মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

রূপগঞ্জে আগুনে দগ্ধ ৪৫ জনের লাশ শনাক্ত

নিখোঁজদের ৩১ জনই নারী

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪৫ জনের লাশ শনাক্ত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটির ফরেনসিক শাখা। শনাক্ত হতে বাকি আছে আরও চারজনের লাশ। সিআইডি লাশগুলো নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করবে। এরপর সেগুলো নিহতদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। গতকাল সিআইডি ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) রোমানা আক্তার জানান, ৪৫ জনের মধ্যে ৩০ জন নারী ও ১৫ জন পুরুষের লাশ রয়েছে।  এদিকে রূপগঞ্জে ভয়াবহ ওই অগ্নিকান্ডে ৪৯ জন নিখোঁজের তালিকা করা হয়। আর এদের লাশগুলোর ৬৯ জন দাবিদারের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। নিখোঁজদের মধ্যে আছেন ৩১ জন নারী। এ ছাড়া ১৯ জন রয়েছেন কিশোরগঞ্জ জেলার, ৫ জন ভোলার, ৪ জন নোয়াখালীর, ৩ জন নেত্রকোনার, ২ জন নারায়ণগঞ্জের, ৩ জন হবিগঞ্জের, ২ জন গাইবান্ধার, মৌলভীবাজার, গাজীপুর, রাজশাহী, নরসিংদী, পাবনা, দিনাজপুর, জামালপুর, ঢাকা, নীলফামারী, বগুড়া ও বরিশালের ১ জন করে আছেন।

নিখোঁজদের মধ্যে আছেন- কিশোরগঞ্জ করিমগঞ্জের জাহানারা (৩৮), নাঈম ইসলাম, মুন্না (১৬), ফাকিমা আক্তার, সাগরিকা সায়লা, রহিমা আক্তার, মোছা. ফারজানা (১৪) ও মোছা. ফাতেমা আক্তার (১৫), কিশোরগঞ্জ সদরের মিনা খাতুন (৩৬), শাহানা আক্তার (৪৪), রহিমা (৩৯), মোছা. শাহানা আক্তার (১৮), মাহমুদা আক্তার (২২), খাদেজা আক্তার (১৬) ও আমেনা আক্তার (২২), কিশোরগঞ্জ কটিয়াদীর রাবেয়া আক্তার ও তাসলিমা আক্তার, কিশোরগঞ্জ মিঠামইনের সেলিনা আক্তার, ভোলা চরফ্যাশনের রাকিব দেওয়ান, হাসনাইন (১২), শামীম (১৮), মহিউদ্দিন (২৭) ও রাকিব হোসেন (১৭), নোয়াখালী হাতিয়ার আকাশ মিয়া, রাশেদ (২৫), আয়াত হোসেন (১৯) ও তারেক জিয়া (১৫), নেত্রকোনা মোহনগঞ্জের সান্তামনি আক্তার (১৪), খালিয়াজুরীর তকিয়া আক্তার, সদরের হিমা আক্তার, নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের ফিরোজা (৩৬) ও মিতু আক্তার, হবিগঞ্জ নবীগঞ্জের অমৃতা বেগম (৩০), লাখাইয়ের ইশরাত জাহান তুলি, নবীগঞ্জের শেফালী রানী সরকার (১৮), গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জের লাবর্ন আক্তার (১৪), সদরের নুসরাত জাহান টুকটুকি (১৮), মৌলভীবাজার সদরের কম্পা রানী বর্মণ, গাজীপুর জয়দেবপুরের রিপন মিয়া (১৮), রাজশাহী বাঘার মাহবুবুর রহমান (২৮), নরসিংদী শিবপুরের রিয়া আক্তার (৩০), পাবনা সুজানগরের মোহাম্মদ আলী, দিনাজপুর পার্বতীপুরের সাজ্জাদ হোসেন, জামালপুর সদরের জিহাদ রানা, ঢাকা ডেমরার নাজমা বেগম (৩৫), নীলফামারী কিশোরগঞ্জের স্বপন মিয়া (২৩), বগুড়া সারিয়াকান্দির নাজমা খাতুন এবং বরিশাল মেহেন্দীগঞ্জের নোমান (১৮)।

আগুনের ঘটনায় মেয়ের লাশের সন্ধান পেতে সিআইডিতে ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন হাসানুজ্জামান সরকার নামে এক ব্যক্তি। তিনি জানান, তার মেয়ে গত মার্চে ওই কারখানায় চাকরি নেয়। প্রতি রাত ৮টায় মেয়ের সঙ্গে কথা হতো। ঘটনার দিন রাত ৭টায় তার মেয়ে টুকটুকির রুমমেট রুমি তাকে ফোন দিয়ে কারখানায় আগুন লাগার কথা জানান। এরপর তিনি টেলিভিশন চালু করে আগুনের দৃশ্য দেখতে পান। এরপর তার মেয়ের মোবাইলে ফোন দেন, সেখানে কল রিসিভ হলেও তার মেয়ে টুকটুকি কোনো কথা বলেনি। এখন শুধু মেয়ের লাশের অপেক্ষা রয়েছেন তারা।

প্রসঙ্গত, গত ৮ জুলাই বিকালে নারায়ণগঞ্জে রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানায় আগুন লাগে। ঘটনার প্রথম দিন তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশত শ্রমিক। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট ২১ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর ৯ জুলাই সকালে ওই ভবনের চারতলা থেকে ৪৮ জনের অঙ্গার হওয়া লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠায় ফায়ার সার্ভিস। লাশগুলোর ডিএনএ নমুনা হিসেবে পাঁজরের হাড় সংগ্রহ করা হয়েছে। আর তাদের স্বজন দাবিদার বাবা, মা এবং সন্তানের কাছ থেকে ডিএনএ-এর নমুনা হিসেবে রক্ত ও লালা সংগ্রহ করা হয়েছে। জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া লাশের বিপরীতে নিখোঁজ ব্যক্তি একজন বেশি রয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাশের একটি ব্যাগে দুই লাশের পুড়ে যাওয়া অংশ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর