মঙ্গলবার, ২০ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

হাটে পশু বেশি বিক্রিও বেশি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

হাটে পশু বেশি বিক্রিও বেশি

আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আজহা। এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার কোরবানির পশুর হাটে গতকাল পুরোদমে জমে ওঠে বেচাকেনা। হাটগুলোয় দেখা গেছে বিপুলসংখ্যক গরু, ছাগল, মহিষসহ বিভিন্ন গবাদি পশু। ট্রাকে ট্রাকে আসছিল কোরবানির পশু।

হাটের বাইরে মূল সড়কেও পশু কেনাবেচা হয়েছে। হাটকেন্দ্রিক সড়কগুলোয় দেখা গেছে তীব্র যানজট। তবে গতকালও হাটগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। অবশ্য গাবতলী পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ইজারাদারকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন। সার্বিক পরিস্থিতি দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মেয়র।

তিনি উল্লেখ করেন, হাটের সার্বিক চিত্র তাঁর কাছে মোটেও ভালো লাগেনি। হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এ সময় যারা মাস্ক ছাড়া হাটে প্রবেশ করেন মেয়র তাদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করেন। মাস্কবিহীন অনেক ব্যবসায়ীকে তিনি মাস্ক পরিয়ে দেন।

হাটগুলোয় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দরদাম শেষে পছন্দের পশু কিনে নিয়ে যান। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিরল প্রজাতির দুটি সাদা মহিষ উঠেছে সূত্রাপুর হাটে। বিক্রেতা দাম হাঁকিয়েছেন ১০ লাখ টাকা। মেরাদিয়া পশুর হাটে দখা গেছে, নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় হাট মেরাদিয়া এলাকার মেইন রাস্তাসহ অলিগলিতে এমনকি নির্মাণাধীন বাসার নিচেও ছড়িয়ে পড়েছে।

চলেছে নানা অফার : কেনাবেচায় রাজধানীর হাটগুলোয় ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিক্রেতারা নানা অফারও দিয়েছেন। শনিরআখড়ার হাটে সাড়ে ১২ লাখ টাকার একটি ষাঁড়ের সঙ্গে ৮০ হাজার টাকার একটি খাসি ফ্রি দেওয়ার ঘোষণা দেন মোস্তফা শেখ। তার মতো আরও অনেককেই এভাবে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মনোযোগী হতে দেখা গেছে।

গরুর বাহারি নাম নজর কেড়েছে : রাজা, বাদশাহ, জমিদার, বাহাদুর, রাজাবাবু এমন অনেক নাম ছিল গরুর। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা হাটে ওঠে বাহাদুর ও জমিদার নামে দুটি গরু। বাহাদুরের ওজন ১ হাজার ১১ কেজি, জমিদারের ৮০৫ কেজি। হলিস্টিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের গরু বাহাদুরের দাম হাঁকা হয় ৮ লাখ টাকা আর ফ্রিজিয়ান জাতের জমিদারের ৬ লাখ।

ছিল না স্বাস্থ্যবিধি : বেগুনবাড়ীর বাসিন্দা আখতারুজ্জামান দুই শিশু ছেলেসহ পরিবারের চারজনকে নিয়ে আসেন মেরাদিয়া হাটে। তাদের গরুর এক পাল থেকে আরেক পালে ঘুরে ঘুরে দামদর করতে দেখা গেছে। জিজ্ঞাসা করতেই মাঝবয়সী এই ব্যক্তি বলেন, ‘বাসা কাছাকাছি, তা ছাড়া হাটে এসে ছেলেদের গরু দেখানোর শখ আছে বিধায় এদের নিয়েই এসেছি। পছন্দ হলে কিনে নিয়ে চলে যাব।’ করোনাভাইরাস সংক্রমণের অতি বিস্তারের মধ্যে পশুর হাটে আসার সরকারি নির্দেশনার বিষয় মনে করিয়ে আরও কিছু জিজ্ঞাসা করতে গেলে তিনি কিছুটা লজ্জা পান। আর কিছু বলতে চাননি। নিজের পরিচয়ও জানাননি।

শুধু তিনি নন, এমন অনেককেই দেখা গেছে ঢাকার কোরবানি পশুর হাটগুলোয়। গরু কিনতে বা দেখতে দলবেঁধে শিশুরা যেমন ঘুরছে তেমনি বয়স্করাও বাদ ছিলেন না। অনেককেই দেখা গেছে দলবল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গায়ে গা লাগিয়ে। তেমনই ছয়জনের একটি দলের দেখা মেলে আফতাবনগর হাটে। তারা আসেন নারায়ণগঞ্জ থেকে। বিধিনিষেধের পরও একই পরিবারের ছয়জনের হাটে আসার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তাদের একজন আরিফুল হাসান বলেন, ‘আমরা গরু নেব দুটি। কোরবানি যেহেতু বছরে একবারই আসে, এটা শখের বিষয়, সবারই পছন্দের ব্যাপার আছে।’

স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রে প্রতিটি হাটেই সিটি করপোরশেন ও ইজারাদারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্নভাবে লোকদের মাস্ক পরানো, হাত ধোওয়া, স্বাস্থ্যবিধি মানতে সচেতন হওয়ার জন্য প্রচার চালাতে দেখা গেলেও প্রকৃত অর্থে তা গ্রাহ্য করতে দেখা যায়নি অনেককেই।

সর্বশেষ খবর