মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

আমি গুলি করা মানুষ পিস্তল বালিশের নিচে থাকত

ভিকারুননিসার অধ্যক্ষের অডিও ভাইরাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমি গুলি করা মানুষ পিস্তল বালিশের নিচে থাকত

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার এবং অভিভাবক ফোরামের উপদেষ্টা মীর শাহাবুদ্দিন টিপুর একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এতে অধ্যক্ষ ওই অভিভাবককে বলেন, ‘আমি কিন্তু গুলি করা মানুষ। রিভলবার নিয়া ব্যাগের মধ্যে হাঁটা মানুষ। আমার পিস্তল বালিশের নিচে থাকত। কোনো ... বাচ্চা    যদি আমার পেছনে লাগে আমি কিন্তু     ওর পেছনে লাগব, আমি শুধু ভিকারুননিসা না আমি দেশছাড়া করব।’ ফোনালাপের অডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ৪ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের এই ফোনালাপ নিচে তুলে ধরা হলো-

কামরুন নাহার : লকডাউনের মধ্যে আমি অফিস করি কি না-করি কার বাপের কী? কোন ... বাচ্চার কিছু যায় আসে?

টিপু : না ...।

কামরুন নাহার : কোন ... বাচ্চার যায় আসে কিছু? যদি আমি অফিস না করি? আমি জানতে চাই, কোন ... পোলার কী যায় আসে?

টিপু : এইডি তো আপনার জিবির (গভর্নিং বডি) লোক।

কামরুন নাহার : কোন ... পোলার কী যায় আসে? আমি রাজনীতি করা মেয়ে, আমি কিন্তু ভদ্র না।

টিপু : না।

কামরুন নাহার : আমি বলে দিলাম, আমি শিক্ষক। আমি প্রিন্সিপাল। আমি সেই দিকটায় আলাদা পরিচয়।

টিপু : এইডি তো আপনের।

কামরুন নাহার : ওই ... পোলা যদি আমার পেছনে লাগে আমি কিন্তু তার গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়ব।

টিপু : না, আপনের বোধহয় ওই যে জিবির মেম্বারে এইগুলা ছড়ায় কি না দেখেন।

কামরুন নাহার : কোন মেম্বার আর কোন মার ভাতার আমার দেখার কিন্তু বিষয় না। কোনো ... বাচ্চা যদি আমার পেছনে লাগে আমি কিন্তু ওর পেছনে লাগব। আমি শুধু ভিকারুননিসা না, আমি দেশছাড়া করব।

টিপু : ঠিক আছে আপা। এইটা ভালো।

কামরুন নাহার : এবং আমি অনেক সহ্য করেছি। এই কালকে সচিবের কাছে বলে এসেছি। সচিব বলেছে, মন্ত্রী তোমাকে খুব ভালোবাসে। তুমি এই জায়গায় থাকবা। আমি বলেছি, স্যার... তুমি এইখানে থাকবা, তুমি যোগ্য, মন্ত্রী তোমাকে পছন্দ করেছে।

টিপু : আইচ্ছা।

কামরুন নাহার : আর কোনো ... বাচ্চা তদন্ত কমিটি করলে আমি কিন্তু দা দিয়ে কোপাবো তারে, সোজা কথা।

টিপু : হা হা হা।

কামরুন নাহার : আমার ... আছে। আমার বাহিনী আছে। আমার ছাত্রলীগ আছে, যুবলীগ আছে, আমার যুব মহিলা লীগ আছে।

টিপু : আফনে আবার...।

কামরুন নাহার : কিন্তু কিচ্ছু লাগবে না। কাপড় খুইলা রাস্তার মধ্যে পিটাব।

টিপু : আফনে আবার আগের চরিত্রে চইলা যাবেন মুকুল আফা। হা হা...।

কামরুন নাহার : হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ যাব। যাব। আমি কিন্তু একদম, আমি কিন্তু গুলি করা মানুষ। রিভলবার নিয়া ব্যাগের মধ্যে হাঁটা মানুষ। আমার পিস্তল বালিশের নিচে থাকত। সারা রাত পিস্তল আমার বালিশের নিচে থাকত। আমি কিন্তু...

টিপু : আমি নাজমারে (যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার) ফোন করে কইতাসি মুকুল আফা চেইতা গেসে তুমি থামাও। তোমার জিএসরে (হাসি)।

কামরুন নাহার : হ্যাঁ। নাজমা আমারে বলসে। যে কেউ তরে ডিস্টার্ব করলে আমারে খালি বলিস। আমার নাজমাও লাগবে না। নাজমার গ্রুপের শুধু মেয়ে আমারে পরশু দিন অফিসে বসছিল, পরে আমারে বলতেছে আপা, আসবেন আমরা কাপড় খুইলা রাস্তার মধ্যে রাইখা পিটাব তারে। তার এত দুঃসাহস আপনার বিরুদ্ধে কথা বলে, আর আপনাকে ডিস্টার্ব করে। ঘরের থেকে টাইনা বাইর কইরা রাস্তার মধ্যে পিটাইয়া কাপড় খুইলা ফেলাব। আমার সম্পর্কে লেখে, আমার ঢাকা পতেঙ্গা ফেয়ারেল গলিতে চাইনিজ খাবার খাওয়াইসি। আর আমার সম্পর্কে লেখে, প্রিন্সিপাল অফিস করে না। কোন কুত্তার বাচ্চার মায়ের কোনে লিখেছি আমি। আমি আমার অফিস করি সচিবকে বইলা। করোনার মধ্যে, করোনার মধ্যে এই। করোনার মধ্যে আমার বারান্দার অফিসে আমি দরজা খুলে বসে থাকি, আমার চেয়ার টেবিল নিয়ে। আমি অফিসে গিয়ে রাউন্ড দিয়ে চলে আসি কর্মচারীরা ঠিকমতো আছে কি না। করোনার মধ্যে অফিসের নিয়ম নাই। আমাকে নিষেধ করছে, সারা বাংলাদেশ যে করোনার মধ্যে তোমরা লকডাউনের মাঝে অফিস খোলা রাখবে না, তাহলে করোনা ছড়াবে। কোন ... বাচ্চার কী যায় আসে? কোন ... বাচ্চার কী যায় আসে? আমি অফিসে না গেলে ...বাচ্চারা ... বাচ্চারা কি আমার জায়গাটায় মজা পায়? কোন ... বাচ্চারা চায় যে আমি অফিসে বইসা অফিস করি, তাদের অফ করেন। ........ বাচ্চা।

টিপু : ঠিক আছে আপা।

কামরুন নাহার : আমি রাজনীতি করা মেয়ে।

টিপু : আমি তো আছি, আফনে এত...।

কামরুন নাহার : আমি কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারে আসছি বলে কিন্তু...।

টিপু : আফনের চাইর নাম্বার গেইটের অপজিটে হইল আমার বাসা। এত চিন্তা করেন ক্যান?

কামরুন নাহার : আমি কোনো চিন্তা করি না। কারণ, আমি নিজেই শক্তিশালী। কোনো... কথায় আমি চলি না। কোনো... বাচ্চার কথায় আমি চলি না। আমি নিজেই কিন্তু শক্তিশালী। দলটার আমি প্রেসিডেন্ট ছিলাম। মনে রাইখেন এই দলটা এখন সরকারে। যত দিন এই দলটা আছে তত দিন আমার পাওয়ার আছে। আমি কিন্তু ... বাচ্চাদের লেংটা করে রাস্তার মইধ্যে পিটাইতে পারব। আমার লাগবে না আমার দলের মেয়েদের ডাকলে দলের ছেলেও লাগব না। মেয়েরাই ওর চুল-দাড়ি ছিঁড়া প্যান্ট খুলে নামাইয়া দিবে। আমার সামনে তিন সপ্তাহ যেন দাঁড়াতে সাহস না পায়। আমি কিন্তু কোনো অন্যায়ের সাথে বসবাস করি না, এইডা মনে রাইখেন।

টিপু : তয় নাসির যে...।

কামরুন নাহার : আমার নামে যে লেখে ... বাচ্চারে আমি অনেক সহ্য করছি।

টিপু : তয় নাসির যে...।

কামরুন নাহার : সচিব স্যারকে বলছি, অসভ্যরা আমার পেছনে লাগে, আমারে আপনি ঢাকা বোর্ডে পোস্টিং দিয়ে দেন। স্যার বলছে, মন্ত্রী তোমাকে পছন্দ করে। আমাকে যেহেতু ধরতে গেলে থাকতেই হবে তাহলে কুত্তার বাচ্চাদের সাথে লইড়াই আমি থাকব।

টিপু : না... নাসির যে এত চিল্লাচিল্লি করল আপনি নাসিররে কিছু কইলেন না ক্যান?

