বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
কদমতলীতে ট্রিপল মার্ডার

মেহজাবিন একাই খুনি মানতে নারাজ পরিবার

আলী আজম

রাজধানীর কদমতলীতে বাবা, মা ও ছোট বোনকে হত্যায় রিমান্ডে রয়েছেন মেহজাবিন ইসলাম মুন। এ মামলায় অন্যতম আসামি মেহজাবিনের স্বামী মো. শফিকুল ইসলাম অরন্যকেও রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ডে এ হত্যাকান্ডের দায় একাই নিজের কাঁধে নিয়েছেন মেহজাবিন। পুলিশ এখনো তার স্বামী শফিকুলের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি। তবে মেহজাবিনের পরিবার তা মানতে চাচ্ছে না। তারা বলছে, মেহজাবিন একা নন, ঘটনায় তার স্বামী শফিকুলও রয়েছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবারটির সদস্যদের মধ্যে জটিলতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। বড় মেয়ে মেহজাবিনের বিয়ের আগে আমিনুল ইসলাম নামে এক যুবক তাকে প্রাইভেট পড়াতেন। ওই সময় ছাত্রীর সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে ওই গৃহশিক্ষক সুযোগ পেয়ে ছাত্রীর মা মৌসুমীর সঙ্গেও অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। দু’জনের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্কের ভিডিও করে রেখেছিলেন আমিনুল।

সেটি হয়ে ওঠে তার হাতিয়ার। ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে তিনি মা-মেয়েকে জিম্মি করে অনৈতিক সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এমনকি তিনি মেহজাবিনের ছোট বোন জান্নাতুল ইসলাম মোহনী ও তার এক আত্মীয়ের সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। পরিবারে গৃহশিক্ষক আমিনুলের সঙ্গে মা ও দুই মেয়ের জটিলতাপূর্ণ সম্পর্ক একপর্যায়ে মেহজাবিনকে শফিকুলের সঙ্গে বিয়ে দেন মা মৌসুমী।

এতে ক্ষিপ্ত হন অবাধ যৌনতার সুবিধাভোগী গৃহশিক্ষক আমিনুল। তিনি ছাত্রী মেহজাবিনের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও তার স্বামী শফিকুলকে দেখান। এতে মেহজাবিনের সংসারে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। পরিস্থিতিতে মা মৌসুমীও তখন আমিনুলের ওপর বিরক্ত হতে থাকেন। পরে মেহজাবিন, তার মা মৌসুমী এবং ছোট বোন মোহনীর সঙ্গে আমিনুলের অবাধ যৌনতা এবং মোবাইলে ধারণ করা গোপন ভিডিও ধ্বংস করতে পরিকল্পনা করা হয়। এরপর মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল, মা মৌসুমী এবং খালা শিউলী আক্তার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গৃহশিক্ষক আমিনুলকে বাসায় ডেকে এনে ২০১৬ সালে খুন করেন।

ওই ঘটনায় মেহজাবিনকে আসামি করা হলেও তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায়নি ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। যে কারণে মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল, তার মা মৌসুমী এবং তার খালা শিউলীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা। ওই মামলায় তারা তিনজন দীর্ঘদিন জেল-হাজতে থেকে জামিনে বেরিয়ে আসেন।

প্রসঙ্গত, গত ১৯ জুন সকালে কদমতলীর মুরাদপুর হাজী লালমিয়া সরকার রোডের ২৭৪/১ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে মাসুদ রানা (৫০), তার স্ত্রী মৌসুমী ইসলাম (৪০) ও মেয়ে জান্নাতুল ইসলাম মোহনীর (২০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অচেতন অবস্থায় মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল ও মেয়ে তৃপ্তিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় নিহত মাসুদের বড় ভাই মো. সাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে কদমতলী থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় মেহজাবিন ও তার স্বামী শফিকুলকে আসামি করা হয়। বর্তমানে ওই মামলায় রবিবার মেহজাবিনের চার দিনের এবং সোমবার শফিকুলের তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। মামলাটি তদন্ত করছেন কদমতলী থানার পরিদর্শক জাকির হোসাইন।

মামলার বাদী নিহত মাসুদ রানার বড় ভাই মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মাসুদ রানার টাকাপয়সা ও সম্পত্তি ভোগ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এ খুন করেছে শফিকুল। এছাড়া তিনি তার শ্যালিকা মোহনীর সঙ্গে জোরপূর্বক অবৈধ সম্পর্কে গড়ে তুলেছিলেন। মেহজাবিনের একার পক্ষে বাবা-মা-বোনকে হত্যা করা সম্ভব নয়। এটা শফিকুল করেছে। তাকে মেহজাবিন সহযোগিতা করতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০১৬ সালে শফিকুলের পরিকল্পনায় খুন হন মেহজাবিনের গৃহশিক্ষক আমিনুল। শফিকুল তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এ খুনে মেহজাবিন জড়িত ছিল না। শ্বশুর-শাশুড়ি ও শ্যালিকাকে খুন করে টাকাপয়সা ও সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে শফিকুল এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে।’

ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বাবা মাসুদ রানার দ্বিতীয় বিয়ে, মা মৌসুমীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষোভ এবং ছোট বোন মোহনীর সঙ্গে মেহজাবিনের স্বামী শফিকুলের অনৈতিক সম্পর্কের কারণে মেহজাবিন ক্ষুব্ধ হয়। এই ক্ষোভ থেকেই তিনজনকে একাই খুন করেছে বলে জানাচ্ছে মেহজাবিন।

এদিকে, মেহজাবিনের স্বামী শফিকুলের হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ। তবে এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের পেছনে কি কি কারণ রয়েছে তা জানার চেষ্টা করছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর