মঙ্গলবার, ১৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

নৈতিক পোশাকে অনৈতিক মূল্য হাঁকাচ্ছেন ক্রেতারা

রুহুল আমিন রাসেল

নৈতিক পোশাকে অনৈতিক মূল্য হাঁকাচ্ছেন ক্রেতারা

দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পের আন্তর্জাতিক ক্রেতারা চান ইথিক্যাল ফ্যাশন বা নৈতিক পোশাক পণ্য। তবে এই ক্রেতারাই নৈতিক পোশাকের অনৈতিক মূল্য হাঁকছেন বলে তথ্য দিয়েছেন রপ্তানিকারকরা। তারা বলেছেন, বিশ্বে নৈতিক পোশাক উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন শীর্ষে। বাংলাদেশে বিশ্বের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা রয়েছে। শিল্প ক্যাটাগরিতে বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি কারখানার ৩৯টিই আছে বাংলাদেশে। পাইপলাইনে আছে আরও প্রায় ৫০০ কারখানা। এসব কারখানা হচ্ছে টেকসই, স্বাস্থ্যসম্মত ও ন্যায়নীতি অনুসরণ করেই। এ প্রসঙ্গে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নৈতিক ব্যবস্থাপনায় কারখানা পরিচালনা করে পোশাক পণ্য উৎপাদন করলেও ক্রেতারা নৈতিক মূল্য দেয় না। যদিও নৈতিক পোশাক উৎপাদনে এখন বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু ক্রেতারা নৈতিকতার মানদন্ড বজায় রেখে সঠিক মূল্য দিচ্ছে না। যদিও পোশাক পণ্য উৎপাদনের অন্যতম উপকরণ তুলা ও সুতাসহ অন্যান্য কাঁচামালের দাম বাড়ছেই।  তথ্যমতে, টেকসই, স্বাস্থ্যসম্মত ও ন্যায়নীতি অনুসরণ করে ভবন ও শহর প্রতিষ্ঠায় অনবদ্য অবদান রাখায় ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড ২০২১ পেয়েছে বিজিএমইএ। সবুজ শিল্পায়নে বিভিন্ন কর্মসূচি এবং উদ্যোক্তাদের অদম্য মনোবল ও প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ বিজিএমইএ বিশ্বের প্রথম ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন বা বাণিজ্য সংগঠন হিসেবে এই অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। প্রসঙ্গত, গ্রিন ফ্যাক্টরি বা সবুজ পোশাক কারখানা মূলত জ্বালানি সাশ্রয়ী ও টেকসই উৎপাদন এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। এ ধরনের কারখানা হয় প্রযুক্তিনির্ভর। এতে খোলামেলা নিরাপদ কর্মপরিবেশ পরিবেশের সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পায়। পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থার এই কারখানা দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই।

জানা গেছে, বহুল আলোচিত রানা প্লাজা ভবন ধসের পর পুরো বিশ্ব সরব হয় নৈতিক পোশাকশিল্প নিয়ে। দেশি পোশাক কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ নিয়ে বিশ্বজুড়ে কড়া সমালোচনার মুখে কারখানা শ্রমিকবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে বাধ্য হন দেশি পোশাকশিল্প মালিকরা। এরই আলোকে একে একে গড়ে উঠছে সবুজ পোশাক কারখানা। তৈরি নিট পোশাক খাতে বিশ্বের নম্বর ওয়ান কারখানা প্লামি ফ্যাশন লিমিটেডের কর্ণধার হলেন ফজলুল হক। বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ক্রেতারা নৈতিক পোশাক চাইলেও মূল্য দেওয়ার কথা বললে তখন নৈতিকতা দেখায় না। এক কথায় ক্রেতারা কোনো ধরনের নৈতিক মান বজায় রাখে না।

সবুজ পোশাকশিল্প কারখানা হিসেবে বিশ্বে এখন দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রেমি হোল্ডিংস লিমিটেডের কর্ণধার বিজিএমএই সহসভাপতি মিরান আলী বলেন, ‘কিছু ক্রেতা নৈতিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করলেও অধিকাংশ নৈতিক মূল্য দেয় না। আমরা স্বচ্ছ ব্যবসা চাই। স্বচ্ছতা থাকলে পোশাক পণ্যের নৈতিক মূল্য চলে আসবে। ক্রেতারা যেমন নৈতিক পোশাক চায়, আমরাও তাদের নৈতিক আচরণ আশা করছি।’

এদিকে মহামারী করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকরা। এ খাতের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের পোশাক কারখানাসমূহ ব্যাপক অর্ডার বা ক্রয়াদেশ পেয়েছে। ফলে কিছুটা স্বস্তিতেই থাকার কথা স্বীকার করেছেন পোশাকশিল্প মালিকরা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৫১৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে মোট ২ হাজার ৮৫৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি। অনেক দিন পর নিট পোশাকের মতো ওভেন পোশাকের রপ্তানিও বেড়েছে। নিট পোশাকের রপ্তানি সাড়ে ২০ এবং ওভেন পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ১ দশমিক ৮০ শতাংশ।

সর্বশেষ খবর