শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

কোরবানির হাটে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা, ট্রাকে ট্রাকে আসছে গরু, ক্রেতাদের অভিযোগ দাম বেশি

প্রতিদিন ডেস্ক

কোরবানির হাটে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে লকডাউন শিথিল করে পশুর হাটগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত হিসেবে প্রশাসনিক কিছু বিধিবিধান মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। যার প্রধান বিষয় হলো পশুর হাটগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে। অর্থাৎ করোনা রুখতে মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সবাইকে স্বাস্থ্যসচেতন থেকে সরকারি বিধি মানতে হবে। এমন শর্ত পালনের অঙ্গীকারে পশুর হাট চালু হলেও বাস্তবে শর্ত বা বিধিবিধানের কথা সবাই ভুলে গেছেন। ফলে সব হাটই এখন চলছে গাদাগাদি অবস্থায় উপচে পড়া ভিড়ে মানুষ-পশু একাকার হয়ে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো সরেজমিন তথ্য-

রাজধানী : করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ায় রাজধানীতে ঈদ সামনে রেখে বসেছে পশু বিক্রির হাট। দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ট্রাকে ট্রাকে হাটগুলোয় আসছে গরু-মহিষ ও ভেড়া-ছাগল। চলছে জনসচেতনতামূলক মাইকিং। তবে অধিকাংশ হাটেই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে না। বলতে গেলে নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই। হাটগুলোর প্রবেশপথে পর্যাপ্ত সাবান-বেসিন স্থাপনের নির্দেশনা থাকলেও তা দেখা যায়নি। একমুখী চলাচলের শর্তও মানছেন না কেউ। নেই তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র। এ অবস্থায় কোরবানির পশুর হাট থেকে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। হাটে আসা কয়েকজন গরু ব্যবসায়ীকে মাস্কের কথা জিজ্ঞসা করলে উত্তর- ‘কতক্ষণ মাস্ক পরে থাকা যায়? প্রতিদিন একটা কইরা মাস্ক কই পাব।’ হাটে স্বাস্থ্যবিধি পালনের বিষয়ে উত্তর সিটি অংশের ইজারাদার মাহবুবুর রহমান শিমুল বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছি। হাটটি অনেক বড়। ফলে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা মাস্ক, স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখছি।’ শুধু আফতাবনগর ইস্টার্ন হাউজিং নয়, রাজধানীর শাহজাহানপুর, মেরাদিয়া, বছিলা, গোপীবাগ বালুর মাঠ, দনিয়া কলেজ মাঠ, ধূপখোলাসহ অধিকাংশ হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে।

রাজশাহী : জমজমাট হয়ে উঠেছে রাজশাহীর পশুর হাট। সকাল থেকেই মহানগরীর ‘সিটি হাট’ পশুর হাটে ক্রেতার উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাটে                 কেনাবেচার নির্দেশনা থাকলেও কোনো হাটেই তা মানা হচ্ছে না। সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই। সংক্রমণের শঙ্কা থাকলেও ক্রেতা-বিক্রেতার কেউই একে পরোয়া করছেন না। গতকাল গরু কিনতে আসা আবু রায়হান বলেন, হাটে কোনো স্বাস্থ্যবিধি নেই। মানুষের সঙ্গে মানুষ গা ঘেঁষে আছে। হাটের পাশের চা দোকানগুলোয় প্রচ- ভিড়। রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতন করতে আমরা বারবার মাইকিং করছি। কিন্তু মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করছি।’

রংপুর : হাটগুলো খুলে দেওয়ায় জমজমাট হয়ে উঠেছে পশুর হাট। তবে সরকারের ১২ দফা নির্দেশনা কেউই মানছে না। মুখে অনেকের মাস্ক থাকলেও সামাজিক দূরত্ব মানার বালাই নেই। ঠেলাঠেলি করে গরু কেনাবেচা হচ্ছে।

সাতক্ষীরা : সরেজমিনে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা পশুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে প্রচুর গরু ও ছাগল বেচাকেনা চলছে। ক্রেতা-বিক্রেতার উপচে পড়া ভিড়। ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখার কোনো বালাই নেই। ক্রেতা-বিক্রেতার একমুখী চলাচল, তাপ মাপা যন্ত্র এবং হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত বেসিন, সাবান রাখতে বলা হলেও কিছুই রাখা হয়নি।

দিনাজপুর : সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানির স্থায়ী পশুর হাট বসানো হয়েছে উল্লেখ থাকলেও সরেজমিনে গতকাল দিনাজপুরের আমবাড়ী ও খানপুর হাট ঘুরে দেখা গেছে শরীরের সঙ্গে শরীর লাগিয়ে চলছে বেচাকেনা। সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। মাস্ক কারও মুখের নিচে, আবার কারও নেই-ই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য কর্তৃপক্ষ মাইকিং করলেও কেউ শুনছেন না সেসব।

