বৃহস্পতিবার, ৫ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

দ্বিতীয়বার করোনা আক্রান্ত বাড়ছে

দুই ডোজ টিকা নিয়েও দ্বিতীয়বার আক্রান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর আক্রান্ত হন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। করোনামুক্ত হওয়ার পর গণটিকাদান শুরু হলে নির্ধারিত সময়ে দুই ডোজ টিকা নেন তিনি। এর পরও জুলাইতে আবার করোনা আক্রান্ত হন নাছিম। তবে তার খুব বেশি শারীরিক জটিলতা ছিল না।

টিকা নিয়ে দ্বিতীয়বার করোনা আক্রান্তের ঘটনা দেশে এটাই প্রথম নয়। অনেকেই টিকা নিয়ে কিংবা না নিয়েও দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছেন। দ্বিতীয়বার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে এ সংখ্যা বেশি। তবে কতজন দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়েছেন এর কোনো নির্দিষ্ট হিসাব পাওয়া যায়নি। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যানেসথেসিওলজিস্ট ডা. রাজীব শাহরিয়ার গত বছরের এপ্রিলে প্রথম করোনা আক্রান্ত হন। এ বছরের ২২ মার্চ পুনরায় আক্রান্ত হন তিনি। ডা. রাজীব শাহরিয়ার বলেন, ‘গত বছর আক্রান্তের পর সুস্থ হয়ে পুনরায় আইসিইউ ডিউটি থেকে শুরু করে সার্বিক কাজ করছিলাম। আমি বাসা থেকে এন৯৫ মাস্ক পরে হাসপাতালে যেতাম আর বাসায় এসে খুলতাম। পিপাসায় পানিও খেতাম না। কিন্তু এক দিন মাস্ক খুলে হালকা নাশতা করি। এর পরই করোনা টেস্টে পুনরায় পজিটিভ আসে।’ তবে টিকা নেওয়ায় জটিলতা কমেছে উল্লেখ করে এই চিকিৎসক বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা এ তিন স্বাস্থ্যগত জটিলতা থাকা সত্ত্বেও আমাকে আইসিইউতে যেতে হয়নি। ৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম ডোজ টিকা নিই। এর এক মাস ১৫ দিন পরই করোনা আক্রান্ত হই। এক ডোজ টিকাতেই আমার অ্যান্টিবডি ভালো অবস্থায় ছিল। এজন্য করোনা আমাকে কাবু করতে পারেনি। স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে আক্রান্ত বাড়ছে। আমার আরও তিন চিকিৎসক সহকর্মী দ্বিতীয়বার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের প্রধান এবং আরও কয়েকজন চিকিৎসক দ্বিতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মুগদা জেনারেল হাসপাতালেও একাধিক চিকিৎসক দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়েছেন। ঢাকার বাইরেও মিলেছে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত রোগী। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন শাহজাহান কবির (৫৩)। সরকারি এই কর্মকর্তা গত বছরের মে মাসে প্রথম করোনা আক্রান্ত হন। তাঁর স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, ‘গত বছর আমরা দুজনই করোনা আক্রান্ত হই। তখন খুব একটা সমস্যা হয়নি। বাড়িতে থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছিলাম।’ গত ১৪ মার্চ অফিস থেকে ফেরার পরই তাঁর হালকা জ্বর আসে। সন্দেহবশত করোনা টেস্ট করানো হয়। রিপোর্ট পজিটিভ। গত বছর জটিলতা না থাকলেও এবার প্রচ- শ্বাসকষ্টের সঙ্গে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। অক্সিজেন স্যাচুরেশন নেমে যাওয়ায় আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও করোনা গবেষক ডা. তুষার মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ৫০ বছরের নিচে আক্রান্ত বেড়েছে। তরুণদের আক্রান্ত হার অনেক বেশি। অনেকে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছেন। ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে দ্বিতীয়বার করোনা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রথমবারের তুলনায় এবার জটিল রোগী বেশি আসছে। আগে আমরা জনসাধারণকে বলতাম আতঙ্কিত হবেন না, সচেতন হোন। কিন্তু এবার বলতে বাধ্য হচ্ছি আতঙ্কিত হয়ে সচেতন হোন। টিকা নিন। কারণ এবার করোনা সত্যিই জটিল আকার ধারণ করেছে।’

সর্বশেষ খবর