রবিবার, ৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

স্ত্রী-কন্যাকে হত্যা করে মাটিচাপা স্বামী পলাতক

পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি

বরগুনার পাথরঘাটায় কন্যাশিশুসহ স্ত্রীকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, কন্যাশিশুসহ স্ত্রীকে মাটিচাপা দিয়ে পালিয়ে গেছে ঘাতক স্বামী। গতকাল সকাল ১০টার দিকে পুলিশ সুমাইয়া (১৮) ও তার মেয়ে সামিরা আক্তার জুঁইয়ের (৯ মাস) মরদেহ উদ্ধার করেছে।

এ ঘটনায় ঘাতক শাহীন মুন্সীর মা শাহিনুর বেগম (৪০), নানি জাহানারা বেগম (৫৫) ও  ফুফাতো ভাই ইমাম হোসেনকে (২২) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। মরদেহ দুটি সুরতহাল করে মযনাতদন্তের জন্য বরগুনা হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের হাতেমপুর গ্রামে। ঘাতক শাহীন মুন্সী উপজেলার পূর্ব হাতেমপুর গ্রামের খলিলুর রহমান মুন্সীর ছেলে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের               সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় রাজ্জাক বাদশাহ ও সামছুল হক জানান, দীর্ঘদিন ধরে শাহিন ও সুমাইযার মধ্যে পারিবারিক কলহ চলে আসছিল। বিয়ের আগে তাদের মধ্যে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। এতে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন সুমাইয়া। পরে গর্ভের সন্তানের জন্ম হয়। বিষয়টি নিয়ে শাহীন মুন্সী পাঁচ মাস কারাভোগের পর আদালতের মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ চলতে থাকে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সালিস বৈঠকও হয়েছে। তারা আরও জানান, বুধবার দুপুরে সুমাইয়ার বাবার বাড়ি তাদের দাওয়াত ছিল। কিন্তু শাহীন সেখানে যায়নি। দুপুরে দাওয়াত খেয়ে সুমাইয়া স্বামীর বাড়িতে আসার পর থেকেই নিখোঁজ হন। ঘটনাটি বৃহস্পতিবার থানা পুলিশকে জানালে তারাও বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নেয়। এর পর থেকেই শাহীন মুন্সী লাপাত্তা হয়ে যায় এবং মুঠোফোন বন্ধ করে রাখে। জানা গেছে, একই গ্রামের শাহীন মুন্সী ও সুমাইয়ার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে দৈহিক সম্পর্কে জড়িয়ে সুমাইয়া গর্ভবতী হন। এরপর স্বজন ও গ্রামবাসীর চাপে থানায় ধর্ষণ মামলা হয়। পাথরঘাটা থানায় ২০২০ সালের ১৪ জুলাই নারী ও শিশু দমন আইনে মামলা হলে শাহীন মুন্সী গ্রেফতার হয়ে পাঁচ মাস জেলে থাকে। পুলিশ ওই সন্তানের পিতৃপরিচয় উদ্্ঘাটনে ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নিলে আসামি শাহীন মুন্সী ওই সন্তান তার ঔরসজাত সন্তান মর্মে ডিএনএ পরীক্ষা না করার জন্য পুলিশকে লিখিতভাবে জানায়। বরগুনা নারী  ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ওই বিচার চলমান অবস্থায় স্ত্রী ও নয় মাসের সন্তান হত্যার ঘটনা ঘটল। স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শাহীন মুন্সীর মা ও নানিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। গতকাল সকালে বাড়ির পাশে মাটি খুঁড়ে মা ও কন্যাশিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার জানান, গতকাল সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা শাহীন মুন্সীর বাড়ির পাশে একটি নতুন গর্ত দেখে থানায় খবর দেন। এরপর ঘটনাস্থলে এসে গর্ত খুঁড়ে দড়িতে হাত-পা বাঁধা ভাঁজ করা অবস্থায় মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল করা হয়। তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পাথরঘাটা বামনা সার্কেল) তোফায়েল আহমেদ সরকার বলেন, নিখোঁজের সূত্র ধরে মা-মেয়ের মাটিচাপা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে নিহত সুমাইয়ার স্বামী শাহীন মুন্সী পলাতক। পুলিশ ঘটনা তদন্ত করছে।

সর্বশেষ খবর