শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

এক মাসে রোগী বেড়েছে তিন গুণ

২৪ ঘণ্টায় ১৮৭ মৃত্যু, শনাক্ত ১২ হাজার ১৪৮

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক মাসে রোগী বেড়েছে তিন গুণ

১৬ জুন থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত এক মাসে দেশে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে তিন গুণের বেশি। এ সময় মারা গেছেন ৪ হাজারের বেশি মানুষ, যা যে কোনো মাসের তুলনায় বেশি। রোগীর সংখ্যা বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ ও অক্সিজেন সংকট প্রকট হয়েছে। হাসপাতালে জায়গা না হওয়ায় অনেক সংকটাপন্ন রোগীর মৃত্যু হচ্ছে বাড়িতে। সরকারি হিসাবে গতকাল পর্যন্ত ৩৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বাড়িতে। এ ছাড়া ২০ জন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণে ১৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালে ১৭৫ জন ও বাড়িতে ১২ জন মারা গেছেন। গত একদিনে ৪১ হাজার ৯৪৭টি নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১২ হাজার ১৪৮ জনের দেহে। শনাক্তের হার ২৮.৯৬ শতাংশ, যা আগের দিনের চেয়ে ১.৭৩ শতাংশ বেশি। এ সময় সুস্থ হয়েছেন ৮ হাজার ৫৩৬ জন। গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ১০ লাখ ৮৩ হাজার ৯২২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৭ হাজার ৪৬৫ জন ও সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ ১৪ হাজার ৩৪৩ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের গত এক মাসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৬ জুন দেশে চিকিৎসাধীন (সুস্থ ও মৃত্যু বাদে) করোনা রোগী ছিল ৫০ হাজার ২১৩ জন। গতকাল সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জন। এই ৩০ দিনে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার  ৬৭৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৪০ হাজার ৫৯১ জন। মারা গেছেন ৪ হাজার ১৮৩ জন। মহামারী শুরুর পর এখন পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে গত এপ্রিলে। আর চলতি জুলাই মাসের ১৬ দিনেই মারা গেছেন ২ হাজার ৯৬২ জন। শনাক্তের তুলনায় সুস্থতা কমে যাওয়ায় গত ৩০ দিনে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা বেড়েছে তিন গুণ।

গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৮৭ জনের মধ্যে ১১৩ জন ছিলেন পুরুষ ও ৭৪ জন নারী। সর্বোচ্চ ৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এ ছাড়া ৩৯ জন খুলনা, ৩৬ জন চট্টগ্রাম, ১৪ জন রাজশাহী, নয়জন সিলেট, আটজন বরিশাল, সাতজন ময়মনসিংহ ও ছয়জন রংপুর বিভাগে মারা গেছেন। বয়স বিবেচনায় মৃতদের মধ্যে ১০১ জন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব, ৩৬ জন পঞ্চাশোর্ধ্ব, ৩০ জন চল্লিশোর্ধ্ব, ১১ জন ত্রিশোর্ধ্ব, সাতজন বিশোর্ধ্ব ও দুজনের বয়স ছিল ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। নমুনা পরীক্ষায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ শনাক্তের হার ছিল সিলেট বিভাগে ৪৫ শতাংশ। এ ছাড়া বরিশাল বিভাগে ৪০ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩০.৯৪ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ৩০ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ২৮.৬৩ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৬.৯৩ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ২৩ শতাংশ ও রংপুর বিভাগে ১৯.৫৭ শতাংশ ছিল শনাক্তের হার। এক দিনের ব্যবধানে গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে শনাক্তের হার বেড়েছে। কমেছে অন্য চার বিভাগে। এদিকে করোনা পজিটিভ রোগীর মৃত্যুর পাশাপাশি অনেক রোগী মারা যাচ্ছে উপসর্গ নিয়ে। নমুনা পরীক্ষার আগেই মৃত্যু হওয়ায় জানা যাচ্ছে না মৃত্যুর প্রকৃত কারণ। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও তথ্য-

বরিশাল : বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) করোনা ওয়ার্ডে আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩ শতাধিক রোগী। অপরদিকে মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৬৮.৬১ ভাগ। এ ছাড়া শেবাচিমে রোগীর তুলনায় ডাক্তার-নার্স এবং অন্যান্য কর্মচারীর সংখ্যা একেবারে অপ্রতুল। জরুরি মুহূর্তে ডাক্তার পাওয়া যায় না। সময়মতো পাওয়া যায় না অক্সিজেন। আইসিইউর অভাবে ছটফট করে মারা যাচ্ছেন মুমূর্ষু রোগীরা। করোনা ওয়ার্ডে ৩০০ রোগীর জন্য ডাক্তার রয়েছেন মাত্র নয়জন, নার্স ৫৯ জন এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রয়েছেন ছয়জন। পর্যায়ক্রমে ৩ শিফটে দায়িত্ব পালন করেন তারা। সে হিসেবে বর্তমানে ১০০ জন করোনা রোগীর জন্য রয়েছেন মাত্র একজন ডাক্তার।

খুলনা : বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে পাঁচটিতে এখনো করোনা পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে খুলনা, কুষ্টিয়া, যশোর ও ঝিনাইদহে প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। বিভাগের মধ্যে  দৈনিক মৃত্যু ও সংক্রমণে শীর্ষে রয়েছে খুলনা জেলা। এদিকে খুলনার চার হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা উপসর্গ নিয়ে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনজনের মৃত্যু হয়।

সিলেট : চলতি মাসে মাত্র ১৫ দিনে সিলেটে করোনার ছোবলে মারা গেছেন ৭৭ জন। একই সময়ে শনাক্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৩২ জন। সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল জানান, গত বছরের মার্চে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়ার পর মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে সিলেটে এত বেশি সংখ্যক মানুষের আক্রান্ত হওয়া ও মারা যাওয়ার চিত্র আগে দেখা যায়নি। বর্তমান পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক।

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা আক্রান্তে নয়জন এবং উপসর্গ নিয়ে চারজন মারা যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৯৩ জন ভর্তিসহ করোনার চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪৪০ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ২১ জন।

সর্বশেষ খবর