শুক্রবার, ১৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

২ লাখে খুনের চুক্তি

মির্জা মেহেদী তমাল

২ লাখে খুনের চুক্তি

সংসার সুখের করতে ওমানে সাত বছর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে ফিরে আসেন হুমায়ূন। প্রবাস জীবন কাটানোর পর দেশে এসে ঢাকায় সুপারির ব্যবসায় নামেন। এদিকে প্রবাস জীবন কাটানোর সময় প্রতিবেশী আমজাদের সঙ্গে পরকীয়ায় মত্ত ছিলেন হুমায়ূনের স্ত্রী আমেনা খাতুন। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহায়তায় স্বামীকে খুন করতে ২ লাখ টাকার চুক্তি করেন পরকীয়ায় লিপ্ত স্ত্রী।

ভয়ংকর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বের করেছে রাজধানীর বনানী থানা পুলিশ। পুলিশের তৎপরতায় চুক্তি বাস্তবায়নের আগেই ভুক্তভোগী হুমায়ূনকে এক ডাকাতের ডেরা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে ১ মার্চ অপহৃত হন প্রবাসফেরত ব্যবসায়ী হুমায়ূন।

হুমায়ূন ওমানে সাত বছর থাকা অবস্থায় প্রতিবেশী আমজাদের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান আমেনা। ফলে তিন বছর আগে দেশে আসেন হুমায়ূন। দেশে ফিরে ঢাকার কারওয়ানবাজার থেকে সুপারি কিনে মহাখালী ওয়্যারলেস গেট এলাকার বিভিন্ন দোকানে সুপারি জোগান দিতেন তিনি। পাশাপাশি কড়াইল বস্তিতে বসবাস করতেন। গত ১ মার্চ নিখোঁজ হন হুমায়ূন। বাবা নিখোঁজের ঘটনায় বনানী থানায় জিডি করেন তার ছেলে নাজিউর রহমান বাবলু।

জিডির পর প্রযুক্তির সহায়তায় আমেনার পরকীয়া প্রেমিক আমজাদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। তারপর মঙ্গলবার মধ্যরাতে পুরান ঢাকার জুরাইন এলাকা থেকে আমজাদকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আমজাদ স্বীকার করেন, অপহৃত হুমায়ূনকে জুরাইন করিমুল্লাবাগ এলাকার আওলাদ ডাকাতের ডেরায় রাখা হয়েছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে হাত-পা ও চোখ বাঁধা অচেতন হুমায়ূনকে উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে একটি রিভলবার, দুই রাউন্ড গুলি ও দুটি ছোরা উদ্ধার করা হয়।

অপহৃতের ঘটনায় হুমায়ূনের ছেলে বাবলু               বাদী হয়ে বুধবার বনানী থানায় মামলা করেন। মামলায় আমজাদ, মা আমেনা, আওলাদ হোসেন ওরফে আওলাদ ডাকাত ও বাচ্চু মেম্বারসহ দুই থেকে তিনজনকে আসামি করা হয়। বিকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকি বিল্লাহর আদালতে স্বীকারোক্তি দেন আমজাদ। তাকে বিয়ের জন্য বারবার চাপ দেন আমেনা। কিন্তু স্বামী-সন্তান থাকায় বিয়ে করতে রাজি হননি আমজাদ। কিছু দিন আগে স্থানীয় ইউপি সদস্য বাচ্চুর কাছে তাকে নিয়ে যান আমেনা। সেখান ২ লাখ টাকায় স্বামীকে দুনিয়া থেকে সরাতে চুক্তি করেন। বাচ্চু মেম্বার তখন আওলাদ ডাকাতের সঙ্গে চুক্তি করেন। এরপর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লাখ টাকা তোলে বাচ্চু মেম্বারের হাতে দেন আমেনা। কাজ শেষে আরও ১ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, চুক্তি অনুযায়ী মহাখালীর ওয়্যারলেস গেট থেকে হুমায়ূনকে অপহরণ করে আওলাদ ডাকাত ও তার বাহিনী। চুক্তির বাকি ১ লাখ টাকা দিতে চাপ দেয় আওলাদ ডাকাত। এতে স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে কিনা জানতে পরকীয়া প্রেমিক আমজাদকে ঢাকা পাঠান আমেনা। তারপরই পুলিশ আমজাদকে আটক করে। অন্যদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হুমায়ূন জানান, ১ মার্চ তার কাছে সুপারি কিনতে আসেন আওলাদ। ২ হাজার টাকার সুপারিও কেনেন তিনি। বাড্ডায় তার ম্যাডামের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে সুপারি লাগবে। তাই ম্যাডামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে একটি অটোরিকশা যোগে রওনা হন তারা। এরপর অচেতন হন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর