মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

ইলিশে সরগরম চাঁদপুর মাছঘাট

প্রতিদিন ডেস্ক

ইলিশে সরগরম চাঁদপুর মাছঘাট

চাঁদপুর মাছঘাট সরগরম হাতিয়ার ইলিশে। এসব ইলিশ আহরিত হয়েছে সাগর মোহনা থেকে। তবে পদ্মা-মেঘনায় কাক্সিক্ষত ইলিশ এখনো জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না। একই অবস্থা পটুয়াখালীতেও। লঘুচাপের কারণে গভীর সাগরে যেতে পারছেন না জেলেরা। কিছু ট্রলার সাগরের খুব কাছাকাছি আসা-যাওয়া করলেও জালে ইলিশ ধরা পড়ছে না। মৎস্যবন্দর আলীপুর-মহিপুর, কুয়াকাটা, ঢোস, মৌডুবিসহ উপকূলীয় এলাকার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশের আকাল দেখা দিয়েছে। ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতেও মিলছে না কাক্সিক্ষত ইলিশ। যে পরিমাণ পাওয়া যাচ্ছে তাতে ট্রলারের তেলের খরচও উঠছে না। ফলে দাদনের টাকা পরিশোধের বদলে ঋণের বোঝা বেড়েই চলেছে জেলেদের। তবে জেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, আগামী মাস থেকে জেলেদের জালে মিলবে কাক্সিক্ষত ইলিশ। লক্ষ্মীপুরে মেঘনায় কাক্সিক্ষত ইলিশ না পাওয়ায় অর্ধলক্ষাধিক জেলে ও মৎস্যজীবী পরিবারের দিন কাটছে চরম হতাশায়। এদিকে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রামের জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন না। প্রতিনিধিদের খবর-

চাঁদপুর : চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা তীরবর্তী চার উপজেলায় ৫১ হাজার ১৮৯ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। ট্রলার জেলে মাসুদ মাতববর বলেন, ‘সাগরের মোহনায় ইলিশ ধরা পড়ায় আগামী দিনগুলোয় প্রচুর ইলিশ শিকার করতে পারব বলে আশা রাখি।’ আড়তদার আবদুল মালেক খন্দকার জানান, আড়তে হাতিয়ার ইলিশ আসতে শুরু করায় মাছঘাট সরগরম হয়ে উঠেছে। চাঁদপুরের আড়তগুলোয় আজ

(গতকাল) দেড় থেকে ২ হাজার মণ ইলিশ আমদানি ছিল। ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান বলেন, ‘এখন নামার যে ইলিশ আসছে তাতে বোঝা যায় সরকারি বিভিন্ন অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যদিও আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের ভরা মৌসুম। ইলশাগুঁড়ি বৃষ্টি, নদীর পানি ঘোলা ও স্রোত বৃদ্ধি পেলেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ স্থানীয় জেলেদের জালে ধরা পড়বে। গত বছর দেশে ৫ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আহরিত হয়েছে। এ বছর সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছি।’

পটুয়াখালী : গভীর সমুদ্রে ইলিশ আহরণ করা আলীপুর মৎস্য বন্দরের জেলে দুলাল মাঝি বলেন, ‘ইলিশ প্রজননের জন্য অবরোধের সময়সীমা চার দিন আগে শেষ হলেও আবহাওয়ার কারণে সমুদ্রে যেতে পারছি না।’ আলীপুর মৎস্য বন্দরের সভাপতি ও লতাচাপলি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, উত্তাল থাকায় সাগরে নামতে পারেননি জেলেরা। কিছু ট্রলার নামলেও গভীর সাগরে যেতে না পারায় ইলিশশূন্য ফিরে আসছেন। মহিপুর মৎস্য বন্দর মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ও মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ফজজুল হক গাজী বলেন, বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে কিছু ট্রলার সাগরে নামলেও গভীর সাগরে যেতে না পারায় তারা ইলিশ পাচ্ছেন না। পটুয়াখালীর খেপুপাড়া রাডার স্টেশনের কর্মকর্তা মো. ফিরোজ কিবরিয়া জানান, দু-তিন দিন পর আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার কথা রয়েছে।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, সাগরে প্রচুর ইলিশ আছে। তাই এ বছর জেলেদের জালে বড় সাইজের ইলিশ মাছ ধরা পড়বে।

ভোলা : আষাঢ়-শ্রাবণ ইলিশের ভরা মৌসুম। এ মৌসুমে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে জালে এ আশায় ভোলার মেঘনা, তেঁতুলিয়াসহ সাগর মোহনায় প্রায় ২ লাখ জেলে প্রতিদিন জাল ফেলছেন। কিন্তু জালে মিলছে না কাক্সিক্ষত ইলিশ। যে দু-চারটি ইলিশ ধরা পড়ছে তা বিক্রি করে খরচের টাকাও উঠছে না। সংসার খরচ জোটাতে পারছেন না অনেক জেলে। এমন অবস্থায় মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ দূরের কথা সংসার খরচ চালাতে গিয়ে দিন দিন ঋণের বোঝা ভারী হচ্ছে।