গাইবান্ধা : কোরবানির পশুর হাট জমতে শুরু করলেও জমছে না স্বাস্থ্যবিধি মানা। গাইবান্ধার কোনো হাটেই মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। দারিয়াপুর, ভরতখালি, মাঠের হাট, লক্ষ্মীপুর, সাদুল্যাপুর, ধাপের হাটসহ জেলার সব পশুর হাটে ক্রেতা বিক্রেতার ভিড় দেখা গেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের ব্যবস্থা করে জেলা প্রশাসন হাটগুলো পরিচালনার অনুমতি দিলেও ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ তা মানছেন না।

বরিশাল : বরিশালে জেলা কিংবা মহানগরের পশুর হাটগুলোয় স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। ক্রেতা-বিক্রেতার অধিকাংশই মাস্ক ব্যবহার করেন না। তাদের করোনাভীতি আছ বলে দৃশ্যত মনে হয় না। এ নিয়ে তেমন মাথাব্যথাও নেই কোনো কর্তৃপক্ষের।

নোয়াখালী : স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে নোয়াখালীর বিভিন্ন হাটবাজারে বসেছে পশুর হাট। এসব হাটে চরমভাবে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য মাইকিং ও মোবাইল টিম মাঠে কাজ করছে। স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের জরিমানা করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক। তবে মুনাফাভোগী ইজারাদাররা মানছেন না সরকারি বিধিনিষেধ। এ ব্যাপারে দত্তের হাট বাজারের ইজারাদার আবদুল মমিন বলেন, ‘গরুর হাট বন্ধ করে করোনা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।’ আটকপালিয়া বাজারে গরু কিনতে আসা আলাউদ্দিন বলেন, ‘সবকিছু স্বাভাবিক সময়ের মতোই চলছে। কেউ তো সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। এমনকি মুখে মাস্কও ব্যবহার করছেন না। ব্যবসায়ীরাও ক্রেতাদের কিছুু বলছেন না।’

মেহেরপুর : মেহেরপুরের বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বালাই নেই। অসংখ্য মানুষ গরু-ছাগল নিয়ে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন হাটের বিভিন্ন স্থানে।

সিরাজগঞ্জ : স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট শুরুর কথা থাকলেও সিরাজগঞ্জের পশুর হাটগুলোয় ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। হাট ইজারাদারদের দাবি, হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরণ ও মাইকিং করা হচ্ছে। তবু অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।

পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ের হাটে ক্রেতা-বিক্রেতারা মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। অধিকাংশ মানুষই মাস্ক পরছেন না। মানছেন না সামাজিক দূরত্ব। ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিধি আরও বেড়ে যাচ্ছে।

নওগাঁ : নওগাঁয় নির্ধারিত ২৮টি হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত হয়নি। হাটে জেলার বিভিন্ন স্থানসহ পাশের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে এসেছে হাজার হাজার ক্রেতা-বিক্রেতা। জেলা প্রশাসন স্বাস্থ্যবিধি মানা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে খোলা স্থানে হাট বসানোর অনুমতি দিলেও হাটে পা ফেলার জায়গা মিলছে না। অধিকাংশ মানুষের মুখেই মাস্ক নেই।

কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের গরুর হাটগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। বেশির ভাগ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক পর্যন্ত নেই। প্রশাসনের খুব একটা নজরদারিও নেই।

বগুড়া : বগুড়ার সব হাটে পশু উঠতে শুরু করেছে। তবে এসব স্থানে কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।

নড়াইল : নড়াইলের গরুর হাটে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। ক্রেতা-বিক্রেতার উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে হাটগুলোয়। গতকাল জেলার সবচেয়ে বড় হাট মাইজপাড়ায় দেখা গেছে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেই গরু কেনাবেচা চলছে।

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে অবাধ চলাফেরার সঙ্গে গাদাগাদি করে বসছে পশুর হাট। হাটগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। দেখা গেছে মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছে বহু মানুষ। অনেকেই জানেন না সামাজিক দূরত্বের বিষয়টিও। পশুর হাটে হাজারো মানুষের ভিড়ে অসহায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ভোলা : ভোলায় কোরবানির পশুর হাটগুলো বেশ জমে উঠেছে। জেলায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ৯৩টি নির্ধারিত হাটের বাইরেও স্থানীয়ভাবে বসানো হচ্ছে পশুর হাট। এ ছাড়া অনেক ক্রেতা খামারি কিংবা কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানির পশু কিনছেন। তবে কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। সামাজিক নিরাপদ দূরত্ব রজায় রাখা হচ্ছে না। এমনকি মুখে মাস্কও পরছেন না অনেকে। যারা মাস্ক পরেছেন তার অধিকাংশই আবার নাক-মুখ থেকে নামিয়ে থুতনিতে পরেছেন।

সর্বশেষ খবর