রবিবার, ২০ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে একঘরে কর

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবে আহ্বান

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ গত শুক্রবার রাতে গৃহীত এক প্রস্তাবে মিয়ানমারে ক্ষমতা জবরদখলকারী সামরিক জান্তাকে একঘরে করার জন্য গণতান্ত্রিক বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘের ১১৯টি সদস্য রাষ্ট্র প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। বিপক্ষে ভোট পড়ে মাত্র ১টি। ভোটদানে বিরত ছিল ৩৭টি দেশ। ভোটের সময় অনুপস্থিত ছিলেন ৩৬টি দেশের প্রতিনিধি। প্রস্তাবে সামরিক শাসনের দ্রুত অবসান ও গ্রেফতার নরনারীর নিঃশর্ত মুক্তি এবং আন্দোলনরতদের হত্যা বন্ধের সামরিক জান্তার কঠোর এবং তিরস্কারের পর ওদেরকে একঘরে করার উদাত্ত আহবান জানানো হয়। শুধু তাই নয়, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের ওপর জোর দিয়ে বলা হয়, সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশটির বিরাট একটি জনগোষ্ঠীকে নিদারুণ অর্থ-কষ্টে নিপতিত করা হয়েছে। খাদ্যাভাবে পড়া লোকজনকে সাহায্য-সহযোগিতাও করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রস্তাবে এই অমানবিক পদক্ষেপ বন্ধের অনুরোধও জানানো হয়েছে।

কূটনীতিকরা মনে করেন, প্রস্তাবটি সর্বসম্মত না হওয়ায় মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নিন্দা এবং বর্জনের জন্যে যে কঠোর সিদ্ধান্তের প্রত্যাশা করা হয়েছিল সেটি পূরণ হয়নি। তবে ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে এটি একটি জোরালো বার্তা। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের একটি অগ্রগতি বলেই মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, প্রস্তাবের পক্ষে ভোটদাতাদের মধ্যে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি কিয়াও মো টুনও রয়েছেন। তিনি সামরিক জান্তার পক্ষে নির্দেশ অনুযায়ী পদত্যাগ না করে অভ্যুত্থানের ভিকটিম সরকারের পক্ষেই কাজ করছেন। রেজ্যুলেশনের বিপক্ষে একমাত্র ভোট দিয়েছে বেলারুশ। ভোটের সময় অনুপস্থিত রাষ্ট্রের প্রতিনিধির মধ্যে চীনও ছিল। জানা গেছে, গণতান্ত্রিক বিশ্বের তিরস্কারের মুখে পড়ার আশঙ্কায় চীন ভোটের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

পাঁচ বছর কার্যকালের প্রথম মেয়াদ শেষে শুক্রবারই দ্বিতীয় মেয়াদের জন্যে পুনরায় নির্বাচিত মহাসচিব এ্যান্তোনিয়ো গুতেরেজ মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট অচলাবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে সাধারণ পরিষদে উপরোক্ত প্রস্তাবের প্রাক্কালে বলেছেন, ‘আমরা এমন একটি বিশ্বে অবস্থান করতে চাই না যেখানে সামরিক অভ্যুত্থান একটি স্বাভাবিক ব্যাপার বলে মনে হতে পারে। এমন অবস্থা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’ প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার পর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের জাতিসংঘস্থ প্রতিনিধি দলের ওলোফ স্কুজ। তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবটি খুবই কঠিন ও জোরদার বার্তা দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে। সামরিক শাসকের অগ্রহণযোগ্যতা এবং গণতান্ত্রিক চেতনায় উজ্জীবিতদের নির্যাতনের প্রতিবাদ ছাড়াও আন্দোলনরতদের দমনের নামে নৃশংসতার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এই প্রস্তাবের মধ্যদিয়ে। শুধু তাই নয়, সামরিক জান্তাকে বর্জনের স্পষ্ট ঘোষণাও রয়েছে প্রস্তাবে।’ রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে বর্বরোচিত হামলার মাধ্যমে গৃহত্যাগে বাধ্য করার মধ্যদিয়ে বিগত বছরগুলোতে মিয়ানমারে চলমান সামাজিক অস্থিরতার সুযোগে গণতন্ত্রে পরিপূর্ণভাবে ফেরার সময়েই আবারও সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে মিয়ানমারে।  ইতিহাসবিদরা বলেছেন, শীতল যুদ্ধের পর এটি হচ্ছে চতুর্থ প্রস্তাব যেখানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কোনো দেশের সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা এবং সামরিক জান্তাকে একঘরে করার ডাক দিয়েছে। অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানানোর প্রস্তাব এই প্রথম করলো জাতিসংঘ। প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকলেও সামরিক জান্তার প্রতি এটি চপেটাঘাতের সামিল। বিশেষ করে সামরিক আইনের আড়ালে সেনা শাসকরা দায়বদ্ধতার ঊর্ধ্বে থাকার যে ঘোষণা দিয়েছে, সেটিও এখন অকার্যকর হয়ে পড়বে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিন্দা, প্রতিবাদ আর ভর্ৎসনার কারণে। এমন সমালোচনা ও তিরস্কারের ফলে সামরিক জান্তা অবাধে সবকিছু চালিয়ে  যেতে সক্ষম হবে না। প্রস্তাবে অবিলম্বে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার, মিয়ানমারের নাগরিকদের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানানো এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিতদের ক্ষমতা গ্রহণের পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানানো হয়েছে। অং সান সু চীসহ প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট এবং অন্য রাজনীতিকদের বিনাশর্তে মুক্তির দাবি ছাড়াও অকারণে আটকদের মুক্তি এবং জারিকৃত গ্রেফতারি পরোয়ানা অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর