মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ইভ্যালি জানে না কত দায়-দেনা

ছয় মাস সময় চাইল হিসাব দিতে, ১৫ দিন পরপর পণ্য ডেলিভারির অগ্রগতি জানাবে মন্ত্রণালয়কে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির মোট সম্পদ ও দায়-দেনার বিস্তারিত তথ্য কোম্পানিটির নিজের কাছে নেই। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, একটি তৃতীয় নিরপেক্ষ নিরীক্ষক দ্বারা সম্পূর্ণ আর্থিক হিসাব বিবরণী তৈরির পর তারা সরকারকে তাদের লেনদেনের হিসাব ও ‘বিজনেস প্ল্যান’ জানাবে। আর এ নিরীক্ষা শেষ করতে অন্তত ছয় মাস সময় লাগবে। হিসাব না দেওয়া পর্যন্ত ১৫ দিন পর পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পণ্য ডেলিভারির তথ্য পাঠাবে কোম্পানিটি। ইভ্যালির এমডি মো. রাসেল গত ৩১ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির হিসাব বিবরণী ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনা জমা দিতে ছয় মাস সময় চান। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইভ্যালিকে সময় দেওয়া হবে কি না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন হবে। ওই কমিটি এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।  হাফিজুর রহমান জানান, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কমিটি গঠনের কথা ই-কমার্স নীতিমালাতেই আছে। ওই নীতিমালা মেনেই কমিটি হবে। ইভ্যালি গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নেওয়ার পর, ওই অর্থ কী করেছে, ভবিষ্যতে এ অর্থ পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটির সামর্থ্য আছে কি না, থাকলে তা কীভাবে পরিশোধ করা হবে- এ ধরনের ছয়টি বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা চেয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে একটি কারণ দর্শানো  শোকজ) নোটিস দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত ১৯ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও এমডি মোহাম্মদ রাসেলের ঠিকানায় পাঠানো ওই চিঠিতে ১ আগস্টের মধ্যে লিখিত জবাব দেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

শোকজ নোটিসে বলা হয়েছিল, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যচ্ছে, ইভ্যালি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ গ্রহণ করলেও যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ করছে না। যেসব মার্চেন্টের কাছ থেকে পণ্য গ্রহণ করা হয়েছিল তাদেরও অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটির এ ধপ্রণর কার্যক্রমে বিপুলসংখ্যক ক্রেতা ও বিক্রেতা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

ইভ্যালিকে দেওয়া শোকজ নোটিসে ছয়টি বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দেনার চেয়ে সম্পদ কম থাকার কারণ ব্যাখ্যাসহ, ১৫ জুলাই পর্যন্ত মার্চেন্টদের কী পরিমাণ দায় সৃষ্টি হয়েছে, তা পরিশোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, ব্যবসা শুরুর পর থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ইভ্যালি গ্রাহকের কাছ থেকে মোট কী পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করেছে, মার্চেন্টদের কী পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করেছে এবং প্রশাসনিক ও অন্যান্য খাতে কী পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ সরকারকে জানানো। 

ইভ্যালির চিঠিতে যা আছে :  ওই কারণ দর্শানো চিঠির জবাবে ইভ্যালি জানিয়েছে, অতীতের কার্যপদ্ধতির কারণে ১৫ জুলাই পর্যন্ত গ্রাহকের বকেয়া পণ্য এখনো সরবরাহ করা হয়নি। তবে তারা আগামী ছয় মাসের মধ্যে বকেয়া পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেবে। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, তারা আগের প্রতিশ্রুত পণ্যের ডেলিভারি শেষ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রতি ১৫ দিন পর পর পণ্য ডেলিভারির অগ্রগতির তথ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। মার্চেন্টের দায়-দেনার ব্যাপারে ইভ্যালি জানিয়েছে, প্রায় ৫ হাজারের বেশি মার্চেন্টের সঙ্গে তাদের হিসাব আছে। ডেলিভারিকৃত পণ্য গ্রাহক কর্তৃক পাওয়ার নিশ্চয়তার প্রমাণ, ত্রুটিপূর্ণ পণ্যের অভিযোগ, পূর্ববর্তী বিলের সমন্বয় করে মার্চেন্টের পূর্ণাঙ্গ হিসাব সম্পন্ন করার বিষয়টি সময়সাপেক্ষ বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর