শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

ঈদযাত্রায় সড়কে প্রাণ গেছে ২৭৩ জনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

পবিত্র ঈদুল আজহায় যাতায়াতের সময় দেশের সড়ক-মহাসড়কে ২৪০টি দুর্ঘটনায় ২৭৩ জন নিহত ও ৪৪৭ জন আহত হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে ২৬২টি দুর্ঘটনায় ২৯৫ জন নিহত ও ৪৮৮ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তন হলে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ‘ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০২১’ প্রকাশকালে এ তথ্য তুলে ধরেন। সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতিবছরের ন্যায় এবারও প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

এতে উল্লেখ করা হয়, লকডাউনের কারণে মানুষের যাতায়াত সীমিত হলেও স্বল্প সময়ের জন্য গণপরিবহন চালু করায় সড়কে গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি               বিশেষ করে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা-ব্যাটারিচালিত রিকশা, ট্রাক-পিকআপ ও কাভার্ডভ্যানে মানুষ গাদাগাদি করে যাতায়াত করেন। গত ছয় বছরের তুলনায় এবারের ঈদে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি দুটোই বেড়েছে। ঈদযাত্রা শুরুর দিন গত ১৪ জুলাই থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ২৮ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনে ২৪০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭৩ জন নিহত ও ৪৪৭ জন আহত হয়েছেন। উল্লিখিত সময়ে রেলপথে ৯টি ঘটনায় ১১ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৩টি দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত ও ৩৬ জন আহত এবং ২১ জন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা মিলেছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে যৌথভাবে ২৬২টি দুর্ঘটনায় ২৯৫ জন নিহত ও ৪৮৮ জন আহত হয়েছেন। তবে ২৩ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ার পর ২৫ জুলাই থেকে সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমতে থাকে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ৮৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৯৩ জন নিহত, ৫৯ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৬.২৫ শতাংশ, নিহতের ৩৪.০৬ শতাংশ এবং আহতের ১৩.১৯ শতাংশ প্রায়। এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ১০৬ জন চালক, ১৯ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬৪ জন পথচারী, ৩৮ জন নারী, ৩১ জন শিশু, ১২ জন শিক্ষার্থী, ৩ জন সাংবাদিক, ৫ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১২ জন শিক্ষক, ৬ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী এবং ১ জন প্রকৌশলীর পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছে ২ জন পুলিশ সদস্য, ১ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, ১ জন বিজিবি, ২৭ জন নারী, ১৭ জন শিশু, ৯ জন শিক্ষার্থী, ৯ জন শিক্ষক, ৮৭ জন চালক, ১৬ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫৩ জন পথচারী, ৩ জন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী।

দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট যানবাহনের ২৮.৪৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৮.৭৮ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ৭.৪১ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৮.৬০ শতাংশ নসিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা, ১০.৩৮ শতাংশ অটোরিকশা, ৭.৭১ শতাংশ ব্যাটারি রিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল ও ৮.৬০ শতাংশ বাস এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।

সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বিগত ঈদগুলোতে সরকারের নানা মহলের তৎপরতা থাকায় দুর্ঘটনার লাগাম কিছুটা টেনে ধরা সম্ভব হলেও কঠোর লকডাউনের কারণে মানুষের যাতায়াত সীমিত থাকার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় এবারের ঈদযাত্রায় সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। সরকার সড়কের অবকাঠামোর উন্নয়নে যতটা মনোযোগী সড়ক নিরাপত্তায় ততটা উদাসীন। বিগত এক যুগে ধারাবাহিকভাবে সড়ক নিরাপত্তায় নানা প্রতিশ্রুতি, নানা চমকপ্রদ বক্তব্য, নানা আশ্বাস, নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনো কিছুরই বাস্তবায়ন আলোর মুখ দেখে না। এরই মধ্যে বাস্তবায়নের আগেই সড়ক আইন আরও দুর্বল করার ষড়যন্ত্র চলছে। ফলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামানো কঠিন হয়ে পড়ছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর