শুক্রবার, ১৬ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

সদস্যদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ জেএমবির

আফগানিস্তান গেছে দুই জঙ্গি

সাখাওয়াত কাওসার

সদস্যদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে নব্য জেএমবি। এজন্য তৈরি করা হয়েছে বিশেষ ম্যানুয়াল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা সদস্যরা যাতে বোমা বিস্ফোরণ করে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে পারে সে জন্যই নেওয়া হয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা। প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে অনলাইন লাইভে। বিশেষ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে লক্ষ্য করেই এগোচ্ছে তারা। অন্যদিকে, আফগানিস্তানে চলমান অস্থিরতার মধ্যে পাড়ি জমিয়েছে আনসার আল ইসলামের দুই জঙ্গি। যাওয়ার জন্য আরও অনেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে নিশ্চিত করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটসহ একাধিক সূত্র। তবে বিষয়টি নিয়ে তারা রীতিমতো অস্বস্তিতে ভুগছে। সিটিটিসির প্রধান ডিআইজি আসাদুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হঠাৎ করেই জঙ্গিরা তৎপর হওয়ার চেষ্টা করছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। নারায়ণগঞ্জেও তারা আস্তানা তৈরি করেছিল। তবে তারা আমাদের নজরদারি এড়াতে পারেনি। কেউ কেউ আফগানিস্তানে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, যারা দেশকে ভালোবাসবে তারা কখনো এমন জঘন্য কাজ করতে পারে না। একই সঙ্গে তাদের বোঝা উচিত কেউই নজরদারির বাইরে নয়।

জানা গেছে, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস ফোরকান বর্তমানে নব্য জেএমবির বোমা তৈরির প্রধান কারিগর হিসেবে কাজ করছে। তার অন্যতম প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করে সাব্বির হোসেন ওরফে জন ডেভিড নামে আরেক তরুণ। সাব্বির নব্য জেএমবির ময়মনসিংহ অঞ্চলের দায়িত্বশীল সামরিক কমান্ডার। সে ময়মনসিংহ, জামালপুর ও টাঙ্গাইল এলাকার অনেক তরুণকে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে হাতে-কলমে ও অনলাইনে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা আবারও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে হামলার পরিকল্পনা করছে। এরই অংশ হিসেবে গত মে মাসে তারা নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে দূরনিয়ন্ত্রিত বোমা বা আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) রেখে এসেছিল। রবিবার নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি আস্তানা আবিষ্কারের পর গ্রেফতারদের কাছ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। মাঝে কিছুদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর নব্য জেএমবি পুনরায় আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে মাঠে নেমেছে। মাহাদী হাসান জন নামে এক ব্যক্তি এ সংগঠনের বর্তমান আমির আবু আব্বাস আল বাঙালি পরিচয়ে তুরস্কে বসে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। তার নির্দেশনাতেই সংগঠনের প্রত্যেক সদস্যকে বোমা তৈরিতে দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অল্প টাকা অর্থাৎ ২-৩ হাজার টাকা খরচ করে কীভাবে সহজেই বোমা তৈরি করা যায়, এরকম একটি ম্যানুয়াল তৈরি করেছে নব্য জেএমবির সদস্যরা। এ বোমা তৈরির উপকরণ খোলা বাজারে সহজলভ্য। এসব উপকরণ সংগ্রহের পর ঘরে বসেই বোমা তৈরি করা যায়। যা অনেক বেশি শক্তিশালী না হলেও বিস্ফোরিত বোমার কেন্দ্র থেকে অন্তত ২০-২৫ বর্গমিটার এলাকায় থাকা মানুষ হতাহত হতে পারে। প্রতিটি বোমাই দূরনিয়ন্ত্রিত ডিভাইসের মাধ্যমে বিস্ফোরণের কৌশল শেখানো হচ্ছে। এদিকে, আনসার আল ইসলামের জঙ্গিরা দীর্ঘদিন ধরে চুপচাপ থাকলেও বর্তমানে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি তাদের উজ্জীবিত করে তুলেছে। এরই মধ্যে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখছে ইন্টারনেট-ভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে। এমনই একটি ক্লোজ গ্রুপের নাম ‘সায়েন্স প্রোজেক্ট’। এ চ্যাট গ্রুপের ১০ তরুণের মধ্যে তিনজন আফগান যাত্রা করেছে। তাদের দুজন আফগানিস্তানে পৌঁছার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। এ দুজন হলো কুমিল্লার আবদুর রাজ্জাক ও সিলেটের শিব্বির আহমেদ। রাজ্জাক সিলেটের একটি মাদরাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি গাড়ি চালাত। তার সন্ধান চেয়ে ভাই সালমান খান ২৫ মার্চ সিলেটের কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। আর রবিউল নামে নোয়াখালীর এক তরুণও আফগানের উদ্দেশ্যে বাড়ি ছেড়েছে। তবে গত মে মাসে ওই গ্রুপেরই চারজনকে সিটিটিসি গ্রেফতার করে। তারা আফগান যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিরা যত কৌশলই করুন না কেন, তারা কোনোভাবেই আমাদের নজরদারির বাইরে যেতে পারবে না। জঙ্গিবাদ দমনে র‌্যাবের প্রতিটি সদস্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। উগ্রপন্থায় চলে গেছেন কিংবা যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন এমন ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের পরামর্শ হলো, এখনো সময় আছে আলোর পথে ফিরে আসুন। আপনাদের ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মগজধোলাই করা হয়েছে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে আপনাদের সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে। সিটিটিসি ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, নব্য জেএমবি আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এখন বোমা তৈরির ওপর বিশেষ করে প্রত্যেক সদস্যকে বোমা তৈরিতে দক্ষ করে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে এমন তথ্য আমরা পেয়েছি। জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সর্বশেষ খবর