সোমবার, ১৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ডিসি-ইউএনও কমিটিতে রাখতে নিতে হবে অনুমতি

সচিবদের কাছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠি, উপেক্ষিত রুলস অব বিজনেস

উবায়দুল্লাহ বাদল

‘রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬’ অনুযায়ী মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের (ডিসি-ইউএনও) সরকারি যে কোনো কমিটিতে রাখতে হলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। এমনকি তাদের নিয়ে কোনো ধরনের বৈঠক বা সভা করতে হলেও সম্মতি নিতে হবে। সম্প্রতি মাঠ প্রশাসনের এসব কর্মকর্তাকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কমিটিতে রাখা হলেও তা অবহিত করা হচ্ছে না মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে। ফলে উপেক্ষা করা হচ্ছে বিদ্যমান রুলস অব বিজনেস। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তারা সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়ে বলেছে, এখন থেকে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন কমিটিতে রাখতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মতি নিতে হবে। সচিবদের কাছে ৯ আগস্ট পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মতি ছাড়াই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং অধিদফতর/সংস্থা কর্তৃক বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকসহ মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে বিভিন্ন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সম্পর্কে অবহিত না থাকায় নানাবিধ প্রশাসনিক জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। “রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬”-এর শিডিউল-১ (অ্যালোকেশন অব বিজনেস অ্যামাং দ্য ডিফারেন্ট মিনিস্ট্রিস অ্যান্ড ডিভিশন) অনুযায়ী বিভাগ এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাধারণ প্রশাসন এবং আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কার্যপরিধিভুক্ত। এ ক্ষেত্রে মাঠ প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সমন্বয়ে গঠিত কোনো কমিটিতে অন্তর্ভুক্তকরণের ক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মতি গ্রহণের আবশ্যকতা রয়েছে।’ এতে আরও বলা হয়, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মতি ও প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া অধিদফতর বা সংস্থা কর্তৃক সরাসরি এ ধরনের কোনো কমিটি গঠন সমীচীন নয়। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এ অবস্থায় কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কোনো কমিটি গঠনকালে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা মাঠ প্রশাসনের অন্য কোনো কর্মকর্তাকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হলে পরিপত্র অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মতি গ্রহণের জন্য বলা হয় ওই চিঠিতে।

রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কেউ অন্য মন্ত্রণালয়ের বা বিভাগের কোনো মিটিংয়ে থাকলে তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে আগেই অবহিত করে অনুমতি নিতে হবে

সূত্র জানিয়েছেন, এর আগে ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর একই বিষয়ে পরিপত্র জারি করেছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সে পরিপত্র জারির পর কিছুদিন নির্দেশনা মানা হলেও আস্তে আস্তে তা শিথিল হয়ে যায়। সম্প্রতি মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন কমিটিতে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। বিশেষ করে করোনা-সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ত্রাণকাজে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনলাইনে/জুমে বৈঠকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। এসব ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করা হচ্ছে না। এমনকি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা অনেক সময় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জরুরি প্রয়োজনে মোবাইল বা টেলিফোনেও পাচ্ছেন না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দফতর থেকে জানানো হচ্ছে, স্যার অমুক মিটিংয়ে ব্যস্ত বা জুমে মিটিং করছেন। অথচ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কেউ অন্য মন্ত্রণালয়ের বা বিভাগের কোনো মিটিংয়ে থাকলে তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে আগেই অবহিত করে অনুমতি নিতে হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অবহিত থাকার কথা। সে কারণেই রুলস অব বিজনেস স্মরণ করিয়ে দিয়ে সব সচিবকে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ডিসি এবং ইউএনও বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা মাঠে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করি। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে থাকি। নিয়ম অনুযায়ী সরকারের যে কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ আমাদের মাধ্যমে কাজ করলে সে বিষয়ে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানানোর কথা। অনেক ক্ষেত্রেই তা করা হচ্ছে না। ফলে আমাদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। সে কারণেই হয়তো এ চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর