শুক্রবার, ৯ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

নিজস্ব পর্যবেক্ষণে পুলিশের গড় অর্জন ৬৭ শতাংশ

তিন বছর মেয়াদি কৌশল পরিকল্পনা প্রতিবেদন, সর্বোচ্চ সফলতা অপরাধ ব্যবস্থাপনায়

আলাউদ্দিন আরিফ

নিজস্ব পর্যবেক্ষণে পুলিশের গড় অর্জন ৬৭ শতাংশ

নিজস্ব পর্যবেক্ষণের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশের সার্বিক অর্জনের গড়হার ৬৭ দশমিক ৯২ শতাংশ। পুলিশের কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা প্রতিবেদনে ১২টি সূচক পর্যবেক্ষণ করে এ তথ্য জানা গেছে। এসব সূচকের মধ্যে সর্বাধিক ৮৫ দশমিক ৫১ শতাংশ অর্জন হয়েছে অপরাধ ব্যবস্থাপনায়। আর সবচেয়ে কম ৫৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ অর্জিত হয়েছে পুলিশের মানবসম্পদ ও সাংগঠনিক কাঠামো ব্যবস্থাপনায়। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে হাইওয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ৭৭ দশমিক ৫০, কমিউনিটি পুলিশিংয়ে ৭৭ দশমিক ৭৫, গোয়েন্দা তথ্য ব্যবস্থাপনায় ৭৭ দশমিক ৬৯, অবকাঠামো ও সহায়ক সেবায় ৭৪, লজিস্টিক যানবাহন ও গোলাবারুদে ৭৬, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ৬১ দশমিক ৮১, সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ৭৭ শতাংশ ও মহানগর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কাক্সিক্ষত লক্ষ্যের ৬৯ শতাংশ অর্জন হয়েছে বলে বার্ষিক কৌশলগত পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সম্প্রতি ২০১৮-২০২০ সাল পর্যন্ত কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। এতে ১২টি শ্রেণিতে মোট ১৮৬টি পৃথক বিষয়ে সূচক নির্ণয় করা হয়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিকেশন) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘অপরাধ ব্যবস্থাপনাসহ কয়েকটি সূচকে পুলিশের অর্জন আশাব্যঞ্জক। বাংলাদেশ পুলিশের প্রায় প্রতিটি সদস্য তাদের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দেশ ও মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন। এ কাজের ক্ষেত্রে কারও কারও ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে পারে। কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি আমাদের নজরে এলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সংশোধন করা বা ক্ষেত্রবিশেষে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যারা ভালো কাজ করছেন তাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য নিজ নিজ ইউনিটের মাধ্যমে পুরস্কৃত করারও ব্যবস্থা     করা হচ্ছে। এসব নানামুখী পদক্ষেপে পুলিশের সফলতার হার বাড়ছে। আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের নেতৃত্বে প্রতিটি সূচকের উৎকর্ষ সাধনে কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশের অপরাধ ব্যবস্থাপনায় পাঁচটি আলাদা ধাপে ৫৭টি পৃথক সূচকে অর্জনের শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। ধাপগুলো হচ্ছে অপরাধ ব্যবস্থাপনা, প্রসিকিউশন, ভীতি হ্রাস করা, সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন ও সহিংস চরমপন্থি দমন। মামলার তদন্তে মৌখিক সাক্ষ্যের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বৈজ্ঞানিক ও ফরেনসিক সাক্ষ্য ব্যবহার উৎসাহিত করার বিষয়ে পুলিশের অর্জন ৯০ শতাংশ। গোয়েন্দাভিত্তিক পুলিশিং উৎসাহিত করায় ৮২, অপরাধপ্রবণ ও কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপনে ৭৫, উগ্রবাদ, মানব পাচার, চরমপন্থা প্রভৃতি অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে ৮৫, ক্রাইমসিন সংরক্ষণ ও সিআইডির ক্রাইমসিন ভ্যান ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৯৫, স্পর্শকাতর মামলার সাক্ষীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ৯১, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে জনসাধারণের সহায়তার দ্বার উন্মোচনের ক্ষেত্রে ৮৭ ও সাজার হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের ৯০ শতাংশ অর্জন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। অপরাধ ব্যবস্থাপনায় প্রসিকিউশনের ক্ষেত্রে সাক্ষীদের স্বয়ংক্রিয় বার্তা পাঠানোর পদ্ধতি চালু এবং আদালতে সাক্ষী হাজির করার বিশেষ ব্যবস্থাপনা নেওয়ার ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে পুলিশের। স্বল্প সময়ে আসামি গ্রেফতার ও আদালতে হাজির করার ক্ষেত্রে পুলিশের অর্জন ৯১ শতাংশ, বড় সভা-সমাবেশে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতির ক্ষেত্রে ৯৪, দেশের সব পর্যটন এলাকায় ট্যুরিস্ট পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ৬৯, নিরাপত্তা বাড়ানোর লক্ষ্যে জঘন্য অপরাধের শিকার ব্যক্তি ও মামলার সাক্ষীদের সঙ্গে সময়ে সময়ে সাক্ষাৎ বিষয়ে পুলিশের অর্জন ৭৪, সমাজে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে এমন ধরনের সংবাদ খুব বেশি প্রচার না করতে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক ও অন্যদের প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে ৯৩ শতাংশ সফল হয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া অবৈধ মাদকদ্রব্য ব্যবহার মোকাবিলায় একটি সমন্বিত কার্যকর আভিযানিক পরিকল্পনা প্রস্তুত, বাস্তবায়ন ও সমন্বয়ে পুলিশের সফলতা ৭৬ শতাংশ। মাদক উৎপাদনের উৎস, সরবরাহ চেইন চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে অর্জন হয়েছে ৮৫ শতাংশ। মানব পাচার রুট চিহ্নিত করে অপরাধীদের গ্রেফতার ও আদালতে উপস্থাপনে ৮৮ শতাংশ। সাইবার ক্রাইম নির্মূলে সিআইডি, পিবিআই, সিটিটিসি এবং সব মেট্রোপলিটন পুলিশের চৌকস কর্মকর্তাদের (নিবেদিতপ্রাণ) অফিসারপুল তৈরির ক্ষেত্রে ৮৪, পেশাদারির সঙ্গে মানি লন্ডারিং ও সাইবার ক্রাইম মামলার তদন্তে ৮৫ শতাংশ অর্জন হয়েছে পুলিশের। সহিংস চরমপন্থা দমনে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অর্জন ৯১, সব মেট্রোপলিটন এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট সোয়াত, স্নাইপার, বোম্ব ডিসপোজাল এবং কে-নাইন ইউনিট স্থাপনে ৮০, চরমপন্থা বা উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ডি-র‌্যাডিকালাইজেশন এবং পাল্টা মতবাদ/ব্যাখ্যা তৈরি এবং সামাজিক পুনর্বিন্যাস কর্মসূচি চালুতে ৮৪, সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইনে র‌্যাডিকালাইজেশন নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় কৌশল তৈরিতে অর্জন হয়েছে ৯০ শতাংশ। এ ছাড়া হাইওয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সূচকে মহাসড়ক থেকে অবৈধ ও নিষিদ্ধ যানবাহন অপসারণের পদক্ষেপ নেওয়া এবং নিরাপদ বাহনের ধারণা প্রতিষ্ঠায় ৯০, দুর্ঘটনা রোধে যাত্রী, মালিক, চালক, চালকের সহকারী ও মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগে অর্জন হয়েছে ৮০ শতাংশ। বাসের ছাদে যাত্রী পরিবহন বন্ধে পুলিশের অর্জন ৯০ শতাংশ। দুর্ঘটনার কারণ নির্ণয়ের জন্য গবেষণা পরিচালনা এবং দুর্ঘটনা হ্রাসের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণে ৭৫, মহাসড়ক ব্যবহার করে চোরাচালান ও মাদক পাচার বন্ধে ৭৫, অতিরিক্ত পণ্য বহনকারী যানবাহন মহাসড়ক থেকে অপসারণে ৮০ ও দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান শনাক্ত করে গাড়িচালকদের সতর্ক করতে সাইনবোর্ড স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশের অর্জন ৮০ শতাংশ। পুলিশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারে গড় অর্জন ৬১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এর মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, অনুসন্ধান, তদন্ত ও তথ্য যাচাইয়ের মতো মৌলিক পুলিশি কাজে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ৯০ শতাংশ, জেলা সদর, কেপিআই, মহানগর এলাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মহাসড়কে ডিজিটাল নিরীক্ষা স্থাপন এবং সংরক্ষণে পুলিশের অর্জন শূন্য। মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ডিসিএমএস) এবং অটোমেটেড ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেমের (আফিস) ব্যবহার নিশ্চিতে ৭৫ ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর অভিযোগ পদ্ধতি চালুতে ৫০ শতাংশ অর্জন হয়েছে পুলিশের।

সর্বশেষ খবর