বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

খুনি পুলিশ দুজনই ছদ্মবেশে

মির্জা মেহেদী তমাল

খুনি পুলিশ দুজনই ছদ্মবেশে

খুন করেই খুনি ঢাকা ছেড়েছেন। তার অবস্থান চট্টগ্রামে। খুনি সেখানে ভাড়ায় সিএনজি চালাচ্ছেন। এমন তথ্যই এসেছে পুলিশের কাছে নানা মাধ্যমে। কিন্তু চট্টগ্রাম শহর তো আর ছোট নয়। কোথায় খুঁজবে খুনিকে? এমন প্রশ্নের জবাব সহসাই পাওয়া যাবে না জেনেও চট্টগ্রামের দিকে ছুটল পুলিশের অভিযানিক দল। তাদের টার্গেট খুনিকে ধরা। তা যেভাবেই হোক। চট্টগ্রাম শহরের সিএনজি অটো-রিকশার সব গ্যারেজেই প্রয়োজনে লোক লাগানো হবে, এমন সিদ্ধান্ত তারা নিয়ে রেখেছে। চট্টগ্রামে পৌঁছে কাজ শুরু করে দিয়েছেন পুলিশের কয়েকজন চৌকস কর্মকর্তা। ছদ্মবেশী খুনিকে ধরতে ঢাকা মহানগর পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আল-আমিন শেখ নিজেও ছদ্মবেশ নিলেন। খুনি যেহেতু  সিএনজি চালকের ছদ্মবেশ নিয়েছেন, পুুলিশ কর্মকর্তাও নিলেন সিএনজি চালকের ছদ্মবেশ। সিএনজি চালকের ছদ্মবেশ নিয়ে এ কর্মকর্তা ঘুরে বেড়াতে থাকলেন চট্টগ্রাম শহরের অলিগলি-রাজপথ। ২০১৯ সালের ১ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পাশে সাদেক খান রোডে একটি বাসায় খুন হন গৃহবধূ শারমিন আক্তার। তার মুখে স্কচটেপ লাগানো ছিল। পায়ের রগ ছিল কাটা। শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। স্বামী আমির হোসেনের সঙ্গে ওই বাসায় ভাড়া থাকতেন তিনি। ঘটনার পর আমির পালিয়ে যান। শারমিনকে প্রথমে উদ্ধার করে শ্যামলীতে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যান ওই বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিনই আমির হোসেনকে আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন শারমিনের বাবা। পরে মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই। পিবিআই জানতে পারে, যৌতুকের জন্যই এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। ৩০ জুন শারমিনের কাছে যৌতুকের টাকা চান আমির। শারমিন তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমির ১ জুলাই সকালে তার শাশুড়ি ফজিলাত বেগমকে ফোন করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। তা না হলে মেয়েকে হত্যা করে খাটের নিচে ফেলে রাখবেন বলে জানান তিনি। শারমিনের মায়ের বাসা মোহাম্মদপুরের নবীনগরে। পরে ওই দিন ভোরে আমির শারমিনকে হত্যা করে শাশুড়িকে ফোন করে বলেন, ‘টাকা তো দিলা না, খাটের নিচ থেকে লাশ নিয়া দাফন কইরো।’ এর মধ্যে মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ ফজিলাত বেগমকে ফোন করে পঙ্গু হাসপাতালে আসতে বলে। সেখানে গিয়ে মেয়ের লাশ পান তিনি।

এদিকে পিবিআইয়ের দল চট্টগ্রামে আমির হোসেনের খোঁজে। ঢাকা মহানগর পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আল-আমিন শেখ জানান, তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি, আমির হোসেনের অবস্থান চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকায়। এরপর আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে গ্রেফতারের দুই দিন আগেই আমি চট্টগ্রামে যাই। পালিয়ে যাওয়া শারমিন হত্যার আসামি আমির হোসেন পেশায় একজন সিএনজি চালক ছিলেন। তাই তিনি চট্টগ্রামে পালিয়ে গিয়ে সেখানেও সিএনজি চালানোর চেষ্টা করছিলেন। সে কারণে আমি নিজেও সিএনজি মালিকের কাছে গিয়ে আগের দিন বলেছি যে, আমি সিএনজি চালাতে পারি। আমাকে যেন সিএনজি চালানোর একটা কাজ দেওয়া হয়।

পরে পুলিশের এ কর্মকর্তা সিএনজি নিয়ে ঘুরতে থাকেন চট্টগ্রাম শহরের অলিগলিতে। অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আমির হোসেনের অবস্থান জেনে যান উপপরিদর্শক আল আমিন। সময় নষ্ট করেননি। সর্বশেষ ওই এলাকার এক দারোয়ানের আশ্রয়ে থাকা ব্যক্তির বাসা থেকে আমির হোসেনকে গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে যান আল আমীন।

সর্বশেষ খবর