সোমবার, ৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণে দেশের আয় বাড়বে না প্রকল্প ফেরত!

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশের রাজকীয় বাঘ ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ সংরক্ষণে ৪২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও এর ফলে দেশের আয় বৃদ্ধি পাবে না- এমন অজুহাতে প্রকল্পটি ফেরত পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান (২০১৮-২০২৭) অনুসারে বন অধিদফতরের কর্মীদের সার্বিক সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণে এই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছিল।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল : সুন্দরবনের বাঘ ও বাঘের শিকার প্রাণীর সংখ্যা নির্ণয়, কম বাঘ সম্পন্ন এলাকায় বাঘ স্থানান্তরের মাধ্যমে সুন্দরবনের সমগ্র এলাকায় বাঘের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, বাঘ ও মানুষের দ্বন্দ্বে সৃষ্ট ক্ষতির পরিমাণ কমানো, বাঘের আবাসস্থল উন্নয়ন এবং ২০২২ সালে বাঘ সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাঘ সংরক্ষণে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা।

গত ৯ জুন প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)-এর সভায় এটি উপস্থাপনের পর বলা হয়েছে, বর্তমানে কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে এ মহামারী নিয়ন্ত্রণ করা সর্বোচ্চ জাতীয় অগ্রাধিকার। বাঘ গণনা উদ্যোগী মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকার হলেও এ পরিস্থিতিতে আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ অধিকতর সমীচীন হবে। এ প্রেক্ষাপটে প্রকল্পটি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান ও পিইসির সভাপতি রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস সভায় পরামর্শ দিয়েছেন, সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ ও গণনা বন বিভাগের নিয়মিত ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ বিধায় এটি পরিচালনা বাজেটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

সর্বশেষ ২০১৮ সালে বন অধিদফতর যে বাঘ শুমারি করেছিল, সে অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪টি। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে বেসরকারি পর্যায়ে জার্মানির বাঘ বিশেষজ্ঞ হেন রিডসের করা প্রথম জরিপে বাঘের সংখ্যা বলা হয়েছিল ৩৫০। গত ৪৬ বছরে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ বনে বাঘের সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাঘ কমে যাওয়ার পেছনে নানা কারণের মধ্যে একটি বড় কারণ হিসেবে বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচারের বিষয়টি উঠে এসেছে। পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাঘ পাচারকারী আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশের একটি সংঘবদ্ধ দল বাঘ হত্যা করে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিদেশে পাচার করছে। এ কারণে আলোচ্য প্রকল্পটি গ্রহণের মাধ্যমে সুন্দরবনে আরসিসি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করে বাঘ পর্যবেক্ষণ, গণনা এবং বাঘের আবাসস্থল উন্নয়নের উদ্যোগ নিতে চেয়েছিল বন বিভাগ। বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পটি সরাসরি আয়বর্ধক না হলেও এটি সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যার অর্থনৈতিক মূল্যও কম নয়। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ বন হচ্ছে সুন্দরবন। আর সুন্দরবনের মূল সৌন্দর্যই হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার যা বাংলাদেশের অন্যতম গর্বের সম্পদ। প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে বাংলাদেশের জাতীয় এই পশুটির জীবন হুমকির মুখে। এখন করোনা মহামারীর কারণ দেখিয়ে এ ধরনের প্রকল্প বাদ দেওয়া হলে ভবিষ্যতে বাঘশূন্য হয়ে যেতে পারে সুন্দরবন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-প্রধান বন সংরক্ষক (পরিকল্পনা উইং) ড. মো. জগলুল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব ঐতিহ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী হিসেবে স্বীকৃত। বিপন্ন এই প্রাণীটি অস্তিত্ব এখনো যে কটি দেশে টিকে আছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আগামী বছর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে আন্তর্জাতিক বাঘ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেবেন। সেখানেও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কথা উঠে আসবে। এ কারণে প্রকল্পটির গুরুত্ব বিবেচনায় আবার নতুন করে পিইসি সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর