সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা

বিচারিক ক্ষমতা হারাচ্ছেন ম্যাজিস্ট্রেট সাত পুলিশ বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় ৪ শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা নেওয়া এবং শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর ঘটনায় ওই সময়ের ওসি আবুল কালামসহ সাত পুলিশ ও সমাজসেবা অফিসারকে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহর ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে তাকে দেওয়ানি মামলার দায়িত্ব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে গতকাল বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়। আদালতে শিশুদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. আবদুল হালিম ও অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এমএমজি সরোয়ার পায়েল। পরে আবদুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা ও জেলে প্রেরণের ঘটনায় হাই কোর্ট সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছে। তিনি বলেন, নির্দেশনায় চার শিশুকে গ্রেফতার ও থানা হেফাজতে আটক রাখাকে অবৈধ ও শিশুদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা বাতিল ঘোষণা করেছে আদালত। একই সঙ্গে বাকেরগঞ্জ থানার ওই সময়ের ওসিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে এবং সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা অফিসারকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছে আদালত। তিনি বলেন, আদেশে চার শিশুকে আটক করে প্রিজনভ্যানে করে আনা চার পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনায়েত উল্লাহর ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করে তাকে দেওয়ানি মামলার দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া শিশু আইন অনুযায়ী পুলিশের দায়িত্ব কর্তব্য গাইডলাইন আকারে প্রকাশ করে প্রত্যেক থানায় সার্কুলেট করতে বলা হয়েছে আদেশে। ছয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে চার শিশুকে আসামি করে গত বছরের ৬ অক্টোবর মামলা করা হয়। এ মামলায় ওই দিনই চার শিশুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ৭ অক্টোবর বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহ আদেশে চার শিশুকে যশোর পুলেরহাট শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠায়। বিষয়টি নিয়ে বেসরকারি একটি টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারিত হয়। এই সংবাদ বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চের নজরে আসে ৮ অক্টোবর রাতে। এরপর রাতেই বিচারপতিদ্বয় নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করে ভার্চুয়াল আদালত বসিয়ে আদেশ দেয়। ওই রাতেই চার শিশুর জামিনের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বরিশালের শিশু আদালতের বিচারকের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ঘটনায় গত বছরের ১১ অক্টোবর বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা করেছিল হাই কোর্ট। ওই দিন চার শিশুকেও খাস কামরায় নিয়ে তাদের বক্তব্য শোনে আদালত। পরে চার শিশুর বিরুদ্ধে বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায় করা মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে আদেশ দেয় উচ্চ আদালত।

সর্বশেষ খবর