শুক্রবার, ১৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

গ্রীষ্মের অতিথি খয়রামাথা শুমচা

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

গ্রীষ্মের অতিথি খয়রামাথা শুমচা

গ্রীষ্মের পরিযায়ী পাখি খয়রামাথা শুমচা। দেখতে খুবই দৃষ্টিনন্দন। এই পাখির শরীরে রয়েছে নানান রঙের সমাহার। দেখলে মনে হয়, বিধাতা যেন নিজ হাতে এই পাখিটিকে রাঙিয়ে দিয়েছেন। লাল, কালো, খয়েরি, নীল, সবুজ, সাদা এ যেন একই অঙ্গে অনেক রং। এই পাখিরা যখন আকাশে উড়ে বেড়ায় তখন মনে হয় চারদিকে রংধনুর সাতরং ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রীষ্মকালে এরা আমাদের দেশে মাত্র কয়েক মাসের জন্য অতিথি হয়ে আসে। পুরো বর্ষাকাল কাটিয়ে আবার চলে যায় অন্য কোনো বর্ষা প্রবল অঞ্চলে। এরা ভারত নেপাল ও শ্রীলঙ্কা থেকে আমাদের দেশে আসে। এ সময়টা তাদের প্রজনন কাল। এরা খুব লাজুক ও নিভৃতচারী। মানুষের উপস্থিতি টের পেলেই তারা নিজেকে পাতার ফাঁকে কিংবা ডালে আড়াল করে নেয়। যার কারণে এদের খুব একটা দেখা যায় না। গত ৬ জুনে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে দুর্লভ এই পাখির ছবি তুলেছেন নেচার অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন কমিউনিটি ফটোগ্রাফার এহসান আলী বিশ্বাস। পাখি  বিশারদরা জানান, খয়রামাথা শুমচা পাখির ইংরেজি নাম Hooded pitta. আর বৈজ্ঞানিক নাম Pitta sordida. এরা পিটিডি গোত্রের এক ধরনের ছোট পাখি। পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় পিট্টির ছয়টি প্রজাতি রয়েছে। আর আমাদের দেশে রয়েছে পাঁচ প্রজাতি। এর মধ্য তিন প্রজাতি আমাদের আবাসিক। খয়রামাথা শুমচা পরিযায়ী। এই পাখির শরীরে কয়েক রঙের মিশ্রণ রয়েছে। অঞ্চল ভেদে এরা হালতি, রুমালমাথা শুমচা এবং নীল ফক্কি নামেও পরিচিত। পেটের নিচ গাঢ় লাল। বুক-পেট সবুজ। মাথাটা কালো। মাথার ওপরের অংশ গাঢ় খয়েরি। ঘাড়-গলা কালো। চোখ কালচে বাদামি। ডানার ওপরের অংশ হালকা নীল। পিঠে নীল সবুজের মিশ্রণ। এরা গাছের মাঝামাঝি অংশে বাসা বাঁধে। ডিম দেয় ৪ থেকে ৫টি। স্ত্রী-পুরুষ পাখি উভয়ে মিলে ডিমে তা দেয়। সাধারণত মাটিতে ঝোপে জঙ্গলে বিচরণ করে কীটপতঙ্গ জাতীয় খাবার খায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘খয়রামাথা শুমার সংখ্যা এখনো ভালোই আছে। এরা আমাদের দেশে গ্রীষ্মের পরিযায়ী পাখি। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে এদের দেখা যায়। চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। বর্ষা শেষে আবার চলে যায়। এই পাখিকে প্রকৃতিতে টিকিয়ে রাখতে হলে এদের আবাসস্থল টিকিয়ে রাখতে হবে।’

সর্বশেষ খবর