সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনায় এক দিনে মৃত্যু বেড়ে ৪৭

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনায় এক দিনে মৃত্যু বেড়ে ৪৭

রাজশাহীর পাশাপাশি ঢাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যে দেশে গত এক দিনে আরও ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংক্রমণ ধরা পড়েছে আরও ২ হাজার ৪৩৬ জনের মধ্যে। এক দিনে মৃত্যুর এই সংখ্যা গত এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বশেষ গত ৯ মে দেশে করোনাভাইরাসে ৫৬ জন মারা যান।

স্বাস্থ্য অধিদফতর গতকাল জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৮ লাখ ২৬ হাজার ৯২২ জন হয়েছে। মৃতের মোট সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ১১৮ জন। সরকারি হিসাবে, আক্রান্তদের মধ্যে এক দিনে আরও ২ হাজার ২৪২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৬৬ হাজার ২৬৬ জন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছর ৮ মার্চ; তা সাড়ে ৭ লাখ পেরিয়ে যায় গত ২৭ এপ্রিল। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে গত ৭ এপ্রিল রেকর্ড ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ বছর ১১ জুন তা ১৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ১৯ এপ্রিল রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। সে সময় টানা চার দিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০০ জনের ওপরে। বিশ্বে শনাক্ত কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ১৭ কোটি ৫৬ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৭ লাখ ৯৬ হাজারের বেশি মানুষের। দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর সংক্রমণের প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে ঢাকার পরিস্থিতিই সবচেয়ে খারাপ ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার সামাজিক বিস্তার বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটায় রাজশাহী ও খুলনার ভারত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে কয়েক সপ্তাহ ধরে। গত শনিবার ঢাকাতেও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যে দেখা গেছে, গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যেখানে ৬৬৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, সেখানে রাজশাহী বিভাগে পাওয়া গেছে ৬৬৮ জন নতুন রোগী। খুলনায় সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৬০৬ জনের মধ্যে।

একক জেলা হিসেবে ঢাকায় সর্বোচ্চ ৫২৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। এ সময়ে রাজশাহী জেলায় ৩৬৮ জন, যশোর জেলায় ১৪৫ জন এবং খুলনা জেলায় ১১৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫১২টি ল্যাবে ১৮ হাজার ৪৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ১১২টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৫ লাখ ৩ হাজার ৪১১টি; বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৬ লাখ ৭১ হাজার ৭০১টি। ঢাকা বিভাগে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৭ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ১৮ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৩৭ শতাংশ।

এক দিনে যারা মারা গেছেন, ১৫ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন, ৯ জন ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগের বাসিন্দা। এ ছাড়া ৬ জন রাজশাহী বিভাগের, ৮ জন খুলনা বিভাগের, ১ জন বরিশাল বিভাগের, ২ জন সিলেট বিভাগের, ৪ জন রংপুর বিভাগের এবং ২ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। তাদের ৩২ জন পুরুষ আর নারী ১৫ জন। ৪২ জন সরকারি হাসপাতালে, ৩ জন বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন। বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ২ জন। তাদের মধ্যে ২৯ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, ৮ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৪ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর, ৫ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর এবং ১ জনের ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল। রাজশাহী থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, রাজশাহী অঞ্চলে করোনার সংক্রমণ কমছেই না। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্তদের নেওয়া হচ্ছে হাসপাতালেও। কেউ অ্যাম্বুলেন্স, কেউ ভ্যান কেউবা আবার অটোরিকশায় রোগী নিয়ে ছুটছেন। আর তখনই আক্রান্ত রোগীর কাছ থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিচ্ছে। তাছাড়া হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর পরও এখন মরদেহ দাফন-সৎকার করা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই। করোনাকালের শুরুতে প্রতিটি মরদেহ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফন করা হলেও এখন তাদের ডাক পড়ে না। সচেতন দু-একজন ব্যক্তি তার মৃত স্বজনকে দাফনের জন্য কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনকে ডাকেন। অথচ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে এখন প্রতিদিনই গড়ে ১০ জন রোগী মারা যাচ্ছেন। আর শুধু রাজশাহী থেকেই প্রতিদিন অন্তত ভর্তি হচ্ছেন নতুন ১৫ জন রোগী। বাগেরহাট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, করোনার হটস্পর্ট মোংলাসহ বাগেরহাট জেলায় বেড়েই চলেছে করোনা সংক্রমণ। গতকালও জেলায় ১১০ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫ জন। জেলায় করোনা শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আর উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ৩ জনের। এ ছাড়া ৮১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫২ জনের করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে। শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৬৪ দশমিক ১৯ শতাংশে। জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, গতকাল জেলা আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক ভার্চুয়াল সভায় আগের আংশিক লকডাউনের সিদ্ধান্তটি আবারও বহাল রাখা হয়েছে। ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ২৪ ঘণ্টায় ঝিনাইদহে ৭১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার শতকরা ৩৯ দশমিক ৪১ ভাগ। যা গতকাল ছিল ২০ ভাগ। নাটোর প্রতিনিধি জানান, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নাটোর পৌরসভা কার্যালয় লকডাউন ঘোষণা করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

গতকাল দুপুরে নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি এই লকডাউনের ঘোষণা দেন। আজ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই লকডাউন চলবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৫৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আরটিপিসিআর, র‌্যাপিড এন্টিজেন্ট এবং জিন এক্সপার্ট নমুনায় গড় শনাক্তের হার ১০.৫৯ শতাংশ। খুলনা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় শনাক্ত হয়েছেন ৬০৬ জন। এ সময় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে যশোরে ৪ জন ও খুলনা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরায় ১ জন করে মারা গেছেন। গতকাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক রাশেদা সুলতানা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

সর্বশেষ খবর