শিরোনাম
রবিবার, ৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

নারী আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশালের উজিরপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে রিমান্ডে নিয়ে এক নারী আসামিকে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ওই নারীকে যথাযথ চিকিৎসা প্রদান এবং নির্যাতনের বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে শেরেবাংলা মেডিকেলের পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি উঠেছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান। তবে অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন উজিরপুর থানার ওসি।

এদিকে গত শুক্রবার রাত ১০টায় শেরেবাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হয় ওই নারী আসামিকে। পরে তাকে হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়। সেখানে পাঁচ ঘণ্টার চিকিৎসা শেষে  ওই দিন রাত ৩টায় তড়িঘড়ি করে তাকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। এ ঘটনায় তোলপাড় চলছে বরিশালে। শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই নারীকে চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি নির্যাতনের বিষয়ে যথাসময়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা জানান। গত ২৬ জুন উজিরপুর উপজেলার জামবাড়ি এলাকা থেকে বাসুদেব চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার ভাই বরুণ চক্রবর্তী ওই দিনই থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলার আসামি হিসেবে এক নারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। থানা পুলিশ পাঁচ দিনের রিমান্ড চাইলে গত ৩০ জুন বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজিরপুর আমলি আদালত ওই নারীর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ড শেষে গত শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় নারী আসামিকে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে এর কারণ জানতে চায় আদালত। এ সময় তিনি শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেন। আদালত একজন নারী কনস্টেবল দিয়ে তার দেহ পরীক্ষা করে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতা পায়। এরপর আদালত তার যথাযথ চিকিৎসা প্রদান এবং নির্যাতনের বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেয় শেরেবাংলা মেডিকেলের পরিচালককে। নির্যাতনের শিকার নারী আসামির ভাই বলেন, তার বোনকে থানায় রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতন করে তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. মাইনুল এবং এক নারী কনস্টেবল। এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় এক সাবেক এমপিকে দিয়ে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। নারী আসামির আইনজীবী মজিবর রহমান বলেন, বিভিন্ন স্থানে পুলিশের হেফাজতে আসামি মারা যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আরজি করা হয়েছিল। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে সতর্কতার সঙ্গে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে শারীরিক এবং স্পর্শকাতর স্থানে নির্যাতন করেছে। যা যৌন নির্যাতনের শামিল। এটা গুরুতর অন্যায়। তিনি এ ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন। বরিশাল জেলা মানবাধিকার জোটের যুগ্ম সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলামও বিষয়টির বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন। রিমান্ডে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান।

সর্বশেষ খবর