বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

ধর্ষণের পর বিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করে মাটিচাপা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বরগুনার পাথরঘাটায় সুমাইয়া (১৮) নামে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় জেলে যান শাহিন মুন্সি (২১)। তিন মাস হাজতবাসের পর শাহিন জামিনে বেরিয়ে বিয়ে করেন ওই সুমাইয়াকে। বিয়ের পরে দাম্পত্য কলহের জের ধরে এক দিন স্ত্রী ও ৯ মাসের কন্যাকে হত্যার পর মাটিচাপা দিয়ে পালিয়ে যান।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় করা মামলার তদন্ত শুরুর পর সোমবার বিকালে চট্টগ্রামের বন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে   শাহিন মুন্সিকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহিন মুন্সি স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করে মাটিচাপা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

গতকাল রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুক্তা ধর। তিনি জানান, গত ৩০ জুন সুমাইয়া পাথরঘাটার হাতেমপুর এলাকায় বাবার বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে সন্ধ্যায় শ্বশুরবাড়িতে ফেরেন। পরে ২ জুলাই সুমাইয়ার ছোট বোন সুমাইয়ার খোঁজ জানতে চাইলে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানায়, দাওয়াত খাওয়ার পর থেকে সুমাইয়াকে এবং তার কন্যাকে দেখা যায়নি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সুমাইয়ার শ্বশুরবাড়ির ঘরের পাশেই এক স্থানে মাটি আলগা দেখা যায়। ৩ জুলাই সকালে ওই স্থানের মাটি খুঁড়লে সুমাইয়া ও তার সন্তানের লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় সুমাইয়ার বাবা রিপন বাদশা পাথরঘাটা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় সুমাইয়ার স্বামী শাহিনকে প্রধান আসামি করা হয়।

মুক্তা ধর বলেন, চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা গণমাধ্যমে এলে সিআইডির একটি বিশেষ দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের বন্দর এলাকা থেকে শাহিন মুন্সিকে গ্রেফতার করা হয়। শাহিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, গত ১ জুলাই সন্ধ্যা থেকে সুমাইয়ার সঙ্গে তার প্রচন্ড বাগবিতন্ডা হয়। এর মধ্যে সুমাইয়া ঘর থেকে বের হলে শাহিনও তার পেছন পেছন বের হন। ঘরের পেছনে মাছ ধরার বড়শি রাখা ছিল। সুমাইয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই বড়শির লাইলনের সুতা দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন শাহিন। এরপর শাহিন ঘরে ফিরলে তার ৯ মাস বয়সী শিশু সন্তান কান্নাকাটি শুরু করলে তাকেও বাড়ির পাশের খালে নিয়ে চুবানো হয়। পরে ডোবার পাশেই কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ে স্ত্রী-সন্তানকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যান শাহিন। প্রথমে তিনি খুলনা পালিয়ে যান। এরপর সেখান থেকে আত্মগোপনের জন্য চট্টগ্রাম গিয়ে শুধুমাত্র থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে একটি গ্যারেজে চাকরি নেন। সিআইডি সূত্র জানায়, গত বছরের ১৪ জুলাই সুমাইয়াকে ধর্ষণের অভিযোগে শাহিন মুন্সির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ওই মামলায় তিন মাস জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে সুমাইয়াকেই বিয়ে করেন শাহিন মুন্সি। এ বিষয়ে মুক্তা ধর বলেন, ধর্ষণের মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ওই মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। সুমাইয়াকে বিয়ে করার শর্তে শাহিনের জামিন হয়েছিল কি-না সে সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তবে শাহিনের জামিনের বিষয়ে বাদীপক্ষের কোনো আপত্তি ছিল না।

সর্বশেষ খবর