মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
সচিব সভা কাল

আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর ২৬ দফা নির্দেশনা

করোনা পরিস্থিতি, স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বচ্ছতার বিষয়েও কথা হবে

উবায়দুল্লাহ বাদল

দীর্ঘ চার বছর পর প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের নিয়ে ‘সচিব সভা’য় বসতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীকাল সকাল ১০টায় পরিকল্পনা বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠেয় এ সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে চার বছর আগের সচিব সভায় দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ২৬ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া টিকা প্রদানসহ বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতিকে সুসংহত রাখাসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতার বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া ভূমিকম্প, অগ্নিকান্ড, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের কী কী করণীয় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে। উল্লিখিত বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে তা বাস্তবায়নের কৌশল এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের একাধিক সচিবের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

জানা গেছে, চার বছর আগে ২০১৭ সালের ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় ২৬টি নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে একই বছর ২৩ জুলাই সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবকে চিঠি দেন তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এরপর রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো সচিবের সঙ্গে দেখা বা কথা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের মিলনমেলা ‘সচিব সভায়’ সরাসরি অংশ নেননি তিনি। সর্বশেষ ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সচিব সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত হয়। সেই সভাকে কেন্দ্র চার বছর আগের সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানতে চেয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠিও দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ইতিমধ্যে অধিকাংশ মন্ত্রণালয় তাদের অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে, যা কালকের সচিব সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর ২৬ দফা নির্দেশনাই হতে পারে সচিব সভার আলোচনার মূল বিষয়বস্তু- এমন মন্তব্য করেছেন সরকারের একাধিক সচিব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সিনিয়র সচিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেসব নির্দেশনা দিয়েছিলেন এর মূল বিষয়বস্তু ছিল একটি সক্রিয় ও জনবান্ধব প্রশাসন গড়ে তোলা এবং দেশের মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান জানিয়ে সচিবদের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধ করুন। সরকারি কর্মচারী হিসেবে নয়, দেশপ্রেমিক নাগরিক ও জনগণের সেবক হিসেবে জনকল্যাণে আত্মনিয়োগে সহকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করুন।’ এসব নির্দেশনার বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে তা জনগণই বিচার করবে। তবে বেশ কিছু নির্দেশনার বাস্তবায়ন হয়েছে, কিছু চলমান রয়েছে। যেমন সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের তালিকা তৈরি করে জনগণের সামনে তুলে ধরা। এটা রাস্তার চারপাশে নজর দিলেই দেখা যায়। সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর ও বিমানবন্দর পরিচালনার জন্য কাস্টমস ও ব্যাংকিং কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টা চালু আছে। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা করার নানা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পদ্মা সেতুসহ ফাস্টট্র্যাকভুক্ত বড় বড় প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। গত এপ্রিল পর্যন্ত এগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতির হার প্রায় ৬০ শতাংশ। অনেক নির্দেশনা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ফলে এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় জানতে চাইবেন।

কী ছিল ২৬ দফা নির্দেশনায় : রপ্তানি আয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর ও বিমানবন্দর পরিচালনার জন্য কাস্টমস ও ব্যাংকিং কার্যক্রম সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে হবে। পাহাড় ও টিলা-অধ্যুষিত এলাকার পরিবেশ রক্ষা, ভূমিধস প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। জরুরি দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। রাস্তাঘাট নির্মাণের সময় প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ ও রাস্তার দুই পাশে বৃক্ষরোপণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে ম্যানগ্রোভ বাগান সৃজন এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বনায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। অঞ্চলভিত্তিক চাহিদা অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প বা কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে, যাতে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ উপকৃত হয়। এ ছাড়া জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম তিন মাস প্রকল্পের পেপারওয়ার্ক সম্পন্ন করে শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই ভৌত অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু করতে হবে। একই সঙ্গে কাজের গুণগত মানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প বাছাই করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্প সমাপ্ত করতে হবে। প্রকল্প প্রণয়নে ব্যাংক সুদের হারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর’ নির্ধারণ করতে হবে। এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়াতে হবে। ফাস্টট্র্যাকভুক্ত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। অর্থবছরের শুরুতেই প্রকল্প বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।

সুশাসন প্রতিষ্ঠা, জনগণের সেবা ও শুদ্ধাচার ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। ভালো কাজের পুরস্কার আর মন্দ কাজের জন্য তিরস্কার ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। সেবাদাতা সংস্থাগুলো থেকে সেবা পেতে জনগণের ভোগান্তি কমাতে হবে। আন্তক্যাডার বৈষম্য দূর করে সবার ন্যায়সংগত পদোন্নতি ও পদায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তরুণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে অগ্রাধিকার দিতে হবে। জঙ্গিবাদ দমন ও মাদক নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে। কৃষিজমি নষ্ট না করে এলাকাভিত্তিক ঘোষিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে হবে।

সর্বশেষ খবর