বৃহস্পতিবার, ১ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

সমাধান শুধু টিকাতেই

টিকা দিয়ে করোনা থেকে মুক্তি মিলছে উন্নত দেশগুলোর, টিকা নিশ্চিত করতে জোর দেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

জয়শ্রী ভাদুড়ী

করোনাভাইরাসের থাবায় বিশ্বে এ পর্যন্ত ৩৯ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। করোনা থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত টিকা কর্মসূচি শুরু করে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে উন্নত দেশগুলো। স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে মানুষ, সচল হচ্ছে অর্থনীতির চাকা। তাই করোনা নিয়ন্ত্রণে যত দ্রুত সম্ভব বেশিসংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়ায় জোর দেওয়া হচ্ছে। টিকাতেই সমাধানের পথ খুঁজছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উন্নত বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে টিকাদান কর্মসূচি অনেকটাই এগিয়ে নিয়েছে। উন্নত দেশগুলোয় প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ টিকা পেয়েছে। সেখানে সংক্রমণ নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়। মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে। অনেকেই গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। গতি ফিরে পাচ্ছে অর্থনীতি। করোনার ধাক্কা সামলে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রে চালু হচ্ছে ক্লাব-রেস্টুরেন্ট। মাস্ক ছাড়াই রাস্তা, গণপরিবহনে যাতায়াতের অনুমতি দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। তাই করোনা নিয়ন্ত্রণে টিকা কর্মসূচিতে জোর দেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর সূত্র জানান, এখন পর্যন্ত কোভ্যাক্স থেকে এসেছে ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ, ভারত উপহার দিয়েছে ৩২ লাখ ডোজ, ভারতের সেরাম থেকে কেনা ৩ কোটি টিকার মধ্যে এসেছে ৭০ লাখ ডোজ এবং চীনের দুই দফার উপহার হিসেবে এসেছে ১১ লাখ ডোজ টিকা। সব মিলিয়ে দেশে টিকা এসেছে এ পর্যন্ত ১ কোটি ১৪ লাখ ডোজের বেশি।

এ ছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কোভ্যাক্স প্রতিশ্রুত টিকা থেকে ২-৩ জুলাইয়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ আসবে বাংলাদেশে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টিকা উৎপাদনের জন্য আলাদা কারখানা হবে গোপালগঞ্জে। এ ছাড়া দু-এক দিনের মধ্যে চীন থেকে ২০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসে পৌঁছাবে। সরকারের কেনা চুক্তির দেড় কোটি ডোজের মধ্যে এ টিকা আসছে বলে জানা গেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কভিশিল্ড দিয়ে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করে সরকার। কিন্তু ভারতের করোনা পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেলে টিকা রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয় দেশটি। এতে দেশি প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মার মাধ্যমে সেরামের সঙ্গে চুক্তি করে টিকা কিনলেও তা আটকে যায়। চুক্তির ৩ কোটি ডোজের মধ্যে এ পর্যন্ত ৭০ লাখ পেয়েছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ও ভারতের সেরাম বিভিন্ন ধরনের চাপের মুখে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গেও এরই মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা ও চিঠি চালাচালি হয়েছে। সর্বশেষ অবস্থা হিসেবে দ্রুত সময়ের মধ্যেই ভারতে প্রতিবেশীদের জন্য টিকা রপ্তানির বিষয়টি উন্মুক্ত হবে বলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সে দেশের গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকেও এমনই আশ্বাস দিয়েছে ভারত। ভারত থেকে টিকা পেতে দেরি হওয়ায় চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে টিকা কেনার বিষয়ে আলোচনা শুরু করে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে চীনের সঙ্গে দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি সম্পন্ন হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যে এ চুক্তির আওতায় ২০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসে পৌঁছাবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব মো. শামসুল হক জানান, আজ ‘সারা দেশে চীনের সিনোফার্মের গণটিকাদান শুরু হবে। দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, চট্টগ্রামের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে এ টিকাদান করা হবে। কভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে অধিদফতরে ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে বক্তব্যকালে তিনি আরও বলেন, আজ (বুধবার) করোনার টিকা দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন ফের শুরু হচ্ছে। টিকা নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গেও চলছে আলোচনা। এ ছাড়া কোভ্যাক্স থেকে টিকা প্রাপ্তির চেষ্টা করছে দেশ। দু-এক দিনের মধ্যে মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ টিকাও এসে পৌঁছাবে। এ ব্যাপারে ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিজ (এফডিএসআর)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘টিকা সংগ্রহে বাংলাদেশের শুরুটা ভালোই ছিল। ভারতের করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় প্রতিশ্রুত টিকা না পেয়ে কর্মসূচি বিঘিœত হয়েছে। এর মধ্যে চীন থেকে উপহার হিসেবে ও কোভ্যাক্স থেকে অল্পসংখ্যক হলেও টিকা আসছে। শুনছি জুলাই থেকে অনেক টিকা আসবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সারা বিশ্বে টিকা পাওয়ার জন্য দেশগুলো নানামুখী তৎপরতায় ব্যস্ত। বাংলাদেশকেও কৌশলী হতে হবে। লকডাউনের মতো চরম পর্যায়ের কর্মসূচি বেশি দিন চালালে দেশের অর্থনীতির ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশের একটা ওষুধ কোম্পানি তিন মাসের মধ্যে কভিড প্রতিরোধী টিকা বাজারে আনার ঘোষণা দিলেও কোনো অগ্রগতি নেই। এ ব্যাপারেও সরকারের কিছু করার আছে কি না খতিয়ে দেখা দরকার। টিকা সংগ্রহের পাশাপাশি জনগণকে মাস্ক পরাতে সুপরিকল্পিত “আচরণ পরিবর্তন যোগাযোগ” কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এ উদ্বুদ্ধ করার কাজে রাজনৈতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন এনজিওকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। আমরা যদি সমন্বিতভাবে পরিকল্পনা করি তাহলে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। এতে আমাদের অর্থনীতিও সুরক্ষিত থাকবে।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর