শুক্রবার, ৯ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

খানজাহান আলী মাজারে কুমিরের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

খানজাহান আলী মাজারে কুমিরের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত

বাগেরহাটের হজরত খানজাহান আলী (রহ.)-এর মাজার দিঘির কুমিরের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহত এই কুমিরটিসহ দুটি কুমির মারা গেলেই শেষ হয়ে যাবে খানজাহান দিঘির চলমান ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। আহত কুমিরটিকে             দুই দিন ধরে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দিঘি থেকে কুমিরটিকে ওপরে উঠিয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের কুমির বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলবে।

মিঠাপানি প্রজাতির পুরুষ এই কুমিরটি ১৫ দিন আগে দিঘির জালে আটকা পড়ে। দিঘিতে অবৈধ উপায়ে জাল পাতা ওই চক্রটি কুমিরের চোখসহ শরীরে আঘাত করে তাদের জাল ছাড়িয়ে নেওয়ার পর থেকে কুমিরটি অসুস্থ। বন্ধ করে দেয় খাওয়া দাওয়া। এর আগে খানহাজান আলী দিঘির জালে আটকা পড়ে একাধিক কুমিরের মৃত্যু হয়। বাগেরহাটে ৬০০ বছর ধরে হজরত খানজাহান (রহ.) আমল থেকে মাজারের দিঘিতে বসবাস মিঠাপানি প্রজাতির কুমিরের। এই কুমির ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। খানজাহানের ভক্ত-আশেকানসহ দেশ-বিদেশের পর্যটকরা তার মাজারে এসে কুমির দেখে থাকেন। কেউ কেউ আবার দিঘির এই কুমিরের খাদ্য হিসেবে মুরগি ও ছাগল দিয়ে থাকেন। বর্তমানে দিঘিতে মাত্র একটি পুরুষ ও একটি নারী কুমির রয়েছে। দিঘি থেকে খাদেমদের সহয়তায় রাতের আঁধারে একটি চক্র অবৈধভাবে জাল পেতে মাছ ধরে থাকে। ওই চক্রটির পাতা জালে ১৫ দিন আগে আটকা পড়ে পুরুষ কুমিরটি। ওই চক্রটির কারণে কুমিরটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। বন্ধ করে দেয় খাওয়া-দাওয়া। কুমির আহতের বিষয়টি নজরে আসার পর মাজার দিঘির পূর্ব পাড়ের বাসিন্দা বিনা বেগম কুমিরটির সুচিকিৎসার জন্য বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করলে তিনি আহত কুমিরটিকে চিকিৎসার নির্দেশ দেন। বুধবার থেকে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান, সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কুমির বিশেষজ্ঞ আজাদ কবির চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেন। প্রায় ৫০ বছর বয়সের আহত এই কুমিরটির চোয়ালের মাঝে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। একটি চোখে মোটেও দেখতে পাচ্ছে না।

 অন্য চোখটিতেও আঘাত পেয়েছে। ১০ দিন ওপরে রেখে আহত কুমিরটিকে চিকিৎসা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

হজরত খানজাহানের মাজারের প্রধান খাদেম শের আলী ফকিরসহ স্থানীয়রা খানজাহানের দিঘিতে রাতের আঁধারে জাল পেতে মাছ ধরা বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। একই সঙ্গে তারা দিঘিতে জাল পাতা বন্ধ করা না গেলে অবশিষ্ট দুটি কুমির জালে বেঁধে মারা পড়ার পাশাপাশি শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কুমির বিশেষজ্ঞ আজাদ কবির জানান, পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও’র মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আহত কুমিরটিকে দিঘি থেকে ওপরে উঠানোর পরে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি। কুমিরটির চোয়ালের মাঝে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। একটি চোখে মোটেও দেখতে পাচ্ছে না। অন্য চোখটিতেও ঝাপসা দেখছে। যে কেউ চোখে ও চোয়ালে আঘাত করার কারণে কুমিরটি গুরুতর আহত হয়েছে। কুমিরটিকে দুটি ইনজেকশনসহ দুই দিন ধরে বিভিন্ন প্রকার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান বলেন, কুমিরটিকে ওপরে উঠানোর পরে আমরা তাৎক্ষণিক কিছু ওষুধ প্রয়োগ করেছি। কুমিরটির চোখ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত। বৃহস্পতিবারও কুমিরটি চোখ খোলেনি। আহত কুমিরটিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। আমরা কুমিরটিকে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব। আশা করছি আহত কুমিরটিকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে।

সর্বশেষ খবর