মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

পথে পথে ধুঁকছে অভুক্ত ঘোড়া

জিন্নাতুন নূর

পথে পথে ধুঁকছে অভুক্ত ঘোড়া

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে পশু-পাখি আক্রান্ত হওয়ার খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া না গেলেও বিপদে পড়েছে অবলা প্রাণী ঘোড়া। রাজধানী ঢাকা, পর্যটন শহর কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিনোদনের কাজে ব্যবহার করা ঘোড়াগুলো এখন খাবারের অভাবে রাস্তায় রাস্তায় ধুঁকছে। মহামারীতে মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় পর্যটন স্থানগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ফাঁকা। এ অবস্থায় মালিক ও তত্ত্বাবধায়করা খাবারের ব্যবস্থা করতে না পেরে অভুক্ত প্রাণীগুলোকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছেন। ময়লা-আবর্জনা থেকে খাবার খুঁজতে গিয়ে অবলা এই প্রাণীগুলো আবর্জনায় মিশে থাকা ধারালো বস্তুর আঘাতে রক্তাক্ত হচ্ছে, একই সঙ্গে বিষাক্ত খাবার খেয়েও হচ্ছে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত।

রাজধানী ঢাকায় সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সড়কে ঘোড়ার মালিকদের তাদের ঘোড়াগুলোকে রাস্তায় ছেড়ে রাখতে দেখা যাচ্ছে। যেমন নগরীর মিরপুরের কালশী এলাকা এবং বিশ্বরোডের তিনশ ফুট সড়কে বেশ কয়েকটি ঘোড়াকে উন্মুক্ত স্থানে ঘাস খেয়ে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে মালিকদের বক্তব্য, লকডাউনে উপার্জন বন্ধ থাকায় ঘোড়াগুলোকে খাওয়ানো তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় অবলা প্রাণীগুলো পথে ঘাস-আবর্জনা যাই পাচ্ছে তাই খাচ্ছে। অবলা এই  প্রাণীদের কষ্ট দেখে এরই মধ্যে পশুপ্রেমী সংগঠন পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার (প) ঘোড়াগুলোর খাবার ব্যবস্থা করতে তহবিল সংগ্রহে নেমেছে। প-এর একদল তরুণ এরই মধ্যে কক্সবাজারের ঘোড়াগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে। আপাতত সেখানে এক দিন পরপর ঘোড়ার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তরুণরা হেঁটে হেঁটে ঘুরে ঘুরে ঘোড়াগুলোকে খাওয়াচ্ছেন।

প-এর প্রতিষ্ঠাতা রাকিবুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা কক্সবাজারে এখন এক দিন পর পর ১০ থেকে ১২টি ঘোড়াকে খাবার দিচ্ছি। ঢাকায় যে ঘোড়ার মালিকরা কিছুটা দরিদ্র, তারা খাবারের অভাবে ঘোড়াগুলোকে পথে ছেড়ে দিয়ে রেখেছেন। গুলিস্তানে এমন বেশ কয়েকটি ঘোড়া আছে।’ তিনি আরও জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিরাজগঞ্জ এলাকার অনেক মানুষ ঘোড়াকে বিনোদন ও পণ্যবহনের কাজে ব্যবহার করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারে পর্যটকদের বিনোদনের জন্য রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক ঘোড়া। কিন্তু মহামারী শুরুর পর পর্যটকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় খাদ্যের অভাবে এই ঘোড়াগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে মারা যেতেও শুরু করে। খাবার দিতে না পেরে ঘোড়ার মালিকরা ঘোড়াগুলোকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে রেখেছেন। ফলে ঘোড়াগুলো রাস্তার পলিথিনসহ বিভিন্ন বর্জ্য খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। জানা গেছে, এসব কারণে ২০২০ সালের মার্চ মাসে সরকারঘোষিত লকডাউন শুরু হলে কক্সবাজারে ২০টি ঘোড়া মারা যায়। কক্সবাজার ঘোড়া মালিক সমিতি থেকে জানা গেছে, এরপরও মারা গেছে আরও ১০টি ঘোড়া। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর পর্যটন খাতে যে আঘাত এসেছে- তার প্রভাব পড়েছে এই ঘোড়াগুলোর ওপরও। ঘোড়াগুলোর মালিকরাও জানান, খাবার খেতে না পেরেই ঘোড়াগুলো মারা পড়ছে। এই অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দেশের পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পর্যটকদের বিনোদনের জন্য থাকা ঘোড়াগুলোর পর্যাপ্ত খাদ্য ও আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে এই মৌখিক আদেশের তথ্য জেলা প্রশাসককে অবহিত করতে বলা হয়েছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছে। করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এ রিট আবেদনের ওপর শুনানি গ্রহণ করা হবে বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর