বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

৫ হাজার কোটি টাকার পুনরর্থায়ন স্কিমে না বাংলাদেশ ব্যাংকের

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

৫ হাজার কোটি টাকার পুনরর্থায়ন স্কিমে না বাংলাদেশ ব্যাংকের

রপ্তানিমুখী জাহাজ নির্মাণ শিল্পে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনরর্থায়ন স্কিম চালুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অপারগতা প্রকাশ করে জানিয়ে দিয়েছে, কোনো খাতে বিদ্যমান ঋণ বা দায় পরিশোধের জন্য পুনরর্থায়ন স্কিম গঠনের নজির নেই। একটি ঋণের অর্থ দিয়ে অন্য একটি ঋণ পরিশোধ করা যাবে না। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পুনরর্থায়ন স্কিম সম্পর্কে এ ধরনের নেতিবাচক মত পাঠানো হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানান, রপ্তানিমুখী জাহাজ নির্মাণ শিল্প দেশের একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিবেচিত হলেও এ খাতের প্রথম প্রজন্মের কয়েকটি কোম্পানি উচ্চসুদে ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে। করোনা মহামারীর কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা দীর্ঘায়িত হওয়ায় এ শিল্পে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানানো হয়েছিল একটি পুনরর্থায়ন স্কিম গঠনের জন্য।

জানা গেছে, কভিড-১৯-এ ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উদ্যোক্তারা আবেদন করেও সেখান থেকে কোনোরূপ আর্থিক সহায়তা পাননি। এরই মধ্যে এ শিল্পের উদ্যোক্তারা ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা উচ্চসুদে ঋণ নিয়েছিলেন; সুদাসলে এখন ওই ঋণ ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকার দায় সৃষ্টি করেছে। সে দায় মেটাতে একটি পুনরর্থায়ন স্কিম চেয়ে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ

 অব বাংলাদেশ (এইওএসআইবি)। ওই চিঠিতে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ২০১০ সাল থেকে উচ্চসুদের ঋণের কারণে তাঁরা চরম আর্থিক সংকটে ভুগছেন। তা ছাড়া ২০০৮ সাল থেকে দীর্ঘ সময় ধরে চলমান বিশ্বমন্দার প্রভাবে ইউরোপীয় ক্রেতারা বেশ কিছু রপ্তানি কার্যাদেশ বাতিল করেছেন। এতে শীর্ষ রপ্তানিমুখী জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল পরিমাণ রপ্তানি মূল্য হারিয়েছে। এমনকি বেশ কিছু জাহাজ নির্মাণকাজ শেষ হলেও সেগুলো রপ্তানি করা সম্ভব হয়নি। করোনা মহামারীর কারণে নতুন করে কার্যাদেশ বাতিল হচ্ছে। এ অবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনরর্থায়ন স্কিম গঠনের আবেদন জানানো হয় ওই চিঠিতে। পরে ওই চিঠিকে রেফারেন্স ধরে পুনরর্থায়ন স্কিম গঠনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন চিঠিতে উল্লেখ করেন, গ্রাহকের অনুকূলে বিদ্যমান ঋণের দায় পরিশোধ বা সমন্বয় ঋণ শৃঙ্খলার পরিপন্থী। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ ধরনের একটি সার্কুলার জারি হয়েছে উল্লেখ করে জামাল উদ্দিন বলেন, ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী একটি ঋণের অর্থ দিয়ে পুরনো কোনো দায় পরিশোধ বা সমন্বয় করা যায় না। তবে জাহাজ নির্মাণ শিল্প উন্নয়ন নীতিমালায় এ শিল্পের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের বিষয়ে যে কথা বলা আছে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো আপত্তি নেই বলে উল্লেখ করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা। দেশে অর্ধশতাধিক শিপইয়ার্ড ও শতাধিক মেরিন ওয়ার্কশপ সক্রিয় রয়েছে, যার সঙ্গে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে ২০ লাখ লোক জড়িত। শিপইয়ার্ডের ৭০ শতাংশ ঢাকা এবং এর আশপাশে, ২০ শতাংশ চট্টগ্রামে এবং ১০ শতাংশ খুলনা ও বরিশালে অবস্থিত। দেশের চাহিদা পূরণ করে এসব শিপইয়ার্ড এখন বিদেশেও জাহাজ রপ্তানি করছে। দেশে আনুমানিক ১০ হাজার মেট্রিক টন ক্ষমতার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জাহাজ তৈরির প্রায় ১১টি শিপইয়ার্ড রয়েছে।

সর্বশেষ খবর