সোমবার, ২৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

এক দিনে সর্বোচ্চ ১১৯ মৃত্যুর রেকর্ড

উপসর্গ নিয়েও হাসপাতাল ও বাড়িতে মারা যাচ্ছে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক দিনে সর্বোচ্চ ১১৯ মৃত্যুর রেকর্ড

করোনাভাইরাস সংক্রমণে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১৯ জনের মৃত্যু দেখল দেশ। মহামারীকালে বাংলাদেশে এক দিনে এটাই সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে ভাইরাসটির কারণে সরকারি হিসাবেই প্রাণ গেছে ৬২৪ জনের। মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ১৭২ জনে। এ ছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ও বাড়িতে প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে অনেকের, যাদের বড় অংশেরই নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে না। এর আগে গত ১৯ এপ্রিল এক দিনে ১১২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর, যা ছিল গত শনিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। ২০২০ সালেও সর্বোচ্চ মৃত্যুর খবর এসেছিল জুন মাসে। ওই বছরের ৩০ জুন ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর, যা ছিল ২০২০ সালে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ হাজার ৪০০টি নমুনা পরীক্ষায় ৫ হাজার ২৬৮ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২১.৫৯ শতাংশ। গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪০৬ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৪ হাজার ১৭২ জন। সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৪ হাজার ১০৩ জন। গত এক দিনে মারা যাওয়া ১১৯ জনের মধ্যে ৭৫ জন ছিলেন পুরুষ ও ৪৪ জন নারী। হাসপাতালে ১১৩ জন ও বাড়িতে চারজন মারা গেছেন। দুজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে। এ ছাড়া ২৪ জন ঢাকা, ২২ জন চট্টগ্রাম, ২২ জন রাজশাহী, দুজন বরিশাল, পাঁচজন সিলেট, নয়জন রংপুর ও তিনজন ময়মনসিংহ বিভাগে মারা গেছেন। বয়স বিবেচনায় মৃতদের মধ্যে ৫৯ জন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব, ৩৪ জন পঞ্চাশোর্ধ্ব, ১১ জন চল্লিশোর্ধ্ব, নয়জন ত্রিশোর্ধ্ব ও ছয়জনের বয়স ছিল ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। শুধু সর্বাধিক মৃত্যু নয়, আগের দিনের ধারাবাহিকতায় গত ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় সর্বোচ্চ শনাক্তের হারও ছিল খুলনা বিভাগে। গত এক দিনে বিভাগভিত্তিক শনাক্তের হার ছিল যথাক্রমে খুলনায় ৪১.৪১ শতাংশ, রংপুরে ৩৭ শতাংশ, বরিশালে ৩২.১২ শতাংশ, ময়মনসিংহে ২৮.১৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ২১.১২ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৮.৬৯ শতাংশ, সিলেটে ১৬.২৬ শতাংশ ও ঢাকায় ১৪.৮৭ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদন্ড অনুযায়ী, কোনো দেশে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্ত ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। সেখানে বাংলাদেশে গত ৪ জুন থেকে শনাক্তের হার ১০ শতাংশের ওপরে রয়েছে। গত তিন দিন ধরে রয়েছে ২১ শতাংশের ওপরে। এবার মূলত ঈদুল ফিতরের পর থেকেই শুরু হয় করোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। ভারত সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের জেলায়। ১ জুন যেখানে ২৪ ঘণ্টায় ৪১ জনের মৃত্যু ও ১ হাজার ৭৬৫ জনের করোনা শনাক্তের তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর, সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৯ জনের মৃত্যু ও ৫ হাজারের বেশি রোগী শনাক্তের খবর জানানো হয়। ১৪ থেকে ২০ জুন নমুনা পরীক্ষা ও রোগী শনাক্তের হার বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাপ্তাহিক রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪০টিই সংক্রমণের অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। করোনা সংক্রমণ নিয়ে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও তথ্য-

চট্টগ্রাম : করোনা রোগী শনাক্তে গত দেড় বছরের রেকর্ড ভেঙেছে চট্টগ্রাম। গত শনিবার এক দিনেই নতুন করে ৩০০ জনের করোনা শনাক্ত হয় এবং মারা যান সাতজন। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, এক দিনে ৩০০ জনের করোনা শনাক্ত চট্টগ্রামের জন্য সর্বোচ্চ রেকর্ড। সিলেট : সিলেটের একমাত্র কভিড ডেডিকেটেড ‘শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে’ ঠাঁই মিলছে না রোগীর। আইসিইউ ইউনিটের বেডের জন্য চলছে হাহাকার। সিট খালি না থাকায় অতিরিক্ত শ্বাসকষ্টের রোগীদেরও ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে করোনায় মারা গেছেন পাঁচজন। ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা  ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় দুই করোনা রোগী ও উপসর্গ নিয়ে আটজন মারা গেছেন। এ ছাড়া ৪৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ১২৯ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহী : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে একজন পজিটিভ ছিলেন। অন্যরা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এ নিয়ে চলতি মাসে রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৩০৪ জনের মৃত্যু হলো। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৫ জন। ৩৫৭টি শয্যার বিপরীতে গতকাল সকাল পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি ছিলেন সর্বোচ্চ ৪৩৪ জন।

খুলনা : গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে বিভাগে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২০২ জন। গতকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫২ হাজার ১৬৭ জন। আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৮১ জনে।

চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় নয়জন মারা গেছেন। এর মধ্যে দুইজন করোনা পজিটিভ ছিলেন। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। ২৪ ঘণ্টায় ২৫৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০৬ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪১.২৪ শতাংশ।

গাজীপুর : গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮৩ জনের। এ নিয়ে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৪০৬ জনে।

বগুড়া : গত ২৪ ঘণ্টায় বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে তিন নারীসহ চারজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ২৪ ঘণ্টায় ৩২২ নমুনার ফলাফলে নতুন করে ১০১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩১.৩৬ শতাংশ। জেলায় মোট মারা গেছেন ৩৭৫ জন।

দিনাজপুর : গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬১ জনে। ২৪ ঘণ্টায় ১৭০টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৩ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৭.০৫ শতাংশ।

বাগেরহাট : গত ২৪ ঘণ্টায় বাগেরহাটে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৭৯ জনে। নতুন করে ৪১২টি নমুনা পরীক্ষায় ১৭৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪২.৯৬ শতাংশ।

সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার উপসর্গ নিয়ে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ২৮২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৫.১০ শতাংশ।

টাঙ্গাইল : গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯৩টি নমুনা পরীক্ষায় ১০১টি করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৪.৪৭ শতাংশ। এই সময়ে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় মারা গেছেন ১০৮ জন।

গোপালগঞ্জ : এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার শতকরা ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া জেলায় মোট ২৫ হাজার ৫১০ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ৬৬৯ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের। আর সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৮ জন।

কুমিল্লা : গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৫.১২ শতাংশ। এই সময় লালমাই উপজেলার এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট মারা গেছেন ৪৭০ জন।

সর্বশেষ খবর