মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

৩২০ বছরের পুরনো চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদ

জমির বেগ, ফেনী

৩২০ বছরের পুরনো চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদ

ফেনীর ছাগলনাইয়ায় ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে এখনো দাঁড়িয়ে আছে ৩২০ বছরের পুরনো চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদ। ছাগলনাইয়া উপজেলা সদরের চাঁদগাজী বাজারের অদূরে মাটিয়া গোধা গ্রামে এই মসজিদটি অবস্থিত। মুঘল আমলের বিশিষ্ট ব্যক্তি চাঁদগাজী ভূঞা ছিলেন বাংলার বার ভূঞাদের একজন। তার নাম অনুসারে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যা এখনো রয়েছে অতীতের মতো। এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি ১৯৮৭ সালে প্রত্নতত্ত¡ বিভাগ গেজেটভুক্ত করে। ১৯৯৩ সালে একবার মসজিদটিতে সিমেন্টের প্রলেপ দেওয়া হয়। তারপর থেকে অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি। মসজিদের প্রধান দরজার একটু ওপরে কালো কস্টি পাথরে খোদাই করে ফারসি ভাষায় মসজিদের নির্মাণকাল, প্রতিষ্ঠাতার নাম ও ফারসি ভাষায় কবিতার দুটি লাইন লেখা রয়েছে। খোদাইকরা কস্টিপাথরে নির্মাণ সাল ১১২ হিজরি লিখে শেষে একটি সাংকেতিক চিহ্ন দেওয়া আছে। ইসলামী ইতিহাসে শিক্ষিত বয়োবৃদ্ধ স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, হিজরি এক হাজার বছর পর তারিখ লেখার সময় এক হাজার অঙ্কটি না লিখে শুধুমাত্র অবশিষ্ট সংখ্যা লিখা হয় (এখানে ১১২২ সালের জায়গায় ১২২ সাল লেখা হয়েছে। এ নিয়মটি সৌদি আরবে হিজরি তারিখ লেখার ক্ষেত্রে আজও চালু রয়েছে।) হিজরি ১১২২ সালে নির্মিত চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪৮ ফুট, প্রস্থ ২৪ ফুট, উচ্চতা ৩৫ ফুট ও চার পাশের দেয়াল ৪ ফুট পুরু।

২৮ শতক জায়গার ওপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি মধ্যযুগীয় রীতি অনুযায়ী চুন, সুরকি ও ক্ষুদ্র ইট দিয়ে তৈরি। মসজিদের ছাদে রয়েছে তিনটি সুদৃশ্য বড় গম্বুজ এবং চার কোনায় ও মাঝে রয়েছে গম্বুজের চেয়ে উঁচু সরু আকারের আরও কয়েকটি গম্বুজ। এ গম্বুজগুলোর চার পাশে রয়েছে খোদাই করা সুদৃশ্য কারুকাজ। মসজিদটির চার পাশের দেয়ালে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের লতা ও ফুলের চিহ্নে কারুকাজ ও ছোট ছোট বক্স সাদৃশ্য স্থাপত্য নকশা। মসজিদের মূল গেট এমন ভাবে তৈরি মসজিদে প্রবেশের সময় যেন মাথা নিচু করে প্রবেশ করতে হয়। এ গেটের দক্ষিণ পাশে রয়েছে ওপরে ওঠার সিঁড়ি। গেটের ওপরে ওঠে পাটাতনের ওপর দাঁড়িয়ে আজান দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়ে ছিল। গেটের সঙ্গে লাগোয়া মসজিদের তিন পাশে মুসল্লিদের বসার জন্য পাকা সিঁড়ি তৈরি ছিল যা আজও স্থানীয়রা ব্যবহার করে আসছেন। মসজিদের দক্ষিণ পাশে রয়েছে চাঁদগাজী ভূঞার কবর। কবরটি মাটি চিহ্ন দেওয়া। পাকা করা হয়নি। মসজিদ সীমানা ঘেরার দুই পাশে রয়েছে কবরের স্থান। কবরের স্থানে সম্প্রতি মারা যাওয়া কয়েকজনের কবরের পাশে তাদের নামফলক রয়েছে।

সর্বশেষ খবর