বুধবার, ১৬ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

পাঁচ বিভাগে বেড়েছে সংক্রমণ কমেছে তিনটিতে

সর্বাধিক মৃত্যু রাজশাহী ও খুলনায়, ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ৩৩১৯, মৃত্যু ৫০

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঁচ বিভাগে বেড়েছে সংক্রমণ কমেছে তিনটিতে

এক দিনের ব্যবধানে গত ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, রংপুর, খুলনা ও সিলেট বিভাগে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আরও বেড়েছে। এর মধ্যে খুলনা বিভাগের মেহেরপুর জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৩ জনেরই পজিটিভ পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার প্রায় ৯৬ শতাংশ। তবে সংক্রমণ কিছুটা কমেছে ঢাকা, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণে দেশে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বোচ্চ ১৫ জন করে মারা গেছেন রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ হাজার ২৬৫টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ৩ হাজার ৩১৯ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যা দৈনিক শনাক্তের হিসাবে ৫৩ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। তবে এ সময়ে খুলনা বিভাগে শনাক্তের হার ছিল ৪০ দশমিক ৮২ শতাংশ, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এক দিনের ব্যবধানে খুলনা বিভাগে শনাক্তের হার বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি। সংক্রমণ বাড়া অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে ৩০ দশমিক ৭৭ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ১৭ দশমিক ১০ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ ও চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮ শতাংশ নমুনায় সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এক দিনের ব্যবধানে সংক্রমণ হ্রাস পাওয়া তিন বিভাগের মধ্যে রাজশাহীতে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল ১৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ, বরিশালে ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ ও ঢাকায় ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এদিকে খুলনা বিভাগের মেহেরপুরে গত ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ৯৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ মানুষের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া ঝিনাইদহে ৫৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যশোরে ৫২ দশমিক ২০ শতাংশ, সাতক্ষীরায় ৪৯ শতাংশ, চুয়াডাঙ্গায় ৪৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ ও বাগেরহাটে ৩৯ শতাংশ ছিল শনাক্তের হার। খুলনা বিভাগে সর্বনিম্ন শনাক্তের হার ছিল মাগুরা জেলায় ২৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা দেশের গড় শনাক্ত হারের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮ লাখ ৩৩ হাজার ২৯১ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৩ হাজার ২২২ জন। সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৭১ হাজার ৭৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০ জন পুরুষ ও ২০ জন নারী মারা গেছেন। হাসপাতালে ৪৮ জন ও বাড়িতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে ১৫ জন করে রাজশাহী ও খুলনা, ছয়জন করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম, তিনজন করে সিলেট ও ময়মনসিংহ এবং একজন করে বরিশাল ও রংপুর বিভাগে মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে ২৬ জনই ছিলেন ষাটোর্ধ্ব।

এদিকে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে লকডাউন এলাকা। তবে কাগজে-কলমে লকডাউন বা বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হলেও অধিকাংশ এলাকাতেই নেই তার বাস্তবায়ন। মানুষকে নির্দেশনা মানাতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। করোনা সংক্রমণ ও লকডাউন নিয়ে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও তথ্য-

গোপালগঞ্জ : গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যুসহ ৪৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৫৩ শতাংশ। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫৩টি নমুনার মধ্যে ৪৩ জন পজিটিভ পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার ৮১ শতাংশ। হঠাৎ করে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এদিকে, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার তেলিভিটা ও কালিভিটা গ্রামে সাতজনের শরীরের ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব মেলায় গ্রাম দুটিতে লকডাউন চলছে।

রাজশাহী : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে আটজন ছিলেন করোনা পজিটিভ, বাকিরা মারা যান উপসর্গ নিয়ে। এদিকে রামেক হাসপাতালে করোনায় মারা যাওয়াদের বেশির ভাগই ভারতের ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। ভর্তি রোগীদের ৪০ ভাগই গ্রামাঞ্চলের বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক। আগামী ১৭ জুন মধ্য রাত পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের দেওয়া লকডাউন চললেও মানুষ তা মানছে কমই। এ অবস্থায় লকডাউনের মেয়াদ আরেক দফা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৪৯ জনের। এর মধ্যে আরটিপিসিআর ল্যাবে ৯৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২২ শতাংশ। র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে  ৩১২ জনের  নমুনা পরীক্ষায় ২৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

দিনাজপুর : সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ায় দিনাজপুর সদর উপজেলায় গতকাল ভোর থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে, চলবে ২১ জুন পর্যন্ত। লকডাউনের কারণে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। লকডাউনে সব ধরনের যান চলাচল নিষিদ্ধ ও দোকানপাট বন্ধের ঘোষণা থাকলেও শহর ও আশপাশের সড়কে যান চলাচল প্রায় স্বাভাবিক ছিল। অনেক এলাকায় দোকানপাটও খোলা ছিল। মাস্ক ছাড়াই অনেককে চলাফেরা করতে দেখা গেছে। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার ৮৭টি রিপোর্টের মধ্যে ২৬টি পজিটিভ পাওয়া গেছে। শনাক্তের হার প্রায় ৩০ শতাংশ।

বাগেরহাট : গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় আরও ৫২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন একজন। তিন সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধের ২০তম দিনে এসেও গতকাল মোংলা উপজেলায় সাতজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৫০ শতাংশ। সংক্রমণ বেড়ে চলায় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি শেখ সারহান নাসের তন্ময়ের উদ্যোগে গতকাল থেকে দুটি গাড়িতে করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে র‌্যাপিট অ্যান্টিজেন পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ জন্য দুটি হটলাইন নম্বর (০১৯২০-৯২২২২৯ ও ০১৪০০-৩০৫৪০৫) চালু করা হয়েছে। এদিকে গতকাল মোংলা উপজেলা হাসপাতালে ১৫টি আইসোলেশন বেড, ১৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও দুটি অক্সিজেন জেনারেটরসহ অন্যান্য সুরক্ষাসামগ্রী প্রদান করেছে মোংলা ইপিজেডের ভারতীয় কোম্পানি ভিআইপি। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশীষ কুমার সাহা এগুলো হস্তান্তর করেন।

চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় গতকাল সকাল ৬টা থেকে টানা ১৪ দিনের লকডাউন শুরু হয়েছে। লকডাউন চলাকালে সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু যানবাহন চলাচল করলেও সেভাবে যাত্রী দেখা যায়নি। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা ছিল কম। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৭ দশমিক ১৬ শতাংশ। আগের দিন শনাক্তের হার ছিল ৪৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।

খুলনা : খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৮০০ জনের।

নাটোর : জেলায় করোনায় আরও চারজন মারা গেছে। এ নিয়ে জেলায় করোনায় ৩৮ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭১ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে ৬১ জন। শনাক্তের হার ৩৫ শতাংশের বেশি। জেলা প্রশাসন ঘোষিত বিশেষ লকডাউনেও কমছে না সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি।

সাতক্ষীরা : গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজন করোনা রোগী মারা গেছেন। এ ছাড়া ১৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯১ জনের করোনা ধরা পড়েছে। শনাক্তের হার ৪৯ শতাংশ। জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৫৫ জন ও উপসর্গ নিয়ে ২৪৮ জন মারা গেছেন। সংক্রমণ রোধে ৫ জুন থেকে দুই সপ্তাহের লকডাউন চলছে। বন্ধ রয়েছে খুলনা ও যশোর থেকে সাতক্ষীরায় প্রবেশের পথ। কিন্তু হাট-বাজারের সাধারণ মানুষ কোনোভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না।

সর্বশেষ খবর