শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার একটি প্রাচীন গ্রাম। বর্তমানে জমিদারি প্রথা না থাকলেও কানসাটে আজও অক্ষত রয়েছে জমিদারবাড়ি বা রাজবাড়ি। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিভিন্ন লতাপাতা গজিয়ে উঠেছে বাড়ির চারপাশে। বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায়, প্রাচীনকালে এখানে কংসহাট্টা নামক রাজার বাড়ি ছিল বলে তার নামানুসারেই স্থানটির নাম হয় কানসাট এবং এই কানসাটের পার্শ্ববতী পুখুরিয়া গ্রামে বঙ্গ অধিকারী রানী স্বর্ণময়ীর রাজধানী ছিল। পুখুরিয়া বাগদীপাড়ায় এখনো এর ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। এদিকে সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে প্রায় ধ্বংসের মুখে পড়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহাসিক কানসাট জমিদার বাড়ি, যা রাজবাড়ি নামে পরিচিত। বাড়ির বেশ কিছু অংশ ভেঙে পড়েছে। দেয়ালজুড়ে দেখা দিয়েছে ফাটল আর ফাটল, দেয়ালে গজিয়ে উঠেছে বিভিন্ন গাছপালা। দেখভালের অভাবে সেটি এখন মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এটি সংস্কার করা হলে কানসাট রাজবাড়ি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়ার সুযোগ আছে। জানা গেছে, ১৮৬৭ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে নির্মাণ করা হয় এই জমিদার বাড়িটি। যেটি পরে রাজবাড়ি হিসেবে পরিচিতি পায়। ময়মনসিংহের জমিদার সূর্যকান্ত ২ দশমিক ২৪ একর জমির ওপর নির্মাণ করেন এই বাড়িটি। দ্বিতল বিশিষ্ট এই বাড়িতে রয়েছে ১৬টি কক্ষ। সূর্যকান্তের দুই ছেলে শশীকান্ত ও শীতাংসু কান্তের মধ্যে ছোট ছেলে শীতাংসু কান্ত সর্বশেষ জমিদার ছিলেন। দেশভাগের পর শীতাংসু কান্ত ভারতে চলে গেলে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এই বাড়িটির মালিকানা নেয়। পরে বাড়িটি চলে যায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের হাতে। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম এই জমিদারবাড়ি সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে এখন ধ্বংসপ্রায়। দেখভালের অভাবে জমিদারবাড়ির দরজা-জানালার কপাট ও পাল্লা চুরি হয়ে গেছে। এখন সেটি মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, কানসাট জমিদারবাড়ির পাশেই বসে জেলার সর্ববৃহৎ আমবাজার। আমের মৌসুমে লাখো পর্যটক আসেন এখানে। রাজবাড়িটি দ্রুত সংস্কার করলে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে এটি। এ প্রসঙ্গে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাকিব আল রাব্বি জানান, কানসাট জমিদারবাড়িটি দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। সুতরাং খুব শিগগিরই এটি সংস্কার করে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে।