সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

পুলিশ সদস্যের ইয়াবা সিন্ডিকেট

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

পুলিশ সদস্যের ইয়াবা সিন্ডিকেট

ভিডিও দেখতে কিউআর কোড স্ক্যান করুন

‘ঠিক যেন বলিউডের কোনো মুভি ট্রেইলার। পুলিশের এক সদস্য নির্দেশনা দিচ্ছেন কীভাবে কার কাছে পৌঁছে দিতে হবে ইয়াবার চালান। আবার ইয়াবার চালান জব্দ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে ‘ক্যারিয়ার’কে হুমকি দিচ্ছেন দেখে নেওয়ার।’

বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে আসা কয়েকটি কল রেকর্ড এবং ভিডিওচিত্রে উঠে এসেছে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানার এক পুলিশ সদস্যের ইয়াবা ব্যবসার ভয়ংকর চিত্র। অভিযোগ রয়েছে পুলিশ সদস্য মানিকচন্দ্র রক্ষিতের নেতৃত্বেই চলে ইয়াবার নতুন জোন হয়ে ওঠা বাঁশখালীর মাদক বাণিজ্য। বাঁশখালী থানার ওসি শফিউল কবির বলেন, ‘কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার সত্যতা পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এসব বিষয়ে অভিযুক্ত মানিক রক্ষিত বলেন, ‘ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। নিজেও নেশা করি না।’ ভিডিও এবং অডিও ক্লিপের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য মানিকচন্দ্র রক্ষিতের কয়েকটি কল রেকর্ড এবং ভিডিও ক্লিপ হাতে এসেছে বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে। একটি কল রেকর্ডে মানিককে বলতে শোনা যায়, নগরীর কোথায় এবং কার কার কাছে ইয়াবার চালান পৌঁছে দিতে হবে- সেই নির্দেশনা। অপর একটি কল রেকর্ডে উঠে আসে গত ২ জুলাই সিএমপির বাকলিয়া থানায় মানিকের পাঠানো ২ হাজার পিস ইয়াবা জব্দের ইতিবৃত্ত। ওই কল রেকর্ডে মানিক উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘কে আমার জিনিস ধরিয়ে দিয়েছে। তুই আমার জিনিস ধরিয়ে দিয়েছ। সাত দিনের মধ্যে তোকে দেখে নেব।’ এ হুমকি দেওয়ার চার দিনের মাথায় ইয়াবার চালান ধরিয়ে দেওয়ার ‘অপরাধে’ জাহাঙ্গীর আলম নামে পুলিশের এক সোর্সকে বাঁখশালী থানায় একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এ ছাড়া মানিক রক্ষিতের ইয়াবা সেবনের একটি ভিডিও-ও এসেছে বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে। ওই ভিডিওতে দেখা যায় অজ্ঞাতনামা এক নারীকে নিয়ে ইয়াবা সেবনে করছেন বিতর্কিত এই পুলিশ সদস্য।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে ইয়াবা পাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপের কারণে রুট পরিবর্তন করে ইয়াবা মাফিয়ারা। এ মহাসড়কের পরিবর্তে ইয়াবা পাচারের নতুন ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে বাঁশখালীর উপকূল এবং পেকুয়া-বাঁশখালী সড়ক ব্যবহার করছে। ফলে টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে প্রায়ই বড় বড় চালান আসছে এ উপজেলা দিয়ে। এ সুযোগে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নিয়ে কথিত সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন বাঁশখালী থানার কথিত ক্যাশিয়ার মানিকচন্দ্র রক্ষিত। কক্সবাজার থেকে ইয়াবা এনে নিজের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তা চট্টগ্রাম নগরীতে বিক্রি করেন।

পুলিশ কনস্টেবল মানিকচন্দ্র রক্ষিত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঘুরেফিরে সিএমপি ও চট্টগ্রাম রেঞ্জে চাকরি করে আসছে। সিএমপিতে থাকাকালীন গোয়েন্দা পুলিশ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, বন্দর এবং কোতোয়ালি থানার কথিত ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীসহ অপরাধী চক্রের সঙ্গে তার সখ্যতার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় পরে তাকে অন্য রেঞ্জে বদলি করা হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ফের ফিরে আসেন চট্টগ্রাম রেঞ্জে।

সর্বশেষ খবর