শুক্রবার, ৯ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

লকডাউন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয়

-ডা. মোজাহেরুল হক

লকডাউন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয়

করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য লকডাউন কোনো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয়। লকডাউন মানে মহামারী নিয়ন্ত্রণ নয়। বরং লকডাউন মানে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ। আর এখানে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। কারণ করোনাভাইরাসের বাহক হচ্ছে মানুষ। লকডাউনের আগে-পরে কোনো বিশেষণও বসবে না। এর উদ্দেশ্য হলো মানুষকে সম্পূর্ণরূপে ঘরে আটকে রাখা। যে যেখানে আছে তাকে        সেখানেই রাখতে হবে। এর কারণ হচ্ছে ভাইরাসটি নিজে থেকে ছড়ায় না। এটা মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে। এটা মানুষ কারও কাছে নিয়ে না গেলে কেউই আক্রান্ত হবে না। এখানে আমাদের যে লকডাউন চলছে এটা কোনো লকডাউন নয়।

এ জন্য ভাইরাসটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মানুষের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে হবে। আর এটার জন্য ভ্যাকসিন কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করতে হবে। ফলে এই মুহূর্তে লকডাউনের চেয়ে ভ্যাকসিন কার্যক্রমকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক। তিনি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখানে সবার আগে সবাইকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আইসোলেশনে নিতে হবে।

তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখন নির্দেশনা দেয়, তাতে বলা হয়েছিল সচেতনতা বাড়াতে হবে। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হবে। শুধু জানালে হবে না। মানতে বাধ্য করতে হবে। এখন তো গ্রামে-শহরে সারা দেশেই করোনা। এ জন্য আমাদের বর্ডারগুলো বন্ধ করা দরকার। বন্ধ মানে নিন্ডিদ্রভাবে বন্ধ করা। এটা এখানো করা সম্ভব। বর্ডার এলাকায় যেসব হাসপাতাল আছে সেগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সেখানে প্রশিক্ষিত জনবল থাকতে হবে। আইসোলেশন ইউনিট থাকতে হবে। অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকতে হবে। অক্সিজেন মাস্ক থাকতে হবে। সম্ভব হলে হাই ফ্লো ন্যাজালও থাকতে হবে। একই সঙ্গে প্রশাসন একটা কাজ করবে, কোনো রোগী পাওয়া গেলে তাকে আইসোলেশনে নিতে হবে। তিন দিনের মধ্যে রোগীর সঙ্গে সংস্পর্শে আসছে এমন মানুষকে আলাদাভাবে অফিশিয়াল কোয়ারেন্টাইনে নিতে হবে। আর প্রান্তিক লেভেলে যেন টেস্ট করানো যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। স্কুল-কলেজগুলোকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, যাদের অবস্থা খারাপের দিকে যাবে তাদের জেলা সদর হাসপাতাল বা বিভাগীয় হাসপাতালে নিতে হবে। এতে তারা প্রয়োজনীয় আইসিইউ সেবাও পাবেন। আর যারা দিন আনেন দিন খান তাদের ঘরে আবদ্ধ রেখে খাদ্য সহায়তা দিতে হবে। শহরের ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। এখানে জনপ্রতিনিধিরা দায়িত্ব পালন করবেন। সর্বশেষ এগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের এলাকাভিত্তিক কৌশলগত পরিকল্পনা থাকতে হবে। তাহলেই কেবল করোনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এ ছাড়া টিকার ক্ষেত্রে বয়স্ক লোকদের ইউনিয়নভিত্তিক চিহ্নিত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দিতে হবে। কারণ তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার অনেক বেশি।

সর্বশেষ খবর