শিরোনাম
বুধবার, ১১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

জাদুর কৌশলে খুন!

মির্জা মেহেদী তমাল

জাদুর কৌশলে খুন!

গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী আমবাগ পূর্বপাড়া এলাকায় পরিত্যক্ত ইটভাটার পাশের বিলে নৌকায় চড়ে মাছ ধরছিল কয়েকজন জেলে। এ সময় তাদের নৌকায় কিছু একটা ধাক্কা লাগে। জেলেরা দেখতে পান পাশাপাশি দুটি লাশ ভাসছে। লাশ দুটির ধাক্কায় তাদের নৌকা নড়ে ওঠে। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে অজ্ঞাত দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করে। মরদেহ দুটি গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) কোনাবাড়ি থানার উপপরিদর্শক তাপস কুমার ওঝা বাদী হয়ে কোনাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ এ মামলা তদন্ত শুরু করে। কিন্তু ক্লুলেস এ জোড়া খুনের তদন্ত এগিয়ে নিতে কোনো সূত্র খুঁজে পায় না। নাম-পরিচয় উদঘাটন করতে পারে না পুলিশ। অবশেষে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ কয়েকটি ফোন নম্বর শনাক্ত করে। এর মধ্যে একটি ফোন নম্বরে পুলিশ কল করে পরিচয় জানতে চায়। ফোনের মালিক নিজের পরিচয় দেন। পুলিশ দেরি না করে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকার একটি খাবার হোটেলে গিয়ে হাজির হয়। হোটেলের কর্মচারী সৈকত সরকারের কাছেই ছিল সেই মোবাইল। মোবাইলের মালিক তিনি কি না পুলিশ জানতে চায়। তখন সৈকত জানান, তার বন্ধু রাসেল প্রধানের কাছ থেকে মোবাইলটি কিনেছেন। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ রাসেল প্রধানের গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায় চলে যায়। সেখানে গিয়ে রাসেলকে পাকড়াও করে। রাসেল  প্রধানের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ জানতে পারে মরদেহ দুটির পরিচয়। এরা হলেন মাহমুদুল হাসান (২০), তিনি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার চাঁদপাড়া গ্রামের আলমগীর হোসেনের ছেলে। অপরজন মো. রাকিব হোসেন (১৮), তিনি নীলফামারী জেলার ডিমলা থানার সাতনাই কলোনি এলাকার আলম মিয়ার ছেলে। তারা উভয়ে জিএমপি কোনাবাড়ী থানাধীন আমবাগ শাহানা বেকারির কর্মচারী। রাসেলের দেখানো মতে কোনাবাড়ী থানাধীন বাঘিয়ার চক জনৈক আবুল কালাম আজাদের পরিত্যক্ত ইটভাটার পাশে বিলের পানির মধ্যে থেকে মাহমুদুল হাসানের পরিহিত জিন্সের প্যান্ট (বেল্ট সংযুক্ত) এবং বিলের পাড় থেকে হত্যাকাে  ব্যবহৃত কংক্রিটের তৈরি সীমানা পিলারের ভাঙা অংশ উদ্ধার করা হয়। অপর আসামি সৈকতের কাছ থেকে নিহত মাহমুদুল হাসানের আইটেল টাচ মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল জানান, মাহমুদুল হাসান আড়াই হাজার টাকা ধার নেন। পরে পাওয়া টাকা না দেওয়ায় রাসেল তাদের জাদুর কৌশল শেখাতে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেন। পরে রাকিব সবাইকে খুনের ঘটনা বলে দেবে বলে হুমকি দিলে তাকেও সে খুন করেন। ঘটনার পর তিনি কালিয়াকৈরে নিহতদের ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন বিক্রি করে গাইবান্ধায় পালিয়ে যান। জিএমপি কোনাবাড়ী থানাধীন আমবাগ শাহানা বেকারিতে কাজ করার সুবাদে মাহমুদুল হাসান, রাকিব হোসেন এবং রাসেল প্রধানের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। এরই সূত্র ধরে রাসেল কিছুদিন আগে মাহমুদুল হাসানকে আড়াই হাজার টাকা ধার দেন। সেই পাওনা টাকা চাইলে দিতে গড়িমসি করায় ক্ষিপ্ত হন রাসেল প্রধান। এ কারণে তিনি মাহমুদলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছরের গত ৩ জুলাই তিন বন্ধু আমবাগ পূর্বপাড়া এলাকায় বেড়াতে যান। সেখানে জাদু দেখানোর কথা বলে রাসেল প্রধান কৌশলে মাহমুদুল হাসান ও রাকিব হোসেনের হাত-পা বেঁধে ফেলেন। পরে মাহমুদুল হাসানকে পাশের বিলের পানিতে চুবিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন রাসেল প্রধান। রাকিব এ বিষয় অন্যদের বলে দেওয়ার হুমকি দিলে তাকেও একটি সীমানা পিলার দিয়ে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে দুজনকে পানিতে ফেলে মরদেহ কচুরিপানা দিয়ে ডেকে রেখে পালিয়ে যান রাসেল প্রধান। পালিয়ে যাওয়ার পথে মাহমুদুল হাসানের ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন রাসেল প্রধান কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকায় হোটেল কর্মচারী মো. সৈকত সরকারের কাছে বিক্রি করে যান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর