শুক্রবার, ৯ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

জীবিকার তাগিদে বের হচ্ছে মানুষ

আট দিনে গ্রেফতার ৫ হাজার, প্রতিদিনই রাস্তায় বাড়ছে যানবাহন

নিজস্ব প্রতিবেদক

জীবিকার তাগিদে বের হচ্ছে মানুষ

লকডাউনের আট দিনে গ্রেফতার হয়েছেন ৫ হাজার ২৬৪ জন। নিয়ম ভাঙার অভিযোগে সারা দেশে কয়েক হাজারের মতো মানুষকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযুক্তদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে জরিমানা, কারাদন্ডের মতো শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। গতকাল অষ্টম দিনেও ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা। হয়েছে গ্রেফতার ও জরিমানা। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যানুযায়ী, গতকাল বিধিনিষেধের অষ্টম দিনে নিয়ম ভাঙার অভিযোগে ১ হাজার ৭৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে ৩১৮ জনকে। তাদের মোট জরিমানার পরিমাণ ১৬ লাখ ৭৯০ টাকা। এ ছাড়া ৯৩৭টি গাড়িকে ২১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ডিএমপির অভিযানে বিধিনিষেধ ভাঙার অভিযোগে গত এক সপ্তাহে গ্রেফতার হয়েছেন ৪ হাজার ১৮৭ জন। জরিমানা করা হয়েছে ১ হাজার ৫৫২ জনকে। তাদের মোট জরিমানার পরিমাণ ৭ লাখ ১৭ হাজার ৯৬০ টাকা। এ ছাড়া কয়েক লাখ টাকা জরিমানা করা হয় সাড়ে ৩ হাজার গাড়িকে। এদিকে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সারা দেশে ১৯৫টি টহল ও ২০০টি চেকপোস্ট পরিচালনা করেছে র‌্যাব। এ সময় ৩৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২১৭ জনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। তাদের মোট ২ লাখ ১৮ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর কয়েকটি সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন অনেকটাই শিথিল হয়ে আসছে। জীবন-জীবিকার তাড়নায় ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ি চেকপোস্টও দেখা গেছে। যদিও লকডাউনের প্রথম দিনে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো ছিল ফাঁকা। অতি প্রয়োজনীয় গাড়ি ছাড়া তেমন কোনো যানবাহনই চোখে পড়েনি। পাড়া-মহল্লার অলি-গলিতেও খুব একটা কোলাহল দেখা যায়নি। কিন্তু দু-এক দিন পর থেকেই পাল্টাতে থাকে দৃশ্য। রাজপথে বাড়তে শুরু করে যানবাহন ও মানুষের উপস্থিতি। অলি-গলিতেও জমতে শুরু করে আড্ডা। বিভিন্ন সড়কে শুধু যানবাহনের চাপই নয়, বরং যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধিদের তথ্যানুসারে, বরিশালে লকডাউনের ৮ম দিনে লঞ্চ-বাস, থ্রি হুইলার এবং কিছু দোকান বন্ধ থাকা ছাড়া প্রায় সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। রাস্তাঘাটে মানুষ এবং রিকশা, মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত যান এবং পণ্যবাহী যান চলাচল আগের চেয়ে বেড়েছে। অপরদিকে লকডাউন এবং স্বাস্থ্য বিধি বাস্তবায়নে আজ গ্রেফতার শুরু করেছে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নগরীতে গতকাল পৃথক তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন। দুপুর পর্যন্ত মোট ১৯ জনকে আটক করে ডিটেনশন খাটিয়ে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দিয়েছে পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালত।

কঠোর লকডাউন চলছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাইওয়েতে। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে খাঁটিহাতা হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে বাংলাদেশে নতুন করে যে কঠোর লকডাউন আরোপ করা হয়েছে তা কার্যকর করতে খাঁটিহাতা হাইওয়ে পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা। গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় কঠোর বিধিনিষেধ। আর কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে রয়েছে পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা।

বগুড়ার গাবতলীতে করোনা বিধিনিষেধ না মানায় ভ্রাম্যমাণ আদালত গত সাত দিনে ৮৫ মামলা ও ৮৩ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। বগুড়ার গাবতলীতেও কোনো প্রকার যানবাহন চলতে দেখা যায়নি। সরকারি-বেসরকারি সকল প্রকার অফিস আদালত, স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মার্কেটগুলো সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে। রাস্তায় চলাচলরত পথচারীদের অনেকেই মাস্ক পরে বের হতে দেখা গেছে।

বাগেরহাটে লকডাইনের মধ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার অপরাধে চারজনকে তিন দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন। পাশাপশি করোনা স্বাস্থ্য বিধি না মানায় জেলাজুড়ে ১১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত ১১০টি মামলা দিয়ে ১১৮ জনকে ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে। এদিকে লকডাউনের মধ্যে বুধবার সড়কে যন্ত্রচালিত রিকশা-ভ্যান, ইজিবাইক চলাচল বেড়েছে। বাগেরহাটে লকডাউনে জেলার প্রবেশদ্বারসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। জেলার উপকূলীয় উপজেলা মোংলায় নৌবাহিনী-কোস্টগার্ড ও বাগেরহাট শহরসহ নয়টি উপজেলায় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টহল দিচ্ছে।

গ্রেফতারকৃতদের বেশির ভাগই খেটে খাওয়া মানুষ : সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে গত ৩ জুলাই ঘর থেকে বের হন কালাম (ছদ্মনাম)। এরপর তিনি পুরান ঢাকার সূত্রাপুর বাজারের এক গলিতে দাঁড়িয়ে চা পান করেন। ঘরের বাইরে তাকে দেখে ফেলায় আটক করে পুলিশ। কালাম ধোলাইখালের একটি দোকানের কর্মচারী। আটকের পর তাকে ২০০ টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। তার মতো আরও অনেকে দুই থেকে পাঁচশ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, বিধিনিষেধের মধ্যে যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাদের বেশির ভাগই খেটে খাওয়া মানুষ। মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটন বলেন, আমি গত ২/৩ দিন আদালতে ছিলাম। সেখানে যা দেখলাম- লকডাউন দেখতে বের হওয়া যেসব মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের ৯৫-৯৯ শতাংশই দিন এনে দিন খায়। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এই কঠোর বিধিনিষেধ প্রয়োজন ছিল। যেহেতু আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ, তাই করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য দরিদ্র-খেটে খাওয়া মানুষদের খাদ্য নিশ্চিত করা উচিত ছিল। ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় প্রতিদিনই শতাধিক গাড়িকে জরিমানা করা হয়েছে। শুধু নিম্নবিত্তরাই যদি ভুক্তভোগী হতো তাহলে এত ব্যক্তিগত গাড়িকে জরিমানা করা হতো না। যারাই বিধিনিষেধ ভাঙছেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।

সর্বশেষ খবর