বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

দেশে ভয়ংকর ড্রাগস ম্যাজিক মাশরুমের সন্ধান

২৫টি বারসহ গ্রেফতার দুই যুবক - চকলেটের ব্যানারে দেশে ঢুকছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আইস, খাট, এলএসডি ও ডিএমটির পর দেশে এবার ‘ম্যাজিক মাশরুম’ নামে নতুন আরেকটি বিপজ্জনক মাদকের সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। কানাডিয়ান চকলেটের নাম করে বেশ কিছুদিন ধরে এ মাদকটি বিমানবন্দর দিয়ে দেশে নিয়ে ঢুকছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার মধ্যরাতে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০-এর একটি বিশেষ দল রাজধানীর হাতির ঝিল এলাকা থেকে ম্যাজিক মাশরুমের পাঁচটি বার (১২০টি স্লাইস) এবং দুই বোতল বিদেশি মদসহ দুই যুবককে গ্রেফতার করে। এরা হলেন নাগিব হাসান অর্ণব (২৫) ও তাইফুর রশিদ জাহিদ (২৩)। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব  মিডিয়া সেন্টারে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ম্যাজিক মাশরুম যদি কেউ ৫ থেকে ১০ মিলিগ্রাম সেবন করে তাহলে হ্যালুসিনেশন শুরু হয় এবং এর প্রতিক্রিয়া ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। এ ছাড়া এ মাদক সেবনকারীরা জীবজন্তুর সঙ্গেও কথা বলা শুরু করে। কখনো কখনো অক্সিজেনের জন্য গাছ জড়িয়ে ধরার মতো কান্ডও করে বলে গ্রেফতার ব্যক্তিদের থেকে তথ্য মিলেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ম্যাজিক মাশরুম খেলে শরীরে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন ব্যবহারে জীবন পড়তে পারে হুমকির মুখে। লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাই-ইথাইলামাইডের (এলএসডি) চেয়ে ভয়ংকর ও বিপজ্জনক এ মাদক। এর প্রভাবে মানুষ তার স্বাভাবিক সব চেতনা হারিয়ে ফেলে। এর মাধ্যমে আসক্ত কেউ যখন-তখন যে কোনো ভয়ংকর ঘটনায় নিজেকে জড়াতে পিছপা হয় না।

র‌্যাব সূত্র বলেছেন, নাগিব হাসান অর্ণব বাংলাদেশে এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। ২০১৪ সালে লেখাপড়া করতে যান কানাডায়। লেখাপড়া শেষ করে সেখানেই কাজ শুরেু করেন। তাইফুর রশিদ জাহিদ একসময় অর্ণবের সহপাঠী ছিলেন। বর্তমানে প্রথম সারির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএর ছাত্র এবং গাঁজা সেবন ও মদ্যপানে আসক্ত। একপর্যায়ে ২০১৯ সালে এলএসডি, ডিএমটিসহ বিভিন্ন ধরনের সাইকেডেলিক ড্রাগ নিয়মিত সেবন ও বিক্রি শুরু করেন তিনি। সাইকেডেলিক ড্রাগ সম্পর্কে তার আগ্রহ সৃষ্টি হলে ইন্টারনেটে এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালান। এরপর বাংলাদেশে জন্মানো বিভিন্ন মাশরুমের মধ্যে সাইকেডেলিক বা ম্যাজিক মাশরুম আছে কি না খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। ডার্ক সাইটে ম্যাজিক মাশরুমের খোঁজ পান তিনি। এরপর বিদেশে অবস্থানরত তার বন্ধু ও পরিচিতদের ম্যাজিক মাশরুম বাংলাদেশে নিয়ে আসার অনুরোধ জানান। তাইফুরের এমন একটি প্রস্তাবে রাজি হন কানাডায় অবস্থানরত অর্ণব। কথা মোতাবেক চলতি বছরের মে মাসে ম্যাজিক মাশরুমের বড় একটি চালান নিয়ে বাংলাদেশে আসেন অর্ণব।

র‌্যাব বলছে, পাউডার, ক্যাপসুল হিসেবেও পাওয়া যায় এ মাদক। এটি ব্যবহারের পর সেবনকারীর নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। সেবনের পর ছাদ থেকে লাফিয়েও পড়তে পারেন কেউ। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়া যুবকদের মধ্যে কয়েকজন দেশে এ মাদক নিয়ে আসছেন। এতে জড়িয়ে পড়ছেন ধনীর দুলালরা। এলএসডির মতো ম্যাজিক মাশরুমও দেশে আনতে ডার্ক ওয়েব প্ল্যাটফরমকে ব্যবহার করছেন মাদক কারবারিরা। বিশেষ করে ইনস্টাগ্রাম ও রেডিটে এমন কিছু পেজ পাওয়া গেছে, যা বৈশ্বিক মাদক কারবারিদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। রেডিট ও ইনস্টাগ্রামে এলএসডি নিয়ে আলাদা পেজ রয়েছে। ওই পেজে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাড়ে ৬ হাজারের মতো সদস্য রয়েছেন বলে জানা গেছে, যারা এসব মাদকে আসক্ত।

কীভাবে এ মাদকের পেমেন্ট ও আমদানি হচ্ছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মঈন বলেন, প্রতিটি বারে থাকে ২৪টি করে স্লাইড। একেকটি বার বাংলাদেশে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। বিটকয়েন, পেপলসহ অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে এ মাদক কেনাবেচা হয়। নতুন এ মাদকের দাম দেশে বেশি, কিন্তু বিদেশে কম। এর আমদানি খরচও কম। আর বিক্রি লাভজনক। এসব কারণে এ মাদকের ব্যবহার বাড়ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। আরও কয়েকটি চক্র এ মাদক বিক্রি করছে বলে গ্রেফতর ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা দুলাল কৃষ্ণ সাহা সাংবাদিকদের বলেন, ম্যাজিক মাশরুম ‘ক’ শ্রেণির মাদক হিসেবে আইনে নিষিদ্ধ। এ মাশরুম আসলে সাইকেডেলিক, অর্থাৎ মস্তিষ্কে ভ্রম তৈরি করে এবং অলীক কিছু দেখতে পায় বলে বিশ্বাস করে। এর সেবনকারীর শরীরে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তখন সে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাবে।

সর্বশেষ খবর