সদর উপজেলার ইলিশা তেমাথা মাছঘাটের জেলে সাইদ আলী মাঝি। ১০ জন ভাগিদার নিয়ে শনিবার ভোরে মেঘনায় মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। গতকাল ভোরে ঘাটে ফিরেছেন ১ কেজি ওজনের দুটি বড় মাছ এবং আটটি জাটকা (ছোট ইলিশ) নিয়ে। বড় মাছ দুটি বিক্রি করেছেন ২ হাজার ৫০০ এবং ছোট আটটি ৬০০ টাকা। তার বরফ, তেলসহ অন্যান্য খরচ আছে ২ হাজার টাকা। বাকি ১ হাজার ১০০ টাকা ১০ জনে কীভাবে ভাগ করবেন? একই অবস্থা অন্য জেলেদের। এসব কথা জানিয়েছেন ওই মাছঘাটের আড়তদার মো. সেলিম, টিটব মোল্লাসহ অন্য আড়তদার ও জেলেরা।

জেলার অন্যতম বড় মাছঘাট চরফ্যাশন উপজেলার সামরাজ মাছঘাট। গতকাল এ রিপোর্ট লেখার সময় বিকাল ৪টায় মোবাইল ফোনে কথা হয় ওই মাছঘাটের মিজান মাঝির সঙ্গে। তখন তিনি ঢালচর এলাকার মেঘনা নদী থেকে জাল টেনে তুলছেন নৌকায়। মিজান মাঝি জানান, সকাল ১০টার দিকে প্রায় ৫ কিলোমিটার লম্বা জাল ফেলেছেন। তখন পর্যন্ত (বিকাল ৪টা) চার ভাগের এক ভাগ জাল টেনে তুলেছেন। মাছ পেয়েছেন মাত্র একটি। তিনি আরও জানান, ১০ জন ভাগিদার নিয়ে এ কোরবানি ঈদের চার দিন আগে ১৭ হাজার টাকার তেল, বরফ, চাল-ডালসহ আনুষঙ্গিক বাজার নিয়ে ঢালচর এলাকার মেঘনা নদীতে গিয়েছিলেন মাছ ধরতে। ঈদের আগের দিন ঘাটে এসে মাছ বিক্রি করেছেন ১৯ হাজার টাকার। এখন নদীতে যে মাছ পাচ্ছেন তা দিয়ে দাদনের টাকা শোধ হচ্ছে না। উল্টো ঋণের বোঝা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে তিনি আশায় বুক বেঁধে আছেন। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে নদীতে আশানুরূপ মাছ পাওয়া যেতে পারে।

লক্ষ্মীপুর : ভরা মৌসুমে মেঘনায় মিলছে না কাক্সিক্ষত ইলিশ। এতে স্থানীয় অর্ধলক্ষাধিক জেলে ও মৎস্যজীবী পরিবারের দিন কাটছে চরম হতাশায়। পরিবার-পরিজন নিয়ে চলমান লকডাউনে ভালো নেই তারা। জেলা মৎস্য অফিসের তালিকা অনুযায়ী জেলার পাঁচ উপজেলায় ৪২ হাজার জেলে রয়েছেন। এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা। গতকাল বিকালে সদর উপজেলার বুড়ির ঘাট, মজু চৌধুরীর হাট, কমলনগরের মতির হাট, বাত্তির ঘাটসহ বেশ কয়েকটি মাছঘাট ঘুরে দেখা গেছে পর্যাপ্ত ইলিশ নেই। স্থানীয় জেলে আবদুল করিম, জয়নাল মিয়া, আবু মাঝিসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, প্রতিদিন ভোরে একটি ট্রলারে আট থেকে ১০ জন করে জাল নিয়ে নদীতে যান। ট্রলারের তেল ও নিজেদের খাবারে ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু জালে কাক্সিক্ষত ইলিশ মিলছে না এবার। কেউ কেউ জানান, ধারদেনা করে নদীতে এসে মাছ না পেয়ে ঋণের জালে আবদ্ধ হয়ে ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে এখন।

চট্টগ্রাম : সাগর উত্তাল থাকায় ঝুঁকি নিচ্ছেন না অধিকাংশ জেলে। তবে অভাব-অনটনের কারণে কিছুসংখ্যক জেলে ঝুঁকি নিয়ে সাগরে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন। চট্টগ্রাম মহানগরের হালিশহর আনন্দবাজার ঘাট, কাট্টলীর সমুদ্রতীর, ফিশারি ঘাটসহ কয়েকটি ইলিশ অবরতণ কেন্দ্র রয়েছে। দুই মাস পর সে ঘাটে আবার জেগেছে জেলেসহ ক্রেতাদের প্রাণচাঞ্চল্য। জাল, বোট ও জেলেদের পদচারণে আবারও ব্যস্ত হয়েছে ঘাটগুলো।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর