মঙ্গলবার, ২৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

রাতের আলোয় ঝলমলে কান্তজিউ মন্দির

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

রাতের আলোয় ঝলমলে কান্তজিউ মন্দির

দৃষ্টিনন্দন ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দির করোনার কারণে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকায় এখন পর্যটকশূন্য। অথচ ২-৩ মাস আগে এই করোনার মধ্যেও পর্যটকদের ভিড় দেখা যায়। পর্যটকশূন্য হলেও রাতের আঁধার নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে আলোকরশ্মি যেন স্থাপনাটিকে নতুন যৌবন দেয়। প্রাচীন এ মন্দির তখন হয়ে ওঠে চোখ জুড়ানো দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য। দিনের চেয়ে রাতের আলোয় আরও বেশি ঝলমল এবং উজ্জ্বল হয়ে ওঠে এ মন্দির। বিস্ময় জাগানো কান্তজিউ মন্দিরকে ঘিরে পর্যটন এলাকা গড়ে তুলতে দিনাজপুর শহর থেকে মন্দিরে যেতে ঢেপা নদীর ওপর হয়েছে ব্রিজ। পূর্বে দর্শনার্থী বা পর্যটকদের সেখানে থাকার কোনো পরিবেশ ছিল না। সে কারণে মন্দিরের পাশেই নির্মাণ হয়েছে পর্যটন মোটেলের রেস্ট হাউস। দর্শনার্থীদের ইতিহাস-ঐতিহ্য জানতে নির্মাণ হয়েছে মিউজিয়াম। কেনাকাটার সুবিধার্থে হয়েছে রকমারি মার্কেট। প্রবেশদ্বারে স্থাপন হয়েছে তেভাগা আন্দোলনের সিদু-কানু স্মৃতিস্তম্ভ। আশপাশের রাস্তাও উন্নয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়াও পাশের শিবমন্দির ও রাজবেদি সংস্কার করে আমূল পরিবর্তনও আনা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপালের নিবিড় তত্ত্বাবধানে ওইসব সংস্কার ও উন্নয়ন হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান। করোনার কারণে জনসমাগমের জায়গাটি এখন জনশূন্য।

দিনাজপুর জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং কাহারোল উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটা দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নে দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেপা নদীর তীরে কান্তনগর এলাকায় প্রাচীন টেরাকোটার অনন্য নিদর্শন কান্তজিউ মন্দির অবস্থিত। কালিয়াকান্ত জিউ অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহ অধিষ্ঠানের জন্য মন্দির নির্মিত হয় বলেই এই মন্দিরের নাম কান্তজিউ মন্দির। একটি বর্গাকার বেদির ওপর এ মন্দির নির্মিত। কথিত রয়েছে, মহাভারতে বর্ণিত বিরাট রাজার গো-শালা ছিল এখানে। মন্দিরটি যেখানে তৈরি হয়েছে সেটি একটি প্রাচীন স্থান এবং প্রাচীন দেয়ালঘেরা দুর্গ নগরীরই একটি অংশ। প্রায় ১ মিটার (৩ ফুট) উঁচু এবং প্রায় ১৮ মিটার (৬০ ফুট) বাহুবিশিষ্ট প্রস্তর নির্মিত একটি বর্গাকার বেদির ওপর এই মন্দির নির্মিত। কান্তজিউ মন্দিরের কেয়ারটেকার আপন রায় জানান, করোনায় লকডাউনের কারণে গত ২ মাস ধরে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। শুধু পূজা-অর্চনা ছাড়া সব বন্ধ রয়েছে। উল্লেখ্য, বেদির পাথরগুলো আনা হয়েছিল প্রাচীন বানগড় (কোটিবর্ষ দেবকোট) নগরের ভেঙে যাওয়া প্রাচীন মন্দিরগুলো থেকে। পাথরের ভিত্তি বেদির ওপর মন্দিরটি ইটের তৈরি। বর্গাকারে নির্মিত মন্দিরের প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬ মিটার (৫২ ফুট)। মন্দিরের চারদিকে রয়েছে বারান্দা। প্রত্যেক বারান্দার সামনে দুটি করে স্তম্ভ। স্তম্ভগুলো বিরাট আকারের এবং ইটের তৈরি। স্তম্ভ ও পাশের দেয়ালের সাহায্যে প্রত্যেকটি দিকে ৩টি করে বিরাট খোলা দরজা রয়েছে। বারান্দার পরই মন্দিরের কামরাগুলো। একটি প্রধান কামরার চারদিকে রয়েছে কয়েকটি ছোট কামরা। তিন তলাবিশিষ্ট এই মন্দিরের ৯টি চূড়া বা রত্ন ছিল। এ জন্য এটিকে নবরত্ন মন্দির বলা হয়ে থাকে। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ভূমিকম্পে মন্দিরের চূড়াগুলো ভেঙে গেছে। মন্দিরের উচ্চতা ৭০ ফুট। মন্দিরের সঙ্গে রয়েছে তমাল বৃক্ষ। এই বৃক্ষে সুতা বেঁধে বিশেষ করে নারীরা বিভিন্ন প্রকার মানত করে থাকে। প্রচলিত রয়েছে মানত করলে তা পূরণ হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর