শিরোনাম
রবিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ওরা ছিল সমকামী

মির্জা মেহেদী তমাল

ওরা ছিল সমকামী

এক মাসে দুই খুন। একটি গাজীপুরের কাশিমপুরে, অন্যটি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে।

গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুরে সারদাগঞ্জ মাদরাসার পাশে সিরাজুল ইসলামের বাড়ির পঞ্চম তলার ফ্ল্যাট থেকে হাত-মুখ বাঁধা আশেকুল হক ওরফে শরীফ নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কুমিল্লার দাউদকান্দিতে স্বল্প পেন্নাই দিঘির পাড় এলাকায় কবিরের মাছের প্রজেক্টের উত্তর পাড় থেকে যুবক মিঠুর লাশ উদ্ধার করা হয়। দুটি ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে গিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন  (পিবিআই) জানতে পারে দুই হত্যার নেপথ্যেই ছিল সমকামিতা।

গত বছর ২১ জুলাই রাত ১১টার দিকে গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুরে সারদাগঞ্জ মাদরাসার পাশে সিরাজুল ইসলামের বাড়ির পঞ্চম তলার ফ্ল্যাট থেকে হাত-মুখ বাঁধা আশেকুল হক ওরফে শরীফের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পোশাককর্মী শরীফ জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া গ্রামের মৃত আবদুল হামিদের ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই আনোয়ারুল হক আজাদ ২২ জুলাই কাশিমপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। ছায়া তদন্তে নেমে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যায় সরাসরি জড়িত অভিযোগে তৌহিদুল ইসলাম রাজু ওরফে বাবু (২৩), মুমিনুল ইসলাম ওরফে মমিনকে (২৭) ২৫ জুলাই সকালে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কানপুর থেকে গ্রেফতার করে পিবিআই। এ সময় তাদের থেকে শরীফের মোবাইল ফোন, এলইডি টিভি, হাতঘড়িসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়। পরে তাদের অন্য সহযোগী আবদুল মান্নানকে গ্রেফতার করা হয়। ২৬ জুলাই মমিনুল ইসলাম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মমিনের স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে পিবিআই জানায়, ঘটনার দিন বাবু আর মমিন রাত ৯টার দিকে শরীফের বাসায় যান। সেখানে রান্নাবান্না করেন। খাওয়ার পর লুডু খেলেন। এরপর সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। রাত প্রায় ৩টার দিকে শরীফ মমিনের পরনের প্যান্ট খুলে ফেলেন। আরেকজন মমিনের পা ধরে রাখেন। এ সময় মমিন চিৎকার করলে বাবু ঘুম থেকে জেগে যান। শরীফ ছাড়া অন্যরা পালিয়ে যান। শরীফ উলঙ্গ অবস্থায় তাদের চুপ থাকতে বলেন। এ সময় শরীফ অনেক জোরাজোরি করলে তাকে তারা ধাক্কা দেন। এতে শরীফ খাটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পড়ে যান। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে মমিন শরীফের পা চেপে ধরেন। আর বাবু প্রথমে শরীফের হাত-পা এবং পরে মুখ গেঞ্জি দিয়ে বেঁধে ফেলেন। এরপর গামছা দিয়ে গলায় প্যাঁচ দিয়ে দুজন দুই দিক দিয়ে টান দিলে শরীফ অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পরে মান্নানের থেকে জানতে পারেন শরীফ মারা গেছেন। পিবিআইর গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, সমকামিতার জেরে পোশাককর্মী শরীফকে হত্যা করেছিলেন তার বন্ধুরা। শরীফ ও গ্রেফতার তিন বন্ধু সবাই সমকামিতায় আসক্ত। এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও শরীফের কাছে ছিল। এদিকে সমকামিতা ও আর্থিক লেনদেন নিয়ে মনোমালিন্যের জেরে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে গত বছর ২৫ জুন এমদাদুল হক মিঠুকে হত্যা করা হয়। পরদিন দাউদকান্দির স্বল্প পেন্নাই দিঘির পাড় এলাকায় কবিরের মাছের প্রজেক্টের উত্তর পাড়ে মিঠুর লাশ পাওয়া যায়। মিঠু উপজেলার গৌরীপুরে ‘দেশ হসপিটাল’ নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালের ল্যাব টেকনিশিয়ান ছিলেন। তিনি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার হাড় পাকনা গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় দাউদকান্দি থানায় একটি মামলা হয়। ঘটনার পর থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। ২৬ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় অভিযান চালিয়ে ইমরানকে গ্রেফতার করে পিবিআই কুমিল্লা জেলার একটি দল। জানা যায়, ওই দিনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ইমরান। পিবিআই-সূত্র জানান, স্বীকারোক্তিতে ইমরান জানিয়েছেন মিঠু তার থেকে ৬০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। এ বছরের জানুয়ারিতে ইমরান মিঠুর কর্মস্থল গৌরীপুরে আসেন এবং মিঠুর রুমে ওঠেন। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই সেখানে একজন অজ্ঞাত পুরুষ, মিঠুর বোন ও দুজন মহিলা তাকে মারধর করেন। পরে ইমরান ঢাকায় চলে আসেন। এরপর মিঠু তাকে প্রতিদিন কল দিতেন। ইমরান ধার নেওয়া টাকা দ্রুত ফেরত দিতে বলেন মিঠুকে। ঘটনার দিন সকালে মিঠু ফোন দিয়ে ইমরানকে তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসতে বলেন। সন্ধ্যার আগে গৌরীপুর পৌঁছে তিনি মিঠুকে ফোন দেন। মিঠু তাকে তার হাসপাতালের পেছনে আসতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর মিঠু তার সঙ্গে কথা আছে বলে ইমরানকে পাশের একটি ঝোপের দিকে নিয়ে যান। সেখানে তার প্যান্ট খুলতে চাইলে ইমরান বাধা দেন। মিঠু ছুরি বের করে তাকে ভয় দেখান। এ সময় দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। বাঁচার জন্য মিঠুকে আঘাত করেন ইমরান। পিবিআই কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, তদন্তকালে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় ইমরানকে শনাক্ত করা হয়। উভয়েই সমকামী ছিলেন বলে তারা জানতে পেরেছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর