মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

টিকা দেওয়ার কথা বলে ডেকে গায়ে আগুন দিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন

নরসিংদী প্রতিনিধি

প্রায় ৩৬ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেলেন পারভীন বেগম (৩০)। দেবর ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে সোমবার ভোরে মারা যান তিনি। টিকা দেওয়ার কথা বলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে রায়পুরার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের সোবানপুর বাবার বাড়ি থেকে ডেকে এনে তার শরীরে আগুন লাগিয়ে দেয়। এখন গ্রামজুড়ে চলছে আহাজারি। অভিযুক্ত দেবরসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রায়পুরার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের সোবানপুর গ্রামের দানা মিয়ার মেয়ে পারভীন বেগমের সঙ্গে মরজাল এলাকার প্রবাসী জাকির হোসেনের বিয়ে হয়। পারভীন বেগমের স্বামী প্রবাসে থাকার কারণে প্রায় সময়ই শ্বশুরবাড়ির লোকজন পারভীন বেগম ও তার সন্তানের ওপর কারণে-অকারণে নির্যাতন করতেন। বছরখানেক আগে পারভীন বেগমের দেবর আলী হোসেন পারভীনের মেয়ের পায়ে দা দিয়ে কোপ দেয়। নাতনির পায়ে কোপ দেওয়ার ঘটনায় পারভীনের বাবা দানা মিয়া থানায় একটি মামলাও করেছিলেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন মামলা তুলে নিতে পারভীনের ওপর চাপ দিয়ে আসছিলেন। এতে রাজি না হওয়ায় নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন তারা। ফলে তিনি স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়ি সোবানপুরে চলে যান। এরই মধ্যে শনিবার টিকা দেওয়ার নাম করে পারভীনকে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে আসা হয়। দেবর আলী হোসেন, ননদের ছেলে শাহরিয়ার, ননদ তাসলিমা বেগম ও জা রহিমা বেগমের সঙ্গে সিএনজিযোগে টিকা দেওয়ার উদ্দেশে বের হলে চোখ বেঁধে নির্জন স্থানে নিয়ে দেবর তার শ্লীলতাহানি করে। পরে রায়পুরা-বারৈচা সড়কের পাশে লোচনপুর এলাকায় নিয়ে আলী হোসেন তরল জাতীয় কিছু তার শরীরে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তার আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাত ৩টার দিকে ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোরে তার মৃত্যু হয়। পারভীনের ভাই আকরাম হোসেন বাদী হয়ে দেবরসহ চারজনকে আসামি করে রায়পুরা থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ আলী হোসেন ও শাহরিয়ারকে গ্রেফতার করেছে। নিহত পারভীনের মা সুফিয়া বেগম বলেন, পরিকল্পিতভাবে তারা আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমার মেয়ে কত কষ্ট ও যন্ত্রণা পেয়ে মরেছে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। আমি তাদের ফাঁসি চাই। এদিকে মাকে হারিয়ে পাগল প্রায় নিহত পারভীনের শিশু সন্তান জাকিয়া। জাকিয়া বলে, তারা আমার মাকে অনেক নির্যাতন করেছে। মা আর আমি বাধ্য হয়ে বাবার বাড়ি থেকে চলে এসেছি। আমি তাদের বিচার চাই।

মামলার বাদী আকরাম হোসেন বলেন, দেবরসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়াই কাল হয়েছে পারভীনের। মামলা থেকে বাঁচতে তারা আমার বোনকে চিরতরে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে।

রায়পুরা থানার ওসি গোলাম মোস্তফা বলেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় দগ্ধ গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। পূর্বের মামলাটি এখন হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে। ইতিমধ্যেই গ্রেফতারকৃত দুজনকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) আদালতে রিমান্ড শুনানি হবে।

সর্বশেষ খবর