শনিবার, ৩ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

হাসপাতালে ঠাঁই নেই, বাড়িতে মৃত্যু বেড়ে দ্বিগুণ

করোনার ১৫ মাস পার হলেও এখনো বেহাল চিকিৎসাব্যবস্থা

শামীম আহমেদ

দেশে করোনা মহামারীর ১৫ মাস পার হলেও এখনো বেহাল চিকিৎসাব্যবস্থা। নগরকেন্দ্রিক কভিড শয্যা ও আইসিইউ বাড়ানোর পাশাপাশি অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ হলেও উপজেলা পর্যায়ে সংকটাপন্ন রোগীর চিকিৎসায় এখনো কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে করোনায় তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হলেও মিলছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা। সংকটাপন্ন রোগীকে নিয়ে ছুটতে হচ্ছে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে, জেলা থেকে জেলায়। বাড়িতেই ছটফট করতে করতে প্রাণ যাচ্ছে অনেক করোনা রোগীর। কারও মৃত্যু হচ্ছে পথে। গত জুন মাসেই ১৩০ জন করোনা রোগী বাড়িতে ও হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছেন। একইসঙ্গে করোনার তীব্র উপসর্গ নিয়েও প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে অনেকের।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের ছয় মাসে বাড়িতেই মারা যান ২৬৮ জন করোনা রোগী। ১৭ জনের মৃত্যু হয় হাসপাতালে নেওয়ার পথে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কারণে গত জুন থেকে সংক্রমণ ও শংকটাপন্ন রোগী বেড়ে যাওয়ায় বাড়িতে মৃত্যু বেড়েছে। গত মে মাসের তুলনায় জুনে এসে বাড়িতে মৃত্যু বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি। মে মাসে ৪৭ জনের মৃত্যু হয় বাড়িতে। জুনে বাড়িতে ১২৪ জন মারা যান। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় আরও ছয়জনের। গত জানুয়ারিতে ১২ জন, ফেব্রুয়ারিতে সাতজন ও মার্চে নয়জন বাড়িতে মারা যান। এপ্রিলে সংক্রমণ কিছুটা বাড়ায় বাড়িতে ৬৯ জন ও হাসপাতালে নেওয়ার পথে ১১ জনের মৃত্যু হয়। রোগীর স্বজনরা বলছেন, আগে করোনা পজিটিভ হলে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ফোন করে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হতো। এখন আর ফোন আসে না। এদিকে জুন থেকে হাসপাতালে ভর্তি অধিকাংশ করোনা পজিটিভ ও উপসর্গের রোগীর অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে বলে জানা গেছে। হাসপাতালে আইসিইউ ও অক্সিজেনের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম ইয়াজদানী জানান, রোজার আগে রামেকে প্রতিদিন ২-৩ হাজার লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন হতো। এখন প্রয়োজন হচ্ছে ৮ হাজার লিটার। হাসপাতালে শয্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকছে প্রতিদিন। জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ আইসিইউ ও ৩ হাজারের মতো কভিড শয্যা খালি থাকলেও রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিভাগীয় ও জেলা হাসপাতালগুলো। রাজশাহী থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক কাজী শাহেদ জানান, গতকালও রামেকের ১২টি করোনা ওয়ার্ডে ৪০৫ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি ছিলেন ৪৬৮ জন। একটি আইসিইউর জন্য সিরিয়াল দিয়ে রাখছেন ৬০-৭০ জন। একজন রোগীর মৃত্যুর পর বা সামান্য উন্নতি হলেই খালি হচ্ছে আইসিইউ। এদিকে মহামারীর ১৫ মাসেও ৩৭টি জেলায় স্থাপিত হয়নি আইসিইউ। ৩টি বা তার কম আইসিইউ আছে আরও ৮টি জেলায়। আইসিইউর খোঁজে এসব জেলার সংকটাপন্ন রোগী নিয়ে স্বজনরা ছুটছেন পার্শ্ববর্তী এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বা বিভাগীয় হাসপাতালে। এতে অনেকের মৃত্যু হচ্ছে পথেই। অনেকেরই সাধ্য নেই অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা পর্যন্ত রোগী আনার। দরিদ্র রোগীরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বাড়িতেই অপেক্ষা করছেন। সর্বোচ্চ উপজেলা হাসপাতাল ঘুরে প্রেসক্রিপশন নিয়ে ফিরে আসছেন বাড়িতে। এরপর কেউ সুস্থ হচ্ছেন, কেউ মারা যাচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জনই মারা যান বাড়িতে। আগের দিন বাড়িতে মৃত্যু হয় ১১ জনের। বর্তমানে দেশে চিকিৎসাধীন করোনা রোগী আছে ৮৯ হাজার ৮৪২ জন। এর মধ্যে ৮২ হাজারের বেশি  রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বাড়িতে অবস্থান করে। তার পরও সংকটাপন্ন রোগীর ঠাঁই হচ্ছে না হাসপাতালে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, সারা দেশের ১ হাজার ১৮১টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে শুধু ঢাকা বিভাগেই রয়েছে ৮৯৪টি। বাকি ৭ বিভাগে ২৮৭টি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ৯১টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৫টি, রাজশাহী বিভাগে ৪৬টি, রংপুর বিভাগে ৩৮টি, খুলনা বিভাগে ৫১টি, বরিশাল বিভাগে ২৫টি ও সিলেট বিভাগে ২১টি আইসিইউ রয়েছে। অথচ, গত জুনের মাঝামাঝি থেকে করোনার সর্বাধিক সংক্রমণ হার বজায় রয়েছে খুলনা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে। টানা ছয় দিন ধরে সর্বাধিক মৃত্যু হচ্ছে খুলনা বিভাগে। গত ২৪ ঘণ্টায়ও খুলনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে পুরো বিভাগের ১০ জেলার জন্য আইসিইউ আছে মাত্র ৫১টি।

সর্বশেষ খবর