সোমবার, ২৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

কুয়াকাটায় ধসে পড়ল নির্মাণাধীন সেতু

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

কুয়াকাটায় ধসে পড়ল নির্মাণাধীন সেতু

পটুয়াখালীর কুয়াকাটার দোভাষীপাড়ায় নির্মাণাধীন দৃষ্টিনন্দন আট ব্রিজ বিকট শব্দে ভেঙে খালে পড়ে গেছে। রবিবার ভোর ৫টার দিকে কুয়াকাটা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দোভাষীপাড়া খালের ওপর নির্মিত গার্ডারের ওপরের স্লাব ভেঙে খালে পড়ে যায়। দুর্ঘটনার পরপরই নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা পালিয়ে যান। এর ফলে দুই ইউনিয়নের সঙ্গে কুয়াকাটা পৌরসভার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েছে এ অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, কুয়াকাটা পৌরসভার সঙ্গে লতাচাপলী ইউনিয়নের নিবিড় যোগাযোগের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ একটি দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। কুয়াকাটা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ২০ মিটার দৈর্ঘের ব্রিজটি ২ কোটি ২৬ লাখ ১৫ হাজার ৮৮৩ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি) অর্থায়নে কুয়াকাটা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পৌরসভার দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি শুরু করে। সেতুর প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ পর্যায়ে ছিল। ভেঙে পড়া স্লাবের ৪৬ লাখ টাকার বিল সম্প্রতি তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার। দৃষ্টিনন্দন আট ব্রিজটি ২০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫.৫ মিটার প্রস্থের দুই গার্ডারের ওপর বসানো স্লাবের আড়াআড়ি ভেঙে পড়ে। চলতি মাসে অর্থাৎ ২০২১ সালের জুন মাসে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কুয়াকাটা পৌর কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন পৌর কর্তৃপক্ষ। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানান, সেতুর স্থানে একটি লোহার পুল ছিল। সেই পুলটি ভেঙে গিয়ে দীর্ঘদিন পড়ে ছিল। সেখানে গার্ডার ব্রিজের কাজ চলছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সৈয়দ মো. সোহেল অ্যান্ড দ্বীপ এন্টারপ্রাইজের (জেবি) নামে কাজ দেওয়া হলেও মুলত মামুন নামে এক ঠিকাদার কাজটি দেখাশোনা করত। এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক পটুয়াখালীর টাউন কালিকাপুরের জাহাঙ্গির ও সৈয়দ সোহেল। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুটির নির্মাণকাজের শুরু থেকেই নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী, সিমেন্ট কম ব্যবহারসহ ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী কাজ না করার কারণে এমনটি হয়েছে। নির্মাণকাজ নিয়ে বিভিন্ন সময় স্থানীয়রা প্রকৌশলী ও পৌর মেয়রের কাছে অভিযোগ করে এলেও তারা এতে কর্ণপাত করেননি। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় গোটা কাজ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। তারা আরও জানান, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করার কারণে সেতুটি ভেফু পড়েছে।

এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুজ্জামান জানান, ব্রিজ ভেঙে পড়ায় ইতিমধ্যেই ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে মামলাও করা হবে। সদ্য কুয়াকাটা পৌরসভায় যোগদান করায় সেতুর নির্মাণকাজের বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই। তিনি বলেন, কি কারণে সেতুটি ভেঙে পড়েছে তা তদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কুয়াকাটা পৌর মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সেতুর নির্মাণকাজ চলমান ছিল। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই কেন সেতুটি ভেঙে পড়েছে তা বলতে পারবেন এ প্রকল্পের প্রকৌশলীরা। তাদের এ বিষয়ে জবাবদিহিতার জন্য বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ খবর