সোমবার, ২৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

বিনিয়োগ ধরতে তিন স্তরের পরিকল্পনা

মানিক মুনতাসির

বিনিয়োগ ধরতে তিন স্তরের পরিকল্পনা

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ধরতে তিন স্তরের পরিকল্পনা করেছে সরকার। মেগা প্রকল্পসহ চলমান অবকাঠামো উন্নয়নের কাজে আরও গতি আনা হবে। করোনা পরিস্থিতি বর্তমানের চেয়ে আরও খারাপ হলেও অতীতের মতোই স্বাস্থ্যবিধি মেনে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকবে। ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে ওয়ান স্টপ সার্ভিসসহ চলতি উদ্যোগগুলো আরও জোরদার করা হবে। সর্বোপরি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব আইনি বাধা রয়েছে সেগুলো দূর করা হবে। এ জন্য কয়েকটি আইন সংশোধন ও নতুন কিছু আইন তৈরির কাজ শুরু করেছে সরকার। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে বলেছেন, অর্থ পাচার রোধ এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে আগামী এক বছরের মধ্যে ১৫টি আইন করা হবে। অদক্ষ ব্যবস্থাপনাকে দক্ষ করা, ইনঅ্যাফেকটিভ ম্যানেজমেন্টকে অ্যাফেকটিভি করতে আমরা সংস্কারমুখী কাজ করব। নতুন নতুন আইন করব। কিছু আইন সংস্কার করা হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে দায় নিয়ে কাজ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করে দেব। কোনো টলারেন্স নেই এখানে। টাকা এখন দেশে আসে। পাচার বন্ধ হলে এবং পাচারের অর্থ ফিরিয়ে আনতে পারলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা ও কর্মসংস্থান ধরে রাখাই অর্থনীতির জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য সরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে করোনায় সৃষ্ট নতুন বেকারদের কাজের সুযোগ করে দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতের কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পলিসিগত সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন যে অবস্থা তাতে যদি ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ হয় তাহলে কর্মসংস্থান হবে। কর্মসংস্থান হলে মানুষের আয় বাড়বে। এটার ওপর বিনিয়োগের চিত্রটা দেখুন-এখানে দুটো সূচক আছে-একটা হলো যন্ত্রপাতির আমদানি আর অন্যটা ব্যক্তি খাতের ঋণপ্রবাহ। দুটোই তো খুবই দুর্বল। যন্ত্রপাতি আমদানি তো বেশ নেগেটিভ ছিল। এখন সেটা সামান্য কমেছে। আর ব্যক্তি খাতের ঋণপ্রবাহ অব্যাহতভাবে কমছেই। অথচ বহির্বিশ্বের অর্থনীতি কিন্তু বেশ ভালোভাবেই রিকোভারি করছে। তাদের অবস্থাও খুব খারাপ ছিল। সরকারের এখন এসব জায়গায় কাজ করতে হবে। যে কোনো মূল্যে মানুষের কাজ ধরে রাখতে হবে। অন্যদিকে নতুন কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন, বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে দেশে ও বিদেশে সেমিনার-ওয়ার্কশপ, রোড শো এবং ট্রেড শোর আয়োজন ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা হচ্ছে। এসব আয়োজনের মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগকারী চিহ্নিত করে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা হবে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের উন্নতিকল্পে সরকার অবকাঠামোসহ অন্যান্য নীতিগত সহায়তা প্রদানে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও তার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে আনুমানিক ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে। ইতিমধ্যে ৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদন এবং ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে উন্নয়ন কাজ চলছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে এ পর্যন্ত ২১০ জন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে ২৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। যার মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। কোন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ কতটা উন্নত তা বোঝাতে বিশ্বব্যাংকের ‘ডুয়িং বিজনেস’ সূচক বিবেচনায় নেওয়া হয়। ২০১৯ সালে ওই ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬ থেকে ১৬৮-তে উন্নীত হয়েছে এবং ব্যবসার বিভিন্ন সূচক উন্নয়নে বিশ্বের সর্বোচ্চ ২০টি সংস্কারকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ওই ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান দুই অঙ্কে অর্থাৎ ১০০-এর নিচে নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিডা কর্তৃক বিশেষায়িত দল গঠন করে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। বিনিয়োগ সংক্রান্ত সব সেবা সমন্বিত করে একই প্ল্যাটফরম হতে প্রদানের জন্য ২০১৯ সাল থেকে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার বিনিয়োগসংক্রান্ত সেবাসমূহ ওই পোর্টালে পর্যায়ক্রমে যুক্ত করা হচ্ছে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস পোর্টালের মাধ্যমে ৩৫টি সংস্থার ১৫৪টি বিনিয়োগ সেবা অনলাইনে দেওয়ার ১২টি প্রতিষ্ঠানের সর্বমোট ৪২টি সেবা অনলাইনে প্রদান করা হচ্ছে। আসছে নতুন অর্থবছরে এসব কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।

সর্বশেষ খবর