করেছে, যা থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছে সরকার।

সর্বশেষ খবর