কামরুন নাহার : কোনো নাসিররে আমি চিনি না। নাসিররে কী বলব তা আমি বুঝি। কেউ যেন আমার পেছনে লাগে না আপনি নিষেধ কইরে দিয়েন। আপনার সঙ্গে যারাই বলবে নিষেধ করে দিবেন।

টিপু : না, তা তো বলবই। আফনে রোববারে ইস্কুলে আইলে আমারে একটু ফোন কইরেন।

কামরুন নাহার : স্কুল করব কি না করব তা আমার এখতিয়ার, আমি বসব কি না বসব। আমি সচিবকে বলছি, সচিব স্যার- আমি বাসায় বসে অফিস করি। বলে, যে বাসাটা দেওয়া হইসে বাসায় বইসা অফিস করবা। যখন সুবিধা অফিসে যাবা এখন করোনার মধ্যে। তুমি এই নিয়া চিন্তা কইরো না। আমরা অফিস করি না মাসে একবার-দুবার আসি জরুরি মিটিং থাকলে। আর ... বাচ্চারা সারাক্ষণ কয় আমি অফিসে যাই না, অফিসে যাই না।

অধ্যক্ষ কামরুন নাহার গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, অভিভাবক ফোরাম দীর্ঘদিন ধরে বেশকিছু অনৈতিক কাজে সায় দিতে চাপ দিয়ে আসছিল। শিক্ষার্থী ভর্তি করানো, ফুল ফ্রি-হাফ ফ্রি ইত্যাদির দাবি ছিল তাদের কিন্তু আমি তাদের অনৈতিক কাজে সায় দেইনি। এ জন্য আমাকে বিভিন্ন হুমকি দিয়েছে তারা। শিফটিং বদলি ও শিক্ষার্থী ভর্তিতে অতীতে অনেক বাণিজ্য করেছে এই সিন্ডিকেট। কিন্তু আমার কাছে এমন সুবিধা নিতে পারেনি তারা। অধ্যক্ষ বলেন, অভিভাবক ফোরামের নেতারা আমাকে মা-বাপ তুলে গালিগালাজ করেছেন। কেউ কেউ আমার কাপড় খুলে নিতে চেয়েছে। ফাঁস হওয়া ফোনালাপে আমার বক্তব্য এডিট করা হয়েছে। কামরুন নাহার বলেন, অভিভাবক ফোরামের নেতারা আমার চেয়ারে, আমার রুমের দরজায়ও লাথি মেরেছে। এই সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্রের কারণে অতীতে কোনো অধ্যক্ষ টিকতে পারেননি। আসলে অভিভাবক ফোরাম অনৈতিক সুবিধা নিতে না পেরে পাগল হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে এই সিন্ডিকেট ভাঙতে সবাইকে পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান অধ্যক্ষ।

মীর শাহাবুদ্দিন টিপু গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, গত ১০ জুনে অধ্যক্ষের সঙ্গে এই কথোপকথন হয়। সেদিন ফোন করে তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে অতর্কিতভাবে নানা অশ্লীল, অশ্রাব্য ভাষায় এই গালিগালাজ করেন। টিপু বলেন, অধ্যক্ষ ভিকারুননিসা ক্যাম্পাসের ভিতর টাকা নিয়ে ঈদের আগে গরুর হাট বসিয়েছিল। আমি এই হাট উৎখাত করি। এতে অধ্যক্ষ আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়। এ ছাড়া করোনার কারণে মারা যাওয়া অভিভাবকের সন্তানদের ফুল ফ্রি, হাফ ফ্রির আবেদন জানালেও অধ্যক্ষ এতে সায় দেয়নি। অধ্যক্ষের বিতর্কিত নানা কর্মকান্ডের জন্য তার অপসারণ দাবি করেন মীর শাহাবুদ্দিন টিপু।

সর্বশেষ খবর